বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা উত্তম কুমারের ৩৪তম প্রয়াণ দিবস আজ। ১৯৮০ সালের এই দিনে সবাইকে কাঁদিয়ে পরপারে পাড়ি জমান এই মহানায়ক। অভিনয়, মেধা ও যোগ্যতাবলে জীবদ্দশায় উত্তম কুমার নিজেকে অন্যরকম এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। তার অভিনীত ছবির বেশিরভাগই দর্শকনন্দিত। বিশেষ করে তার ও সুচিত্রা সেনের জুটি আজও স্মরণীয় হয়ে আছে দর্শক হৃদয়ে। বাংলা চলচ্চিত্রের অনেক দিন পার হয়ে গেলেও এ জুটির জনপ্রিয়তাকে এতটুকু স্পর্শ করতে পারেনি অন্য কোন জুটি। ১৯২৭ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর বৃটিশ ভারতের কলকাতার আহরিটোলায় জন্মগ্রহণ করেন উত্তম। সে সময় তার নাম রাখা হয়েছিল অরুণ কুমার চ্যাটার্জি। পরবর্তীতে চলচ্চিত্রে পা রেখে বনে যান উত্তম কুমার। নীতিন বোস পরিচালিত ‘দৃষ্টিদান’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় এ কালজয়ী অভিনেতার। এ ছবির মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনায় আসেন তিনি, যার ফলে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর একাধিক ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসিত হন তিনি। পরবর্তীতে ‘অগ্নিপরীক্ষা’ ছবিতে সুচিত্রা সেনের সঙ্গে জুটি গড়ে অভিনয় শুরু করেন উত্তম কুমার। ছবিটি ছিল নন্দিত ও ব্যবসা সফল। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এ জুটি ৩০টি ছবিতে কাজ করেন। এ ছবিগুলোর বেশির ভাগই ছিল ব্যবসা সফল। সুচিত্রা সেন ছাড়াও সেই সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুপ্রিয়া চৌধুরী, সাবিত্রী চ্যাটার্জি, মাধবী মুখার্জি, শর্মিলী ঠাকুর, অঞ্জনা ভৌমিক, অপর্ণা সেন ও সুমিত্রা মুখার্জির সঙ্গে জুটি বেঁধেও ব্যাপক সফলতা পান উত্তম। বাংলা ছবিতে যখন সর্বোচ্চ তারকা খ্যাতিতে অবস্থান করছিলেন উত্তম কুমার তখন তার ডাক আসে হিন্দি চলচ্চিত্র থেকেও। তার অভিনীত হিন্দি ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ছোটি সি মূলকাত, অমানুষ, আনন্দ আশ্রম, দরিয়া প্রভৃতি। নিজের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে বাংলা-হিন্দি মিলিয়ে প্রায় ২০৯টি ছবিতে অভিনয় করেছেন উত্তম কুমার। এর মধ্যে বেশিরভাগই দর্শকনন্দিত ও ব্যবসা সফল। তার উল্লেখযোগ্য বাংলা ছবির মধ্যে রয়েছে- সাড়ে চুয়াত্তর, দৃষ্টিদান, সাগরিকা, শিল্পী, হারানো সুর, ইন্দ্রানী, সবার উপরে, খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন, মায়ামৃগ, থানা থেকে আসছি, কুহক, এন্থনি ফিরেঙ্গি, অপরিচিতা, নায়ক, চিড়িয়াখানা, ধন্যি মেয়ে, জীবন-মৃত্যু প্রভৃতি। এসব ছবির মাধ্যমে নিজেকে বাংলা চলচ্চিত্রের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়ক হিসেবে প্রমাণ করেন উত্তম কুমার। যার ফলে ভক্ত-দর্শক তাকে মহানায়ক উপাধিতে ভূষিত করেন। অসাধারণ অভিনয়ের জন্য একাধিকবার সেরা নায়ক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। এছাড়াও পেয়েছেন দেশ বিদেশের অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা। অভিনয় ছাড়াও পরবর্তীতে প্রযোজক, পরিচালক, সংগীত পরিচালক ও গায়ক হিসেবেও কাজ করেছেন এ অভিনেতা। ব্যক্তিগত জীবনে গৌরী চ্যাটার্জিকে বিয়ে করেছিলেন উত্তম কুমার। গৌতম চ্যাটার্জি নামে তার এক ছেলে রয়েছে। ১৯৮০ সালের ২৪শে জুলাই মাত্র ৫৩ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যান মহানায়ক উত্তম কুমার। মৃত্যুর এত বছর পার হয়ে গেলেও বাংলা চলচ্চিত্রে উত্তম কুমারের জনপ্রিয়তার কাছাকাছিও এখন পর্যন্ত কেউ যেতে পারেনি।
Advertisement