দেশজুড়ে

হারিয়ে যেতে বসেছে মৃৎ শিল্প

শরীয়তপুরের ছয় উপজেলায় কম বেশি মৃৎশিল্প (কুমার শিল্প) তৈরির প্রচলন ছিল। কালের প্রবর্তনে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে সে মৃৎশিল্প। বর্তমানে ধাতব তৈজসপত্র বাজারে সহজলভ্য হওয়ায় মাটির তৈজসপত্রের চাহিদা কমে গেছে।জেলার সদর উপজেলার গ্রাম চিকন্দী, কোটাপাড়া, কালি খোলা, গঙানগর, ভেদরগঞ্জ উপজেলার কার্তিকপুর, ডামুড্যা উপজেলার কাইলারা এলাকাগুলো মৃৎশিল্পের (কুমার শিল্প)  প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি। জেলার মৃৎশিল্প (কুমার শিল্প) ব্যবসায়ীরা জানান, এক সময় নিজেদের জমি থেকে মাটি তুলে এ শিল্পে ব্যবহার করা হতো। আর এখন অন্য জায়গা থেকে মাটি কিনে এনে বানাতে হয়। তাছাড়া মাটির দামও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তারা আরো জানান, বাজারে প্লাস্টিক, সিরামিক, মেলামাইন, সিলভার, এমনকি লোহার তৈরি সামগ্রীর সহজলভ্যতা, কম দামের কারণে মানুষ মৃৎশিল্প (কুমার শিল্প) ব্যবহারে অনীহা দেখায়। ফলে শিল্পীরা তাদের উৎপাদনের উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। জেলার সদর উপজেলার কোটাপাড়ার মৃৎশিল্পের কারিগর রবিন্দ্র পাল বলেন, এ  পেশায় আয় কম। আমার ছোট ভাই লক্ষণ পাল আগে কুমারের কাজ করতো। কুমারের কাজে আয় কম, সংসার চলে না তাই এখন অন্য পেশা বেছে নিয়েছে। সরকার সহযোগিতা করলে একটু ভালো থাকতে পারতাম।ডামুড্যা উপজেলার কাইলারা মৃৎশিল্পী (কুমার শিল্প)  হরিদাস পাল বলেন, এ ব্যবসায় এখন আর সংসার চলে না। যা আয় হয় তা দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে সংসার চালাতে হয়। বাপ-ঠাকুরদার পেশা ছাড়তে পারছি না। তাই এ শিল্প নিয়েই পড়ে আছি। তিনি আরো বলেন, অনেকে পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজ করতে শুরু করেছে। আগে মানুষ মাটির হাঁড়ি-পাতিল কলসী, টালী ইত্যাদি ব্যবহার করতো। বাজারে প্লাস্টিক সহজলভ্য হওয়ায় মাটির তৈজসপত্রের চাহিদা কমে গেছে।আদি মৃৎশিল্প (কুমার শিল্প) গবেষকরা বলেছেন, মৃৎশিল্প একটি আদি পেশা। এ পেশার মানুষরা আমাদের প্রথম সভ্যতার তৈজসপত্রের চাহিদা পূরণ করা ছাড়াও বাড়ির দেয়ালে টেরাকোঠার নান্দনিক টাইলস তৈরি করে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করতো। বর্তমানে ধাতব তৈজসপত্র বাজার দখল করায় এবং এর স্থায়িত্ব বেশি হওয়ায় মানুষ মাটির তৈজসপত্রের ব্যবহার ছেড়ে দিয়েছে। তবে এই মৃৎশিল্পীদের তৈরি বিভিন্ন শো-পিস, পাতিল, কলসী, টাইলস, মাইট, রসের হাড়ি ইত্যাদি দৃষ্টিনন্দন দ্রব্য তৈরি করে রফতানি করা গেলে এই পেশায় জড়িত শিল্পীরা মানবেতর জীবন থেকে সচ্ছলতায় ফিরে আসতে পারবে। সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে এই পেশাকে বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।ছগির হোসেন/এসএস/পিআর

Advertisement