মতামত

জঙ্গি দমনে অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর

গুলশানের হলি আর্টিসানে ১ জুলাই পুলিশ অভিযানে ব্যর্থ হলো বলে নানাজন নানাকথা বলেছেন। রীতিমত পুলিশকে তুলোধুনোও করেছেন কেউ কেউ। অনেক দায়িত্বশীল মানুষকেই দেখেছি দায়িত্বজ্ঞানহীনের মত কথা বলেছেন। যখন সেনাবাহিনী কমান্ডো অভিযান করে ৫ জঙ্গিকে হত্যা করে অভিযানের ইতি ঘটালো তখন সবাই বাহবা দিল। এখন পুলিশ যখন আরেকটি অভিযান চালিয়ে সফল হলো তখন আবার ঐ শ্রেণির লোকজন নানা প্রশ্ন তোলা শুরু করলো। আসলে আমরা মন্দ কাজের নিন্দা করার পাশাপাশি ভালো কাজের প্রশংসা করতে শিখিনি। কল্যাণপুর অভিযান নিয়ে এ পর্যন্ত যেসব প্রশ্ন আমাকে শুনতে হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ১১ জন জঙ্গি ৪ টি পিস্তল দিয়ে সারারাত ধরে মুহুর্মুহু গুলি করলো করল কি করে? দ্বিতীয়ত: নিহতরা কী আসলেই জঙ্গি? আসলেই কী ওদের ওখানে মারা হয়েছে নাকি আগে থেকেই মেরে ওখানে ফেলে রাখা হয়েছিল? তৃতীয়ত: কালো পাঞ্জাবি আর জিন্স পড়ে কি জঙ্গিরা হামলায় অংশ নেয়? চতুর্থত: পুলিশ গুলশানে ব্যর্থ হয়েছিল বলে কি এখন সাজানো নাটকে নিজের সাফল্য দেখাচ্ছে? পঞ্চমত: পুলিশ কী আগে থেকেই জানতো ওই বাসায় জঙ্গিরা অবস্থান করছে? ষষ্ঠত: জঙ্গিদের জীবিত কেন ধরা হলো না?আমরা যতদূর জেনেছি সাধারণ পুলিশ অপারেশন স্টর্ম ২৬ এ অংশই নেয়নি। গত সপ্তাহে তারা ওই এলাকায় ব্লক রেইড দিয়েছিল। তখন তারা খবর পেয়েছিল আশে পাশে কোনো বাসায় জঙ্গিরা থাকতে পারে। মঙ্গলবারের অভিযানে তারা আগে থেকে জেনে ওই বাসায় যায়নি। রুটিন ব্লক রেইডে যখন তারা ওই বাসায় যায় তখনই আক্রমণের মুখে পড়ে। তখন তারা গুলশানের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে পিছু হটে। নিরাপদ আশ্রয় নেয়। জঙ্গিরা যখন তাদের দিকে লক্ষ্য করে একটি গুলি ছুঁড়ে পুলিশ তখন তাদের মনোবল ভাঙতে ১০টি গুলি ছুঁড়ে। এরমধ্যে তারা উর্ধ্বতন কর্মকতাদের খবর দিলে সেখানে পুলিশে সোয়াট ফোর্স তৈরি হয়ে সেখানে হাজির হয়। ততক্ষণে জঙ্গিরা গ্রেনেড ছুঁড়ে গুলি করে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা গুলি করে তাদের বাসার ভেতরেই আটকে রাখতে বাধ্য করে। এরমধ্যে দুজন জঙ্গি পিছন দিক থেকে লাফ দিয়ে পালাতে চাইলে পুলিশ গুলি করে একজনকে আহত করে। আরেকজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আহত জঙ্গির কাছ থেকেই পুলিশ জানতে পারে ভেতরে কতোজন আছে, তাদের কাছে কী কী ধরনের অস্ত্র আছে। অর্থাৎ তাদের সক্ষমতার চিত্রটি পুলিশ জেনে যায়। সোয়াট বাহিনী আসার আগ পর্যন্ত তাই পুলিশের সদস্যরা প্রচুর গুলি করে জঙ্গিদের ভিত করার চেষ্টা করে। এসময়ের মধ্যে জঙ্গিরা তাদের কাগজপত্র ও টাকা পুড়িয়ে ফেলে। ল্যাপটপ মোবাইল ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে ফেলে। তারা পোশাক পরিবর্তন করে। তারা বুঝতে পেরেছিল পালাবার কোনো পথ নেই। ভোরে সোয়াট বাহিনী উপস্থিত হলে বিশাল আকৃতির লোহার ঢাল নিয়ে অপারেশন শুরু করে। অবিরাম গুলি ছুঁড়ে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে। অপারেশনের সমাপ্তি টানে।এখন কথা হলো পুলিশ তাদের কাউকে জীবিত উদ্ধার করতে পারতো কিনা। হয়তো দুএকজনকে উদ্ধার করা যেতো কিন্তু ওই মূহূর্তে তাদের কাউকে জীবিত উদ্ধার করার কথা ভাবার সময় কার? উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাউকে জীবিত ধরার নির্দেশ দিতেই পারতেন, কিন্তু তাদের মনে যে এখনো গুলশানে নিহত দুজন কর্মকর্তার মুখের প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে। তবে এটা ঠিক যে জঙ্গিদের জীবিত ধরা গেলে জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়ার সুযোগ হয়।দ্বিতীয়ত যারা বলছেন আগে থেকে সাজানো নাটক, তারা যদি আশে পাশের বাসাবাড়ির লোকজনের সাথে কথা বলেন তাহলেই জানতে পারবেন আসলে কী ঘটেছিল। ওই বাসা থেকে জঙ্গিরা চিৎকার করে পুলিশের উদ্দেশ্যে বলছিল “হাসিনার কুত্তারা সাহস থাকলে হেলমেট খুলে আয়”। সাজানো নাটকের পাত্ররা নিশ্চয়ই এমন কথা বলবে না। আর নিহতরা আগে থেকেই আটক কিনা বা তারা আদৌ জঙ্গি কিনা এ প্রশ্ন যারা তুলেছেন তারা নিশ্চয়ই যিনি ধরা পড়েছেন তার পরিচয় এতক্ষণে জেনে গেছেন, যে কীনা এক বছর ধরে নিখোঁজ। আর নিহতদের পরিচয় নিশ্চয় দুএকদিনের মধ্যে জানা যাবে। কারণ পুলিশ সবার ছবি প্রকাশ করে জনগণের সহায়তা চেয়েছে। সংবাদপত্রগুলোকে প্রতিবেশিরা বলেছেন, জঙ্গিরা কিছুক্ষণ পরপরই জিহাদের পক্ষে শ্লোগান দিয়েছেন, পাশের রুম থেকে একজন সাংবাদিক রাতেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন তিনি শুধু গুলির শব্দই শুনেননি, আল্লাহু আকবর শ্লোগান শুনেছেন। পুলিশের উদ্ধার করা সবই নাটকের অংশ হতে পারে তবে এই শ্লোগানও নাটকের অংশ বলে মেনে নেওয়া কঠিন।এছাড়া যেহেতু কল্যাণপুরে কোনো জিম্মি ছিল না আর সাধারণ মানুষের প্রাণহানির আশংকা ছিল না আর যাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে তাদের সক্ষমতাটা জানা হয়ে যায় তখন অভিযানের পরিকল্পনা করতে সুবিধা হয়, যে সুবিধা গুলশানের হলি আর্টিসানের ক্ষেত্রে ছিল না।   আমরা পুলিশের বিরুদ্ধে হাজারটা অভিযোগ আনতে পারি, তার মধ্যে কয়েকশ অভিযোগ হয়তো সত্যি কিন্তু জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কল্যাণপুরের অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলে আমরা কী বোঝাতে চাইছি? অভিযানে সাধারণ মানুষ বা পুলিশের প্রাণহানি ঘটলেই কী তা বিশ্বাসযোগ্য হবে? সাধারণ মানুষ নানা প্রশ্ন তুলতেই পারে। যখন গণমাধ্যমেও এসব প্রশ্ন তুলে বা গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা এসব প্রশ্ন তুলেন তখন আসল সত্যটি হারিয়ে যেতে পারে। আর তারা এসব প্রশ্নই উঠাতই না যদি অভিযানটি সেনাবাহিনী করতো। লেখক : সম্পাদক, ডিবিসি নিউজএইচআর/পিআর

Advertisement