জাতীয়

মুসলিম উম্মাহ`র শান্তি কামনায় শেষ ইজতেমার প্রথম পর্ব

হে আল্লাহ, আমাদের দোয়া কবুল করে নাও। হে পরওয়ারদিগার, আমাদের ইমান রক্ষা করো, আমাদের ভালো কাজগুলো মঞ্জুর করে নাও। হে রাহমানির রাহিম, সব বিপদ দূর করে দাও, সারা দুনিয়ার মানুষের ওপর রহমত বর্ষণ করো।বিনম্র সুরে ইহকাল ও পরকালের মালিক মহান আল্লাহ পাকের কাছে দুই হাত তুলে এই মোনাজাত করছিলেন ভারতের মাওলানা দিল্লীর মাওলানা মোহাম্মদ সা’দ। আর তাঁর মোনাজাতের মধ্যে কিছুক্ষণ পর পর ‘আমিন’ ‘আমিন’ ধ্বনি উঠছিল। বিশ্ব ইজতেমার ময়দান ও আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লাগানো মাইকে সেই ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে তুরাগ নদের চারপাশের এলাকায়।গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের পাশে বিশ্ব ইজতেমার মূল মঞ্চ থেকে রোববার সকাল ১১টা ২০ মিনিটে শুরু হয় এ বছরের ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত। চলে ১১টা ৪৮ মিনিট পর্যন্ত। মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর শান্তি  ও সম্বৃদ্ধি কামনা করেন তিনি। এসময় অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। মোনজাতে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ছাড়াও মন্ত্রী পরিষদের অন্যান্য সদস্যরা অংশ নেন।আরবি ও উর্দু ভাষায় তাঁর সুমধুর সুরের মোনাজাত শুরু হতেই লাখো মুসল্লির কলরব মুহূর্তে থেমে যায়। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নেমে আসে নীরবতা। তাঁর সঙ্গে লাখো মুসল্লি দুই হাত তুলে ‘আমিন’, ‘আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনি তোলেন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়।উল্লেখ্য, ঢাকার রমনা উদ্যানসংলগ্ন কাকরাইল মসজিদে ১৯৪৬ সালে প্রথম ইজতেমার আয়োজন করা হয়। মুসল্লির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৪৮ সালে ইজতেমার স্থান পরিবর্তন করে বর্তমান হাজি ক্যাম্পের স্থলে নেওয়া হয়। ১৯৫৮ সালে ইজতেমা হয় সিদ্ধিরগঞ্জে। মুসল্লি আরও বাড়তে থাকায় সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ১৯৬৬ সালে টঙ্গীর তুরাগতীরের মাঠে ইজতেমার স্থান নির্ধারণ করা হয়। সেই মাঠেও স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেই হিসাবে এবার ইজতেমার প্রথম পর্ব ৯ জানুয়ারি শুরু হয়ে রোববার শেষ হয়। আর দ্বিতীয় পর্ব ১৬  জানুয়ারি শুরু হবে। এদিকে মোনাজাতে অংশ নিতে ভোররাত থেকে হেঁটেও ইজতেমাস্থলে পৌঁছান অনেক মুসল্লি। সকাল আটটার আগেই ইজতেমার মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে মুসল্লিরা মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলিগলিতে অবস্থান নেন। ইজতেমাস্থলে পৌঁছাতে না পেরে কয়েক লাখ মানুষ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ও আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া সড়কে অবস্থান নেন। ফজরের নামাজ ও আখেরি মোনাজাতের জন্য তাঁরা পুরোনো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন বিছিয়ে বসে পড়েন। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী তিন-চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাসাবাড়ি, কলকারখানা, অফিস, দোকান ও যানবাহনের ছাদ এবং তুরাগ নদীতে অনেক নৌকায় অবস্থান নেন মুসল্লিরা।ইজতেমার তিন দিনের বয়ান শুনতে মুসল্লিদের বেশির ভাগ প্রথম দিনই তুরাগতীরে সমবেত হন। যাঁরা নিয়মিত বয়ান শুনতে পারেননি, তাঁদের মধ্যে অনেকেই নিয়ত করেছিলেন আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা এবং আশপাশের এলাকার মানুষ ফজরের সময় থেকেই টঙ্গী অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে রোববার আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে ছিল ছুটি। নানা বয়সী ও পেশার মানুষ, এমনকি নারীরাও ভিড় ঠেলে মোনাজাতে অংশ নিতে সকালেই টঙ্গী এলাকায় পৌঁছান।

Advertisement