বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘ড্রামা কুইন’ আখ্যা দিয়ে শনিবার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক পত্রিকা ‘দি ইকোনমিস্ট’। প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ঘটমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার জন্য জন্য দুই নেত্রীকে দায়ী করে তাদের ‘লড়াইরত বেগম’(ব্যাটলিং বেগমস) বলা হয়েছে। সবশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরপূর্তির দিন ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে বালুবোঝাই ট্রাকের আবির্ভাব ও তার অবরুদ্ধ হওয়া, নাটোরে দুই বিএনপি কর্মীর নিহত হওয়া, বিএনপি’র অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক এবং মহাসচিব মীর্জা ফখরুলের গ্রেফতারের ঘটনাকে এই নাটকের পটভূমি হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইকোনমিস্ট। প্রতিবেদনে গত নির্বাচন-পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষন করে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপিকে একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে সব উপায়ে ধ্বংস করার ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডেইলি স্টার’-এর সম্পাদক মাহফুজ আনামকে উদ্ধৃত করে বিরোধী দলের ওপর এই নিপীড়নকে ‘বিচারবোধহীন’ উল্লেখ করে বলা হয়েছে এটি গণতন্ত্রের নামে তামাশা। আর এসবকিছুর জন্য যে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকেই-তাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে দেশের একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলে সরকার উৎখাতের আহ্বান জানিয়ে দেয়া তারেক রহমানের ভাষণ প্রচারের পরপর চ্যানেলটির মালিককে পর্ণোগ্রাফি মামলায় গ্রেফতারের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, অবস্থা দেখে মনে হয় বহির্বিশ্বও এখন আর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে না। চীন সংলাপের কথা বললেও যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চুপ, এমনকি ভারতের নতুন সরকারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলছে বলেই মনে করে ইকোনমিস্ট। বিএনপি’র একমাত্র পাশে পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল সেনাবাহিনীকে, তারাও জাতিসংঘ মিশনের লোভনীয় প্রস্তাবের ফল ভোগ করতে ব্যস্ত হওয়ায় রাজনৈতিক বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেনা বলে পর্যবেক্ষণ জানানো হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী’র নেতাদের ’৭১ এর মানবতাবিরোধী মামলায় বিচারের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। আভাস দেয়া হয়েছে খালেদা জিয়ার শিগগরিই গ্রেফতার হওয়া নিয়ে। সবকিছু মিলিয়ে সামনের দিনগুলোতে অস্থিরতা আরো বাড়বে বলে ইঙ্গিত দিয়ে শেষ করা হয়েছে প্রতিবেদনটি। সেইসঙ্গে রসিকতা করে বলা হয়েছে ট্রাক-লরিওয়ালা আর তালা-চাবিওয়ালাদের সামনে আসছে আরো কিছু ব্যস্ত দিন।
Advertisement