বিশেষ প্রতিবেদন

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বেও ইডিসিএলের ওষুধ

রাজধানীসহ দেশের সকল সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় ওষুধের সিংহভাগ চাহিদা মেটাচ্ছে দেশের একমাত্র সরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)। প্রতি বছর এ প্রতিষ্ঠান থেকে ৩০ প্রকারের এন্টিবায়োটিকসহ মোট ১শ’২৩ প্রকারের ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সিরাপ ও ইনজেকশন সারাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে, যার মূল্য প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকা।   প্রচলিত নীতিমালা অনুসারে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানসমূহকে বাধ্যতামূলকভাবে ইডিসিএল থেকে মোট চাহিদার শতকরা ৭২ ভাগ ওষুধ কিনতে হয়। ইডিসিএলের উৎপাদিত ওষুধসমূহ সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও তৃণকমিউনিটি ক্লিনিক ছাড়াও বিজিবি ও সেনাবাহিনীতে সরবরাহ করা হয়।  অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইডিসিএলের উৎপাদিত ওষুধের সুনাম এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়ছে। চলতি বছর প্রথমবারের মতো জি টু জি (গর্ভমেন্ট টু গর্ভমেন্ট)-এর আওতায় ইডিসিএল শ্রীলঙ্কার মতো উন্নত দেশে এন্টিবায়োটিকসহ ১১ প্রকারের এক মিলিয়ন ডলার মূল্যের ওষুধ রফতানি করেছে। ভুটানসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশে অচিরেই ইডিসিএলের ওষুধ রফতানি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ইডিসিএলের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

Advertisement

ইডিসিএল (১ম পর্ব)

তাদের দাবি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্রাকটিস (জিএমপি) অনুসরণ করে ওষুধ উৎপাদন করছে ইডিসিএল। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকাসহ বগুড়া, খুলনা ও টাঙ্গাইলের মধুপুরে ইডিসিএলের বিভিন্ন শাখাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ২৮শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি ক্রমেই লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মর্যাদা লাভ করছে বলে তারা জানান।ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে জানান, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস, গুণগত মান বজায় রেখে ওষুধের উৎপাদন ও বিক্রয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইডিসিএলের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।তিনি জানান, সার্বিকভাবে ইডিসিএল বর্তমানে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। স্বায়ত্তশাসিত এ প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছর ২২ কোটি ও তার আগের বছর ৪৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। বিগত বছরের তুলনায় লাভ কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ডা. এহসানুল কবির জানান, স্বায়ত্তশাসিত হলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে অধিকতর অনুপ্রাণিত করে তুলতে তিনি প্রতিষ্ঠানে সরকারি পে-স্কেল অনুসারে বেতনভাতা কার্যকর করেছেন। ফলে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় মুনাফা কমেছে। তবে চলতি বছর আবার মুনাফা বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জানা গেছে, স্বায়ত্তশাসিত এ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এছাড়া স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষসহ স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা পর্ষদের পরিচালক ইডিসিএলকে আরও অধিকতর গতিশীল করার লক্ষ্যে দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। কর্মকর্তা ও শ্রমিকরা তার প্রতিষ্ঠানের প্রাণ উল্লেখ করে ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এহসানুল কবির জানান, প্রতিষ্ঠানটির শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারী মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কোটি কোটি টাকার ওষুধ উৎপাদন করছেন। তাদের কষ্টের মূল্য দিতে এ প্রতিষ্ঠানটি স্বায়ত্তশাসিত হলেও তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য সরকারিভাবে প্রদেয় পে-স্কেলে বেতনভাতা পাওয়ার সুব্যবস্থা করে দিয়েছেন।এছাড়া কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি দাওয়া পূরণে কথাবার্তা বলার জন্য ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ক্যান্টিনে কম খরচে উন্নতমানের খাবারের সু-ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। ডা. কবির জানান, টাঙ্গাইল মধুপুরের রাবার বাগানে প্রায় আড়াইশ কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছে। আগে তাদের থাকার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। কর্মরত শ্রমিকদের থাকার জন্য ডরমেটরি তৈরি করে দেয়া হয়েছে। চৌহদ্দীতে নিরাপত্তা প্রাচীর তৈরি করা হয়েছে।  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জিএমপি নির্দেশনা অনুসারে গুণগত মানের ওষুধ উৎপাদনের জন্য কারখানাগুলো পর্যায়ক্রমে সংস্কার করা হচ্ছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠানটি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও ওষুধ রফতানি শুরু করতে সমর্থ হচ্ছে বলে তিনি জানান। এমইউ/একে/পিআর