জাতীয়

হাসনাতকে বেআইনিভাবে আটকে রেখেছে পুলিশ : দাবি স্ত্রীর

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ১ জুলাই ভয়াবহ হামলা চালায় জঙ্গিরা। রাতভর জঙ্গিরা দেশি-বিদেশি বেশ কয়েকজনকে রেস্টুরেন্টের ভেতর জিম্মি করে রাখে। জিম্মিদশা থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজাউল করিমও ছিলেন। হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট ভবনের পাশের একটি ভবন থেকে ডি কে হোয়াং নামে দক্ষিণ কোরিয়ার এক নাগরিক জঙ্গিদের কর্মকাণ্ড ভিডিও করেন। পরে তিনি তার ফেসবুক পেজে ওই ভিডিও শেয়ার করেন। কোরীয় নাগরিকের ধারণ করা ওই ভিডিও ফুটেজে ন্যাড়া মাথার এক ব্যক্তিকে অস্ত্র হাতে জঙ্গিদের সঙ্গে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। ভিডিও ফুটেজ দেখে হাসনাত করিমকে নিয়ে সন্দেহ হয় পুলিশের। হাসনাত ও তার স্ত্রী সন্তানকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। তার স্ত্রী-সন্তানদের ছেড়ে দেওয়া হলেও তাকে আটকে রাখা হয়। তবে হাসনাত করিম কোথায় আছেন পরবর্তীতে সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানায়নি পুলিশ। তবে আটক হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জঙ্গিদের সহযোগিতার কথা স্বীকার করেছেন বলে পুলিশের একটি সূত্র জানায়। সূত্র জানায়, ঘটনার দিন থেকেই হাসনাত করিমকে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার বাড়ি থেকে একটি কম্পিউটার জব্দ করা হয়েছে, ১০ দিনের জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জঙ্গিদের মদদ দিতে বাধ্য হওয়ার কথা জানান। হাসনাতের স্বজনদের দাবি, মেয়ের ১৩তম জন্মদিন পালন করতে হলি আর্টিজানে গিয়েছিলেন হাসনাত করিম। কিন্তু সেখানে জঙ্গিদের হাতে পরিবারসহ জিম্মি হতে হয় তাকে। অথচ পুলিশ তাকে বেআইনিভাবে আটকে রেখেছে বলে দাবি করেছেন তার স্ত্রী। হাসনাত করিমের স্ত্রী শারমিনা পারভিন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে জানিয়েছেন, তাদের মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ নৈশভোজের জন্যই তারা হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলেন। রেস্টুরেন্টে বসার কিছুক্ষণ পরেই তারা রেস্টুরেন্টের বাইরে থেকে গোলাগুলি এবং চিৎকারের শব্দ শুনতে পান। এরপর হঠাৎ করেই অস্ত্রধারীরা রেস্টুরেন্টের ভেতরে প্রবেশ করে। সেসময় জঙ্গিরা তাদের কাছে জানতে চায় তারা মুসলিম কিনা। যখন তারা জানায় যে তারা মুসলিম তখন জঙ্গিরা বলে, আমরা মুসলিমদের ভালোবাসি। তোমরা আমাদের বিশ্বাস করতে পারো। আমরা তোমাদের কোনো ক্ষতি করব না। পারভিন বলেন, আমার সন্তানেরা এখনো রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে। তারা এখনো ঘুমের মধ্যে কান্নাকাটি করে আর জিজ্ঞেস করে মা ওরা কি আবার আমাদের গুলি করতে আসবে? তিনি আরো বলেন, জঙ্গিদের সঙ্গে আমার স্বামীর কোনো সম্পর্ক নেই। যদিও রাজনীতির প্রতি তার কিছুটা ঝোঁক রয়েছে। কিন্তু ওই ভয়াবহ হামলার সঙ্গে তার কোনো যোগসূত্র নেই। তিনিও আমাদের মতই জিম্মি হয়ে ছিলেন। কিন্তু সরকার তাকে কোনো বৈধ কারণ ছাড়াই আটকে রেখেছে। পারভিন সরকারের কাছে অনুরোধ করে বলেন, আমার স্বামী এ পর্যন্ত অনেক কিছু সহ্য করেছেন। আমার সন্তানদেরও কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। দয়া করে হাসনাতকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিন।টিটিএন/পিআর

Advertisement