সরকারি ব্যবস্থাপনার অনিবন্ধিত ৪ হাজার ৮শ’ হাজির কোটা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন এজেন্সির মধ্যে বণ্টনকে কেন্দ্র করে হজ এজেন্সিগুলোর মধ্যে তীব্র মতবিরোধ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।অনুসন্ধানে জানা গেছে, সৌদি সরকারের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত অনুমতি না পাওয়া গেলেও ইতোমধ্যে বিভিন্ন বেসরকারি এজেন্সির মধ্যে সরকারি কোটার হাজিদের সংখ্যা বণ্টন করে দেয়া হয়েছে। মোটা অঙ্কের টাকা উৎকোচ নিয়ে কোটা বণ্টন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রাক-নিবন্ধনের ক্রমিক নম্বরের সিরিয়াল ভঙ্গ করে হাজি পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।তবে ধর্মমন্ত্রী, ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও হজ এজেন্সিস অব বাংলাদেশ (হাব) এর নেতারা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, একটি মহল হজের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাকে বিতর্কিত করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ধর্মমন্ত্রী ওই সকল এজেন্সির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনেরও হুঁশিয়ারি দেন।জানা গেছে, সৌদি সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে আসন্ন হজ মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে মোট ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৮ জন হাজি হজ করতে যেতে পারবেন। কিন্তু প্রাক-নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন ১ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি হজ গমনেচ্ছু। অভিযোগ উঠেছে, চলতি বছর প্রাক-নিবন্ধনের ক্রমিক নম্বর অনুসরণ করে হাজি পাঠানো হবে এই মর্মে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকলেও তা ভঙ্গ করা হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেণির অসৎ শীর্ষ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে মাহরাম, হজ গাইড ও প্রভাবশালী মহলের নাম ভাঙ্গিয়ে হজ এজেন্সিস অব বাংলাদেশ (হাব) এর নেতারা কোটা বরাদ্দের নামে বিভিন্ন এজেন্সির কাছ থেকে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন হাব সমন্বয় পরিষদের নেতারা। হাব সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক রুহুল আমিন মিন্টু অভিযোগ করেন, হজ ব্যবস্থাপনায় ১১ এজেন্সির ৮৮৬ জন হজযাত্রীকে ঘুষ নিয়ে কোটায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সরকারি অব্যবহৃত কোটা একটি অসাধু মহল কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন এজেন্সির নামে বরাদ্দ দিচ্ছে।প্রমাণ আছে জানিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, সৌদি এয়ারলাইন্স দুটি এজেন্সিকে প্রায় ৩০ হাজার টিকিট বরাদ্দ দিয়েছে। এছাড়া ময়মনসিংহ ট্রাভেলস নামক একটি এজেন্সির ১০৩ জনসহ মোট ১১টি এজেন্সির মাধ্যমে ৮৮৬ হাজযাত্রীর নিকট থেকে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে কোটার অন্তর্ভুক্ত করা হয় জানিয়ে তিনি সেগুলো বাতিল করে সমবণ্টনের দাবি জানান। তবে এ সব অভিযোগের ব্যাখ্যা দিয়ে বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। সুষ্ঠুভাবে হজ প্রক্রিয়া সম্পাদনের লক্ষ্যে গঠিত নয় সদস্যের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটির সদস্য ও ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান বজলুল হক হারুন, সাংসদ এ কে এম আউয়াল, হাব সভাপতি ইব্রাহিম বাহার ও মহাসচিব শেখ আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।তারা বলেন, একটি মহল হজের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে প্রাক-নিবন্ধনের সিরিয়াল ভঙ্গ হয়েছে স্বীকার করে তারা বলেন, অনেক এজেন্সির সিরিয়াল হয়তো আগে আছে কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে তারা এখন আর নতুন করে হাজি পাঠাতে চাইছেন না। তাছাড়া মাহরামজনিত সমস্যার কারণে অনেকের সিরিয়াল হাজার হাজার (যেমন : স্বামীর সিরিয়াল আগে কিন্তু স্ত্রীর সিরিয়াল অনেক পরে) পিছিয়ে পড়ায় তাদের অর্ন্তভুক্ত করতে সিরিয়াল ঠিক রাখা যায়নি। তাছাড়া কিছু ভিআইপিকে অর্ন্তক্তুক্ত করতে গিয়ে সিরিয়াল মানা সম্ভব হয়নি। ধর্মমন্ত্রী জানান, যা কিছুই করা হয়েছে তা স্বচ্ছতা বজায় রেখে ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান বজলুল হক হারুনকে প্রধান করে গঠিত নয় সদস্যের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটির অনুমোদন ক্রমেই করা হয় বলে তিনি জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হজ কার্যক্রমের সাথে দীর্ঘদিন জড়িত আছেন এমন একাধিক হজ এজেন্সির মালিকরা বলেন, ধর্মমন্ত্রী একজন সৎ ও সজ্জন ব্যক্তি এ ব্যাপারে সন্দেহ না থাকলেও বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তার পক্ষ হয়ে এখন সব সিদ্ধান্ত পিএস ও পিএসহ কয়েকজন দিয়ে থাকেন। হাব নেতারা তাদের ম্যানেজ করে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে চলেছেন বলে অভিযোগ করেন। তবে ধর্মমন্ত্রী ও হাব নেতারা এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন। এমইউ/এআরএস/পিআর
Advertisement