রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। তখন প্রথম ১৬-১৭ মাস তিনি বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামাজ আদায় করেন। যা ইয়াহুদি ও নাসারার খুবই পছন্দ করতেন। কিন্তু বিশ্বনবি চাইতেন, বাইতুল্লাহ (কা’বা-ই) হোক মুসলমানদের ক্বিবলা। যাকে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ক্বিবলা করে নামাজ পড়েছেন।আল্লাহ তাআলা বিশ্বনবি মনের অবস্থা অনুযায়ী বাইতুল্লাহকে বিশ্বনবির জন্য ক্বিবলা নির্ধারণ করেছেন। এ কথার ঘোষণাও দিয়েছেন যে, পূর্ব-পশ্চিম বা কোন দিক ক্বিবলা হবে? এটিই সঠিক পথ প্রাপ্তির উপায় নয়; বরং সঠিক প্রাপ্তির অন্যতম উপায় হলো তার ইচ্ছার (রহমতের) ওপর নির্ভরশীল। যার ফলে ইসলাম বিদ্বেষী নির্বোধরা এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছিল। নির্বোধদের বিরূপ মনোভাবের জবাবে আল্লাহ তাআলা বলেন-‘অবশ্য নির্বোধ লোকেরা এখন বলবে, এদের কি হয়েছে, প্রথমে তাঁরা যে কিবলার দিকে মুখ করে নামাজ পড়তো, তা থেকে হঠাৎ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে? (হে রাসুল) আপনি তাদেরকে বলে দিন, পূর্ব ও পশ্চিম সব আল্লাহরই। তিনি (আল্লাহ) যাকে ইচ্ছা তাঁকে সরল পথ দেখান।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৪২)বনি ইসরাইলের নবিদের ক্বিবলা ছিল বাইতুল মুকাদ্দাস। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় আগমনের পূর্বে মক্কায় অবস্থানকালে সেদিকে ফিরেই নামাজ আদায়ের নিয়ম পালন করেন। অর্থাৎ বিশ্বনবি এমনভাবে নামাজে দাঁড়াতেন, যাতে বাইতুল্লাহ (কা’বা) ও বাইতুল মুকাদ্দাস তাঁর সামনের দিকে থাকে।মদিনায় হিজরত করার পরেও ক্বিবলা অপরিবর্তিত রাখলেন। সেখানে গিয়ে বাইতুল্লাহকে (কা’বা) সামনে রাখা সম্ভব হয়নি। কেননা বাইতুল মুকাদ্দাস মক্কা ও মদিনার উত্তর দিকে অবস্থিত। আর মদিনাও বাইতুল্লাহর (কা’বা) উত্তর দিকে। হিজরতের পরও ইয়াহুদিগণের হৃদয় জয় করণার্থে বিশ্বনবিকে বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামাজ আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়। সে অনুযায়ী বিশ্বনবি ১৬ মতান্তরে ১৭ মাস বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামাজ আদায় করেন।কিন্তু বিশ্বনবির মনে এ বাসনা জাগ্রত হতো যে, তাঁর মহান পিতৃপুরুষ হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের নির্মিত কা’বাকে ক্বিবলা বানানো আসমানি হুকুম যেন তিনি পেয়ে যান। এ কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বারবার আকাশ পানে দৃষ্টি মেলে তাকাতেন।অবশেষে হিজরতের ১৬ মতান্তরে ১৭ মাস পরে এ মর্মে হুকুম হলো যে, এখন থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে বাইতুল্লাহর দিকে ফিরে নামাজ আদায় করতে হবে। আর এতেই ইয়াহুদি ও অবিশ্বাসীরা বলতে লাগলো যে, এদের কি হয়েছে? হঠাৎ তাঁরা বাইতুল মুকাদ্দাসের পরিবর্তে বাইতুল্লাহর দিকে ফিরে নামাজ আদায় করছে?তাদের কথার জবাবে আল্লাহ তাআলা ইয়াহুদিদেরকে নির্বোধ সম্বোধন করে এ আয়াত নাজিল করে বলেন, পূর্ব ও পশ্চিমসহ সব দিকই আল্লাহ তাআলার। যাতে ইয়াহুদিদের প্ররোচনায় নওমুসলিমগণ দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, সন্দেহ ও সংশয়ে না পড়েন। কারণ, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ প্রদর্শন করা। যারা সঠিক পথ প্রাপ্ত তারাই সফলকাম।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক জীবন যাপন করে ইসলাম বিদ্বেষীদের সকল ষড়যন্ত্র থেকে হিফাজত থাকার তাওফিক দান করুন। ইসলামের সঠিক মতাদর্শ ও সৌন্দর্য মানুষের কাছে তুলে ধরার তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/এবিএস
Advertisement