এ সময়ের একজন সম্ভাবনাময় তরুণের নাম রিয়াদ আরিফ। গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশোনা শেষে সার্ক স্কলারশিপের আওতায় পড়তে গিয়েছেন নয়াদিল্লির সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে। সেই সাথে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন সাহিত্য চর্চা আর গবেষণা নিয়ে। ক্যারিয়ারের বিভিন্ন দিক নিয়ে জাগো জবসের সঙ্গে কথা বলেছেন রিয়াদ আরিফ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন রাহুল বিশ্বাস মুন্না। জাগো জবস : দিল্লিতে পড়তে যাবার ব্যাপারে শুনতে চাই-রিয়াদ আরিফ : সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি মূলত সার্কের একটি উদ্যোগ । দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসে। ভর্তি পরীক্ষার নম্বরের উপর ভিত্তি করে বৃত্তি পাবারও সুযোগ আছে। এ সুযোগ নিশ্চয়ই আমার জন্য খুব ভালো লাগার একটি বিষয়। এখানে আমি আমার দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবো। এদেশের শিল্প, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য সম্পর্কে বন্ধুরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের জানাতে পারবো । তাদের সমাজব্যবস্থা, কালচারও জানার সুযোগ হবে। সত্যি দারুণ এক ব্যাপার।জাগো জবস : আপনার পড়াশোনা নিয়ে যদি বলতেন?-রিয়াদ আরিফ : আমার শৈশব-কৈশোর দু’টোই কেটেছে গ্রামে । পড়াশোনার শুরুটাও ছিল সেখানে। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় পেরিয়ে সেখানেই মাধ্যমিক। তারপর এক দৌড়ে রাজধানী। নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি। সেখানকার পাঠ চুকিয়ে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগ থেকে স্নাতক। জাগো জবস : আপনার শৈশবের দিনগুলো কেমন ছিল? রিয়াদ আরিফ : চমৎকার এক শৈশব পেয়েছিলাম আমি। ঘুড়ি ওড়ানো, ভেলা ভাসানো, বৃষ্টিতে আম কুড়ানো। ছোটবেলা থেকেই অনবদ্য এক সাংস্কৃতিক আবহের মধ্যদিয়ে বেড়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের ওখানে নজরুলজয়ন্তী হতো, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে উৎসব হতো। আর লোকজ গানের উৎসব তো ছিলোই। খুব আগ্রহ নিয়ে সেসব অনুষ্ঠানে যাওয়া হতো। অংশ নেয়া হতো। ছোটবেলায় বিতর্ক চর্চা করতাম, মাঝখানে আবৃত্তি আর অনুষ্ঠান উপস্থাপনা।জাগো জবস : লেখালেখি তো করেন। সে বিষয়ে কি বলবেন? রিয়াদ আরিফ : টুকটাক ছড়া, কবিতা লেখা চলতো বেশ অল্পবয়স থেকেই। একটা সময় লিটল ম্যাগ আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলাম। জেলা শহর গাইবান্ধা থেকে ছোটকাগজ ‘শব্দ’ বের হতো। সরোজ দেবের সম্পাদনায়। শব্দই ছিল আমার প্রথম প্ল্যাটফর্ম। সাংবাদিকতার ছাত্র হবার পর থেকে এখন সংবাদই বেশি লেখা হয়। জাগো জবস : গ্রাম ও শহরের মধ্যে পার্থক্য কীভাবে দেখেন? রিয়াদ আরিফ : একেবারে গ্রাম থেকে উঠে আসা একটা ছেলের জন্য ঢাকা শহরের প্রথম দিকের দিনগুলো অতোটা শুভকর ছিল না। মানিয়ে নিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। মনে হচ্ছিল একটা খোলা জায়গা থেকে একটা আবদ্ধ বৃত্তে আটকে গেছি। আমাদের মানবিকতা দিন দিন লোপ পাচ্ছে। আমরা যেন অমানবিক এক সমাজের মধ্যে বাস করছি। এ জন্য আমাদের অন্তত কিছুদিনের জন্য হলেও গ্রামে যাওয়া দরকার। ঘাস, ফুল, নদীর সাথে কিছুটা সময় পার করা দরকার।জাগো জবস : পড়াশোনা ছাড়া আর কিসের সাথে যুক্ত আছেন?রিয়াদ আরিফ : সংস্কৃতিচর্চার সাথে যুক্ত ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ছিলাম বছর দুয়েক। সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ‘দ্য ইউল্যাবিয়ান’ নামের ২৪ পৃষ্ঠার একটা পত্রিকা সম্পাদনা করতাম। এ সবই আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। আসলে একজন শিক্ষার্থীর পড়াশোনার পাশাপাশি কো-কারিকুলারের সাথে যুক্ত থাকাটা বেশ দরকার। এখানেই তার বিকাশ হয়। জাগো জবস : আপনার কর্মজীবন ও অভিজ্ঞতা যদি শেয়ার করতেন-রিয়াদ আরিফ : বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে একটি দৈনিকের ফিচার বিভাগে যোগ দেই ‘ইন্টার্ন’ হিসেবে। খুব বেশি সময়ের জন্য না হলেও সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। মানুষের জীবনকে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে।জাগো জবস : সাংবাদিকতা পেশা হিসেবে কেমন?রিয়াদ আরিফ : সাংবাদিকতা আমার কাছে সবসময়ই রোমাঞ্চকর এক অনুভূতি। সাংবাদিকতার মধ্যদিয়ে কিন্তু দেশ এবং দেশের মানুষের সাথে সংযুক্ত হবার সুযোগ থাকছে। এই ব্যাপারটি দারুন। পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা নিঃসন্দেহে বেশ উঁচু মানের। এই আধুনিক টেকনোলজির যুগে সাংবাদিকতা যথেষ্ঠ স্মার্ট একটি প্রফেশন। সাংবাদিকটাকে পেশা হিসেবে নেয়া কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নয়। জাগো জবস : সফলতা বলতে আপনি কী বোঝেন?রিয়াদ আরিফ : সফলতা বলতে আসলে আমার কাছে নিজের সাথে নিজের যে কমিটমেন্ট সেটা পূরণ করতে পারাটাই বুঝি। আমরা প্রত্যেকে নিজেকে একটা অবস্থানে দেখতে চাই নিশ্চয়। সেখানে যেতে পারাটাই বা যাবার চেষ্টা করাটাই সফলতা। সবকিছু পারি দিয়ে নিজের গন্তব্যে পৌঁছতে পারাটাই সফলতা।জাগো জবস : মিডিয়া নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?রিয়াদ আরিফ : পড়াশোনা শেষে কোনো ভিন্ন ধরনের বিষয় নিয়ে মিডিয়ায় কাজ করার ইচ্ছে আছে। যেমন পরিবেশ সাংবাদিকতা কিংবা সোশ্যাল ইস্যুগুলো নিয়ে সাংবাদিকতা করার বেশ সুযোগ আছে এবং এটা বেশ দরকারও। তবে এর জন্য নিজেকে আর একটু যোগ্য করে তোলার প্রয়োজন আছে।জাগো জবস : একজন মানুষের বিকাশের জন্য কী কী করা যেতে পারে?রিয়াদ আরিফ : বোধের বিকাশটা খুব জরুরি। আমি যে সময় ও সমাজে আছি সেটিকে ভালো ভাবে বোঝা ও জানা। মননশীলতা ও সৃজনশীলতার চর্চা থাকাটাও খুব জরুরি। নিজের দায়বদ্ধতার জায়গাটি কোথায় সেটি ভাবতে হবে। এ জন্য শুদ্ধতার চর্চা, সেরা সব সাহিত্য পড়া, সেরা সেরা মুভিগুলো দেখা উচিত। এসইউ/আরআইপি
Advertisement