ঈদকে সামনে রেখে চলছে অভিনব দাঁদাবাজি। ঈদের বকশিশ, ঈদি, কাসিদা পার্টির নামে বাসা বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চলছে এই চাঁদাবাজি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠনের নামে ঈদ কার্ড বিলি করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া হচ্ছে চাঁদা। ফুটপাত ও যানবাহন থেকে চাঁদা তুলছেন পুলিশের কিছু সদস্য। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ছাত্র সংগঠনের নামে ঈদ কার্ড বিলিয়ে চাঁদা তোলা হচ্ছে বেশি। ঈদ কার্ডের মাধ্যমে ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঈদের শুভেচ্ছা পৌঁছে দিচ্ছেন। একই সঙ্গে তারা ঈদ বকশিশ দাবি করছেন। প্রতিষ্ঠান ভেদে এই বকশিশের পরিমাণ নির্ধারণ করে দিচ্ছেন তারা। ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের নামে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ বেশি আসছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন থানা, জগন্নাথ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুরান ঢাকার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অংকের চাঁদা তুলছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ কাজে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি শরিফুল ইসলাম এর সম্পৃক্ততারও অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জবি ছাত্রলীগের একজন সহ-সভাপতি জানান, ছাত্রলীগ সভাপতি শরিফুল ইসলামের বাড়ি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতির বাড়ি একই জেলায় হওয়ায় কোন কিছুকে তোয়াক্কা করছেন না শরিফ। ফুটপাত থেকেও চাঁদা নেয়া হচ্ছে। এদিকে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের মারধরের শিকার হয়েছেন ছাত্রলীগের চার নেতা-কর্মী। এর মধ্যে চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় কয়েকজন ব্যবসায়ীকে মারধর করেছেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, ১৫ রমজানের পর থেকে বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ‘ঈদ শুভেচ্ছা’ কার্ড পাঠানো হয়েছে। পরে ঈদের সাত থেকে আট দিন আগে ঈদ ‘বকশিশ’ তুলতে মাঠে নামেন নেতা-কর্মীরা। ব্যবসায়ী ও ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, সদরঘাট, ইসলামপুর, পাটুয়াটুলী, বাংলাবাজার ও রায়সাহেব বাজার এলাকায় চাঁদা তুলে জবি শাখা ছাত্রলীগ। আর এর নেতৃত্ব দেন শাখা সভাপতি শরিফুল ইসলাম। শরিফুলের ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং বিশ্ববিদ্যালয় সেকশন অফিসার জাকির হোসেন। তার বিরুদ্ধে দারুল ইহসান থেকে সার্টিফিকেট কিনে চাকরি নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শরিফুলের সঙ্গে জাকির হোসেনকে দেখা যায় চাঁদা তুলতে বলে জানিয়েছেন ব্যাবসায়ীরা। পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কাপড় ব্যবসায়ী সমিতি, পাটুয়াটুলীর চশমার দোকান, ঘড়ির দোকান, বাংলাবাজারে বই ও প্রকাশনার দোকান থেকে কয়েক লাখ টাকা চাদা তুলছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে নেয়া হচ্ছে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া পরিবহন মালিক সমিতির কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে তোলা হচ্ছে। শুধু পরিবহন মালিকরাই প্রায় ৩ লাখ টাকা চাঁদা দিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। চাঁদাবাজির হাত থেকে রেহাই পায়নি পুরান ঢাকার ক্লিনিকগুলো। রায়সাহেব বাজার মোড়ের মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মেডিনোভা হাসপাতাল ও পাটুয়াটুলীর সুমনা ক্লিনিক থেকে তোলা হচ্ছে মোটা অংকের চাঁদা। নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক সুমনা ক্লিনিকের এক কর্মকর্তা বলেন, ঈদের বকশিশের নামে মালিকের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন ছাত্রলীগের এক নেতা। টাকা না দিলে হাসপাতাল ভাঙচুরের হুমকিও দেয়া হয়। পরে ২০ হাজার টাকা শরিফুলের ক্যাশিয়ার জাকিরের কাছে দেয়া হয়। সদরঘাটের ইস্ট বেঙ্গল মার্কেটে গত মঙ্গলবার চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের মারধরের শিকার হয়েছেন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. হানিফ ও তথ্য, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. মামুন। পরে তাদের পুলিশে দেয় ব্যবসায়ীরা। পরিচয় পেয়ে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। এদিকে গত বুধবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন নগর সিদ্দিক প্লাজার একটি দোকানে চাঁদাবাজি করতে গেলে ছাত্রলীগ সভাপতি শরিফুল ইসলাম গ্রুপের বহিষ্কৃত কর্মী কানন ও মো. ইব্রাহীমকে মারধর করেন ব্যবসায়ীরা। খবর পেয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা ওই দোকান ও মালিকের ওপর হামলা চালায়। তবে চাঁদাবাজির এ অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ সভাপতি শরিফুল ইসলাম বলেন, এর সঙ্গে তিনি অথবা তার কোন কর্মী জড়িত নয়। এদিকে পল্টন, বাড্ডা, রামপুরা এলাকায় ছাত্রলীগের নামে কার্ড বিলি করে চাঁদা তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সূত্র: মানবজমিন
Advertisement