টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর পার হয়ে গেছে ১৬টি বছর। ১৬ বছরের এই কিশোর এখন প্রতিপক্ষের কাছ থেকে কীভাবে সমীহও আদায় করে নিতে হয় সেটাও শিখে গেছে। অথচ কিশোর ভেবেই হয়তো টেস্ট নামক ক্রিকেটের কুলীন শ্রেণির বাকি দেশগুলো বাংলাদেশকে তেমনটা গুরুত্ব দিতে রাজি নয়। এ কারণে আইসিসিসহ বিভিন্ন ফোরামে কণ্ঠ জোরালো করলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে টেস্ট ম্যাচের সংখ্যাটা বাড়িয়ে নিতে পারেনি।আজব হলেও আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামই (এফটিপি) টেস্ট খেলার জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভরসার স্থল; সেই এফটিপিও যখন বিভিন্ন অজুহাতে মানা হয় না, বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে তথাকথিত বড় দেশগুলো টেস্ট খেলতে রাজি না হয়, তাহলে তো সংখ্যা না বেড়ে শঙ্কাটা আরও বেড়ে যায়। সেই কোন কালে সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বাংলাদেশ টেস্ট খেলেছিল! সময়টার কথা ভুলেই গেছেন দলের নির্ভরযোগ্য অলরাউন্ডার নাসির হোসেন। আজই মিরপুর শের-ই বাংলায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে, সর্বশেষ কবে টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ সে সময়টার কথা উল্লেখ করতে পারলেন না। প্রসঙ্গ ছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজ উপলক্ষে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন সম্পর্কে।সেখানেই নাসির বললেন, ‘টেস্ট অবশ্যই কঠিন। দেশের মাটিতে খেলা হলে ঠিক আছে, তবে বাইরে হলে আমাদের জন্য একটু হলেও কঠিন। আর আমি সর্বশেষ কবে টেস্ট খেলেছি, মনে নেই!’ আক্ষরিক অর্থে হয়তো নাসিরের কথাটা সত্য বলে ধরে নেওয়া যাবে না। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বছর খানেক আগের টেস্ট খেলার কথা তো তিনি ভুলে যাওয়ার কথা নয়।কিন্তু রূপক অর্থে ধরে নিলে মনে হবে- সত্যিই তো বাংলাদেশ কবে টেস্ট খেলেছে? এক এক করে, ৩৬০ থেকে ৩৬৫ দিন- অথ্যাৎ একটি বছর কেটে গেলো! ১৬ বছর বয়সী টেস্ট বয়সের মধ্যে একটি বছর না খেলেই কাটিয়ে দিলো বাংলাদেশ! মাঝে অস্ট্রেলিয়া আসার কথা ছিল একটা ঠুনকো অজুহাত ছুড়ে দিলো, ‘নিরাপত্তা’। অথচ, কত নিশ্চয়তা তাদের দেয়া হয়েছিল। ভিভিআইপি নিরাপত্তা দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। একজন রাষ্ট্রপ্রধানকে যে নিরাপত্তা দেয়া হয়, সেটাও দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। তবু অস্ট্রেলিয়া আসলো না।ভারতের সঙ্গে টেস্ট সিরিজটা হওয়ার কথা ছিল এরই মাঝে। অন্তত এই আগস্টে বাংলাদেশকে ‘স্বাগত’ জানানোর সৌজন্যতাটুকু দেখানোর চিন্তা করেছিল জগমোহন ডালমিয়া নেতৃত্বাধীন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড; কিন্তু দুর্ভাগ্য সম্ভবত বাংলাদেশেরই। না হয়, বাংলাদেশের ক্রিকেটের অকৃত্রিম বন্ধু ডালমিয়া কেন অন্তত এই সিরিজ হওয়ার আগে চলে গেলেন! ডালমিয়ার মৃত্যুর পর ভারতের মাটিতে গিয়ে প্রথমবারেরমত টেস্ট খেলার স্বপ্নটাও ঝুলে গেলো মুশফিকদের।টি-টোয়েন্টির ডামাডোলে কিছুদিন টেস্ট আর ওয়ানডের কথাটাই বেমালুম ভুলে গেছে এ দেশের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ। অথচ, ক্রিকেটের আসল লড়াই ৫ দিনের লড়াইয়ে সেই তিমিরেই থেকে যাচ্ছে বাংলাদেশ। খেলার সুযোগ কম, বড় দলগুলোর খেলতে না চাওয়া, নানা অজুহাতে তাদের না আসা- সব মিলিয়ে বাংলাদেশ সত্যি কবে টেস্ট খেলেছে সেটা পরিসংখ্যান খুঁজে বের করতে হচ্ছে। এর চেয়ে সম্ভবত দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না।গতবছর ৩০ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট ঢাকা টেস্টে প্রোটিয়াদের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ওই ম্যাচের প্রথমদিন ৮৮.১ ওভার খেলার পর সেই যে বৃষ্টি নামলো বাকি চারদিন আর খেলাই মাঠে গড়াতে পারলো না। ওই ইনিংসে ১৩ রান করা নাসির হোসেন এখনও অপরাজিত। টেস্টে আর ব্যাট হাতে নামতে পারেননি। বল হাতেও হাত ঘোরাতে পারেননি। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের আফসোস তো বাড়ারই কথা। আসছে অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর করার কথা। ২ টেস্ট, ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। অথচ, বাংলাদেশে এখন যে পরিস্থিতি তাতে ইংল্যান্ড বাংলাদেশে আসবে কি না তা দাঁড়িয়েছে গভীর এক অনিশ্চয়তার মধ্যে। ইংল্যান্ড যদি কোন কারণে না আসে বাংলাদেশে, তাহলে তখন নাসিরদেরকে আক্ষরিক অর্থেই বলতে হবে, সর্বশেষ করে টেস্ট খেলেছি, মনে নেই।ওয়ানডেও বাংলাদেশ খেলেছে প্রায় নয় মাস আগে। সর্বশেষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গত বছর ১১ নভেম্বর ওয়ানডে খেলেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচের পর আর কোন ওয়ানডে নেই। বিপিএল, টি-টোয়েন্টি সিরিজ, এশিয়া কাপ কিংবা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই বুঁদ হয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। সে ফাঁদে পড়ে দীর্ঘ সময় কোন ওয়ানডে খেলা নেই বাংলাদেশের। ক্রিকেটাররা কী তবে ভুলে যাবেন, কবে ওয়ানডে খেলেছেন সে কথাও!আইএইচএস/এবিএস
Advertisement