বিশেষ প্রতিবেদন

একজন মানবিক পুলিশ অফিসার

সময়ে সময়ে আলোচনা-সমালোচনায় পুলিশের খারাপ দিকগুলোই বেশি মুখরোচক হয়ে ওঠে। পুলিশ যে জনগণের বন্ধু, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করার পাশাপাশি তারা যে মানবিক কাজের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই তা আমরা ভুলে যাই। দু-একজনের অপকর্মে পুরো পুলিশ বাহিনীকে সমালোচনায় বিদ্ধ করি আমরাই। তবে পুলিশ বিভাগে রয়েছে হাজারো হাফিজুর রহমান। যারা সাধারণ মানুষকে সহযোগিতার মতো মানবিক কাজগুলোও নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করেন।সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দুই রিকশাচালকসহ মোট চারজনকে হাসপাতালে নেয়া; সারারাত (নাইট ডিউটি) পেশাগত দায়িত্ব পালনের পরও খোঁজ নিতে হাসপাতালে যাওয়া ও ওষুধ কিনে দেয়ার কাজ কয়জনই বা করার সুযোগ পান।কথাগুলো যার সম্পর্কে বলা হচ্ছে তিনি হলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) এএসএম হাফিজুর রহমান (রিয়েল)। তার নৈতিক দায়িত্বের সঙ্গে একাট্টা হয়ে এগিয়ে এসেছেন আর কিছু পুলিশ সদস্যও।গত শুক্রবার ভোরের ঘটনা। ডিএমপির রমনা বিভাগে রাতে কর্তব্যরত ছিলেন তিনি। এমন সময় খবর আসে ধানমন্ডি-১০ এলাকায় একটি প্রাইভেটকার ও রিকশার সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন।তাৎক্ষণিক তিনি ওই এলাকায় কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারকে ওয়্যারলেস সেটে আহত সবাইকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসতে বলেন। এসি হাফিজুর রহমানের ওয়্যারলেস বার্তায় ধানমন্ডি থানার এএসআই মাসুদ আহত চারজনকে উদ্ধার করে ছুটে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।এসি হাফিজের সংবাদে ধানমন্ডি থানা থেকে ছুটে আসেন এসআই সবুর, এসআই সাইদুর রহমান, কনস্টেবল সিরাজুদ্দোলাহ, শাহজাহান ও আব্দুল আলিমরাও।আহতদের সুচিকিৎসা বন্দোবস্ত ও সার্বিক খোঁজ-খবর নিতে গাড়িচালক কনস্টেবল আনোয়ারকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপস্থিত হন এসি হাফিজুর রহমান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন দুই রিকশাচালক। তারা হলেন কামরুল (চাঁদপুর) ও আবু মিয়া (কুড়িগ্রাম)। এদের সঙ্গে আহত হয়েছেন প্রাইভেটকারের দুই আরোহী কাদির ও রাউফ।আহতদের পরিবারকে মোবাইল ফোনে খবর দেন তিনি। নিজে প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে আনার ব্যবস্থা করেন। তাদের সবার সুচিকিৎসা প্রদানের জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসকদের অনুরোধ করেন।এ ব্যাপারে ধানমন্ডি থানার এএসআই মাসুদ জানান, ‘ওয়্যারলেসে খবর আসার পর আমি একা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিলাম। পুলিশে হাফিজ স্যারের মতো অনেক হৃদয়বান অফিসার রয়েছেন। যাদের সঙ্গে কাজ করতে পারায় গর্ববোধ করি।’ডিএমপির পুলিশ অফিসার হাফিজের এমন মানবিক কর্মের বিষয়টি মূলত উঠেছে শফিকুল ইসলাম নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীর মাধ্যমে। কয়েকটি ছবির সঙ্গে ‘আমার দেখা একজন মানবিক পুলিশ অফিসার’ শিরোনামে পোস্ট দেন তিনি। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন ‘এমন ভালো ও মানবিক কাজের জন্য এসি হাফিজুর রহমানকে স্যালুট জানাই।’ওই পোস্টে আরো অনেকে তার এমন মানবিক আচরণের প্রশংসা করেছেন। শাহিন সালিম নামে একজন লিখেছেন, ‘Together we can change the country. salute to Real vai.... proud of you.সাদেকুর রহমান শাফিন শুভকামনা জ্ঞাপন করে লিখেছেন, ‘Once i was in big problem Hafiz bhai help me to recover the problem very quickly. Thanks once again and and will have my prayers for you all the time insaallah.মাহাবুর আলম সোহাগ নামে এক সাংবাদিক লিখেছেন, ‘স্যালুট জানাই রিয়েল ভাইকে। প্রতিটি মানুষের মানবিকতা জাগিয়ে তোলা উচিত; তাহলে এমনিতেই অপরাধ কমে যাবে।’আকতারুজ্জামান নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘Your work spirits one day uplifted you to the pinnacle of your career.’এমন মানবিকতাকে REAL police এর কাজ বলে উল্লেখ করেছেন প্রমথ সরকার বাঁধন নামের Pramath Sarker Badhon অপর এক ফেসবুক ব্যবহারকারী। রফিকুল ইসলাম সুমন নামে একজন লিখেছেন, ‘our country of all police follow him.’এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে এসি হাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনৈতিকতার ঊর্ধ্বে থেকে কারো সহযোগিতায় পাশে থাকাটাকেও আমি দায়িত্ব মনে করি। সাধারণ মানুষের পাশে থেকে সামান্য সহযোগিতা করতে পারায় নিজেকে সম্মানিতবোধ করছি।’ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের এডিসি মো. ইউসুফ আলী জাগো নিউজকে বলেন, হাফিজ আমাদের চৌকষ পুলিশ অফিসার। আমাদের ‘সোশ্যাল মিডিয়া ও সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার’ সংশ্লিষ্ট কাজগুলোতেও হাফিজই সহযোগিতা করে আসছে। ডিএমপির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ভুক্তভোগী কিংবা যেকোনো সাধারণ নাগরিককে আইনি সহযোগিতাও দিয়ে আসছে হাফিজ।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসি হাফিজুর রহমান ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ৩০তম বিসিএসে পুলিশে যোগদান করেন। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গি থানার বামুনিয়া গ্রামে।জেইউ/বিএ/এমএস/এমএফ

Advertisement