সেনাবাহিনীতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সব কিছুর ঊর্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার বিশ্লেষণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশপ্রেমিক যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার ঢাকা সেনানিবাসে সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদে বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।কোনো দেশের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত এবং সুসংহত করতে একটি সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী ‘অত্যন্ত সহায়ক’ ভূমিকা পালন করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা সুশিক্ষিত, কর্মক্ষম, সচেতন, বুদ্ধিমান এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ের অধিকারী- এমন যোগ্য অফিসারদের কাছে নেতৃত্ব ন্যস্ত করতে হবে।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণ বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে আপনারা যোগ্য ব্যক্তিকে পদোন্নতির জন্য নির্বাচন করছেন। পদোন্নতি প্রদানের সময় আপনাদের কতিপয় বিষয় বিশেষ বিবেচনায় নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’এ সময় সেনাবাহিনীর অফিসারদের পদোন্নতির জন্য সাতটি বিষয় বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সাতটি বিষয় হলো- মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস, নেতৃত্ব, পেশাগত দক্ষতা, মাঠের তৎপরতা বিচার, শৃঙ্খলা, সততা-বিশ্বস্ততা ও আনুগত্য, নিযুক্তিগত উপযোগিতা এবং গ্রহণযোগ্যতা।তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের যখনই প্রয়োজন হয়েছে তখনই সেনাবাহিনী জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশের যেযোনো সঙ্কটময় মুহূর্তে সেনাবাহিনী সর্বদা পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে।’গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর সেখানে অভিযান চালিয়ে ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধারের ঘটনাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘দক্ষ পরিকল্পনায় মাত্র ১২ মিনিটের মধ্যে এ অভিযান সম্পন্ন করায় আমি আপনাদের (সেনাবাহিনী) ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ শীর্ষ সেনা প্রেরণকারী দেশ, যা পুরো জাতির জন্য বিরল সম্মান বয়ে আনছে। আমাদের সৈনিকদের শৃঙ্খলা, দক্ষতা ও কর্তব্যবোধে দৃঢ় মনোভাব বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত হয়েছে।তিনি বলেন, স্বাধীনতার আগে সেনাবাহিনীতে যেখানে পশ্চিম পাকিস্তানের অফিসার ছিলেন ৮৭৪ জন, পূর্ব পাকিস্তানের ছিলেন ১২ জন; নৌবাহিনীতে পশ্চিম পাকিস্তানের ৫৯৩ জন অফিসারের বিপরীতে পূর্ব পাকিস্তানের ছিলেন সাতজন; আর বিমান বাহিনীতে যেখানে পশ্চিম পাকিস্তানের ৬৪০ জন অফিসার ছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানে সেখানে ছিলেন মাত্র ৪০ জন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সমগ্র জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময়ই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্ম। জাতির পিতা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের যে কার্যক্রম শুরু করেছিলেন, তার ধারাবাহিকতা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালে অব্যাহত ছিল এবং আছে।’অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহাম্মদ শফিউল হক, মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লে. জেনারেল এম মাহফুজুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।আরএস/এবিএস
Advertisement