নরসিংদীর রায়পুরায় আড়িয়াল খাঁ নদে নৌকাডুবিতে পাঁচ শিশুসহ ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টার দিকে রায়পুরা উপজেলার জংলী শিবপুর বাজার ঘাটে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- বারৈচা গ্রামের মিলন মিয়ার মেয়ে মার্জিয়া (৩), একই গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে রাকিব (১৩), আক্তার হোসেনের ছেলে সম্রাট (৪), রবিউল আক্তারের মেয়ে সুমাইয়া (৫), সুন্দর আলীর মেয়ে জেরিন (৮), রবিউল্লাহর স্ত্রী মালা বেগম (৭০), চর মরজাল গ্রামের মৃত মিয়া বক্সের মেয়ে ফুলেসা বেগম (৫০), দেওয়ানের চর গ্রামের মৃত ফজর আলীর মেয়ে বিবি মালদারের নেছা (৮০) ও একই গ্রামের কুদ্দুছ মিয়ার ছেলে ইয়াছিন মিয়া (৭)।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১১টার দিকে রায়পুরা উপজেলার বারৈচা, দেওয়ানেরচরসহ আশপাশ এলাকার নারী, পুরুষ ও শিশুসহ শতাধিক লোক জংলী শিবপুর বাজার ঘাট থেকে নৌকাযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানা গণিশাহর মাজারে যাওয়ার উদ্দেশে রওনা দেন। নৌকাটির ইঞ্জিন চালু করার সঙ্গে সঙ্গে নদীর ঘাটের কিনারায় একটি গাছের ডালের সঙ্গে ধাক্কা লাকে। এসময় নৌকার লোকজন নড়াচাড়া শুরু করলে নৌকাটি ঘাটের কিনারেই উল্টে ডুবে যায়। এসময় বেশকিছু লোক সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও তাৎক্ষণিকভাবে চার শিশুসহ পাঁচজন মারা যান। খবর পেয়ে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে। পরে একে একে আরো চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ডুবে যাওয়া নৌকাটি। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে দমকল বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে শত শত উৎসুক জনতা ভিড় জমায় নদীর পাড়ে। বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা থেকে একটি ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। এ ঘটনায় বারৈচা, দেওয়ানের চর ও চর বেলাবোসহ তিনটি গ্রামের ৯ জনের মধ্যে বারৈচা গ্রামের ছয়জন নিহত হন। একসঙ্গে একটি গ্রামে এত মরদেহের ঘটনায় শোকে বিহব্বল হয়ে পড়ে পুরো এলাকাবাসী। স্বজনদের আর্তনাদে পুরো গ্রামের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। এদিকে খবর পেয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেনারেল খন্দকার নূরুল হক, রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মতিন, বেলাবো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে হাবিবা, রায়পুরা থানা পুলিশের ওসি আজাহারুল ইসলাম, ওসি (তদন্ত) মাজহারুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অলি মিয়া জানিয়েছেন, ধারণক্ষমতার প্রায় তিনগুণ যাত্রী নিয়ে নৌকাটি গণি শাহর মাজারে যাওয়ার উদ্দেশে রওনা দেয়। নৌকাটির ইঞ্জিন চালুর সাথে সাথে এটি হেলে পড়ে। লোকজন নড়াচড়া করতে থাকলে একপর্যায়ে নৌকাটি নদীতে উল্টে ডুবে যায়। নিহত জেরিনের বাবা ও দুর্ঘটনাকবলিত নৌকার যাত্রী সুন্দর আলী বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী ওঠার কারণেই আমি আমার সোনা মানিককে বাঁচাতে পারিনি। নৌকাটি উল্টে যাওয়ার পর হৈচৈ আর ধাক্কাধাক্কিতে শিশু ও বৃদ্ধারা নদীতে তলিয়ে যায়। জীবন বাঁচানোর তাগিতে কারো খোঁজ কেউ নিতে পারেনি। নরসিংদীর জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত কষ্টদায়ক এবং দুঃখজনক। ঘটনার পর পরই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্ধার কর্মকাণ্ডের সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়। একই সঙ্গে দাফনের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে নিহত ৯ পরিবারের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা ও ২০ কেজি চাল দেয়া হয়েছে এবং বিনা ময়নাতদন্তে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। সঞ্জিত সাহা/এমএএস/এবিএস
Advertisement