মানুষের পারিবারিক জীবনে সুখ-শান্তি তখনই বিরাজ করে, যখন কোনো পুরুষ তাঁর স্ত্রীর কাজকে সম্মান ও মর্যাদা দেয়। স্ত্রীর কাজের স্বীকৃতি দেয় এবং প্রশংসা করে। পাশাপাশি নিজ হাতে স্ত্রীদের কাজের সহযোগিতা করে। তাছাড়া স্ত্রীর সাংসারিক যাবতীয় কাজের মূল্যায়ন করার পাশাপাশি তাদের সহযোগিতাই হলো একজন স্বামীর বড় গুণ।বছর জুড়েই স্ত্রীরা ঘরের যাবতীয় কাজ পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখে। রান্না-বান্না, খাবার পরিবেশন, স্বামীর সংসার ও সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ, সন্তানের পড়াশোনা থেকে শুরু করে তাদের খাবার-দাবার তৈরি, গোসল, ঘুম পাড়ানো, সুস্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নেয়া তাদের প্রতিদিনের নিয়মিত কাজ।স্ত্রীরা সকালে সবার আগে বিছানা ত্যাগ করে কর্ম ব্যস্ত স্বামীর কাজে সহযোগিতা ও সন্তান-সন্তুতির প্রস্তুতিতে লেগে যায়। আবার সারাদিনের কাজের ফলে ক্লান্ত-অবসন্ন শরীরে ঘুমাতেও যায় সবার পরে। সাংসারিক এসব কাজে আমাদের সমাজের পুরুষদের সামান্যতম অংশ নেই। যদিও তা কারো কারো ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।পক্ষান্তরে বিশ্বনবি মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে রয়েছে স্ত্রীকে সহযোগিতায় এক অনুকরণীয় উত্তম আদর্শ। হাদিসে এসেছে, হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হলো-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে কী কাজ করতেন? উত্তরে হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরের মানুষদের সেবায় নানা কাজে অংশ নিতেন। নামাজের সময় হলে বেরিয়ে যেতেন। (বুখারি)সংসারে স্ত্রীদের যাবতীয় কাজে কর্মব্যস্ত ক্লান্ত-শ্রান্ত স্বামীর সামান্য ১০-১৫ মিনিটের অংশগ্রহণেই সংসারে স্বর্গীয় সুখ বিরাজ করে। স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতাই হলো বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুমহান আদর্শের অনুসরণ ও অনুকরণ। স্বামীদের সহযোগিতায় স্ত্রীদের সাংসারিক কষ্টের কাজেও তাদের মনটা কৃতজ্ঞতাবোধে ভরে ওঠে। যার ফলে সংসারের রঙই বদলে যায়। অশান্তির পরিবর্তে প্রতিটি মানুষের সংসার সুখ-স্বর্গে পরিণত হয়।আল্লাহ তাআলা সুরা তাওবায় মুমিন নারী ও মুমিন পুরুষকে পরস্পর বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং প্রত্যেক স্বামী-স্ত্রী তখনই পরস্পর বন্ধু হিসেবে পরিপূর্ণতা লাভ করবে, যখন তাদের মধ্যে প্রতি কাজের ক্ষেত্রেই প্রেম-ভালোবাসা, মায়া-মমতার বন্ধন সুদৃঢ় হবে। পরস্পরের প্রতি আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্কের সেতু রচনা হবে। এ জন্য সকল স্বামীর উচিত, তাদের স্ত্রীদের কাজের মৌখিক স্বীকৃতি ও প্রশংসার পাশাপাশি সাংসারিক কাজে সামান্য সময়ের জন্য হলেও সহযোগিতা করা। তবেই সমাজের পারিবারিক জীবনে অনিন্দ্য সুন্দর শান্তিপূর্ণ সংসারের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠবে।আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি বলেন, উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে তাঁর কাপড় সেলাই করতেন; নিজের জুতা মেরামত করতেন এবং সাংসারিক যাবতীয় কাজে অংশ গ্রহণ করতেন। (ফতহুল বারি)পরিশেষে...সংসারের সুখ-শান্তির জন্য স্ত্রীদের কাজের মৌখিক প্রশংসা নয় সরাসরি হাতের কাজে সহযোগিতা করে বিশ্বনবির সুন্নাত পালনে এগিয়ে আসা আবশ্যক। খাবারের পর নিজের প্লেটটা নিজেই ধুয়ে রাখা। স্ত্রীদের কাজের সময় শিশু সন্তানকে সামলিয়ে রাখা। ঘুমানোর সময় স্ত্রীরা যখন খাবার গুছানোর কাজে ব্যস্ত থাকে তখন স্বামীরা বিছানাটা পরিষ্কার করে মশারি টাঙানোর কাজটা সেরে ফেলা। বিশ্বনবি সাংসারিক কাজে স্ত্রীকে সহযোগিতা করেছেন ভেবে কাজগুলো করলে সংসার জীবনে দুনিয়ার শান্তি আসবে তেমনি পরকালীন জীবনও হবে সাফল্যমণ্ডিত।আল্লাহ বলেন- ‘অতঃপর তাদের পালনকর্তা তাদের দোয়া (এই বলে) কবুল করে নিলেন যে, আমি তোমাদের কোনো পরিশ্রমকারীর পরিশ্রমই বিনষ্ট করি না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা স্ত্রীলোক। তোমরা পরস্পর এক। (সুরা ইমরান : আয়াত ১৯৫)আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সকল স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে সহযোগিতা করে কুরআন ও হাদিসের বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে আসার তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/আরআইপি
Advertisement