‘মেয়েদের একটা স্বভাব হচ্ছে, একবার কোনো কারণে যদি তারা মুগ্ধ হয়ে যায় তাহলে তারা মুগ্ধ হতেই থাকে। এখন আমি যদি এই মহিলার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করি, তিনি সেই আচরণেরও সুন্দর ব্যাখ্যা বের করবেন এবং আবারো মুগ্ধ হবেন। ছেলেদের ভেতর এই আচরণ দেখা যায় না। তারা মুগ্ধ হতে চায় না। কোনো কারণে মুগ্ধ হয়ে গেলে প্রাণপণ চেষ্টা করে মুগ্ধতা কাটিয়ে উঠতে।’লেখক হুমায়ূন আহমেদ ‘আজ হিমুর বিয়ে’ উপন্যাসে হিমুর মুখে এই কথাই প্রকাশ করেছিলেন। ছেলে মানুষ বলেই কি তবে এত দ্রুত জীবনের প্রতি মুগ্ধতা কাটিয়ে উঠলেন নিজেও! নয়তো সব কিছুতেই মুগ্ধ হওয়া ছিল যার অভ্যেস সেই মানুষ কেন হঠাৎ হারিয়ে যাবেন। তার চলে যাওয়ার যা বয়স ছিল, সে বয়সে কতো মানুষই তো পৃথিবীতে মন্দ ছড়াচ্ছে, সমাজ-বিশ্বায়নের ক্ষতি করছে। তবে এমন একটা নিভৃতচারী অসাধারণ ভালো মানুষটার চলে যাবার এত কীসের তাড়া ছিলো? ভালো জানেন সৃষ্টিকর্তা! আমরা জানি, প্রিয়জন হারানোর চার বছর পার করলাম আজ। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় ১১টা ২০ মিনিটে নিউ ইয়র্কের বেলেভ্যু হসপিটালে হুমায়ূন আহমেদ শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন মরনঘাতি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে তিনি পাড়ি জমান প্রিয় মানুষ, জোছনা, শ্রাবন মেঘের দিন কিংবা লিলুয়া বাতাসের অপূর্ব পৃথিবী ছেড়ে।বাংলা সাহিত্যের বাদশা হুমায়ূনের প্রয়াণ দিবসে তার প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। গত বছরের এই দিনটিতে তিনি পাড়ি দিয়েছিলেন অন্যলোকের দেশে।জন্ম ও পরিবারহুমায়ূন আহমেদ। সাহিত্য, বিনোদন ভুবনের কিংবদন্তি এক নাম। জন্মেছিলেন ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে। পিতা ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন।বাবা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পিরোজপুর মহকুমার এসডিপিও হিসেবে কর্তব্যরত অবস্থায় শহীদ হন। ফয়জুর রহমান ছিলেন সাহিত্যানুরাগী। নিজে লিখতেনও। নিয়মিতই লেখালিখি করতেন পত্র-পত্রিকায়। বগুড়া থাকার সময় তিনি একটি গ্রন্থও প্রকাশ করেছিলেন। গ্রন্থের নাম ‘দ্বীপ নেভা যার ঘরে’। তিনি মনে প্রাণে চাইতেন তার সন্তানেরা বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠিত হোক। তাই ছেলেবেলাতেই তিনি তাদের লেখালেখিতে আগ্রহী করে তুলেছিলেন। তারই উপহার বাংলা সাহিত্যের তিন দিকপাল হুমায়ূন আহমেদ, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও আহসান হাবীব। ফয়জুর রহমানের তিন পুত্রই বাবার স্বপ্নকে সত্যি করেছেন দারুণভাবে। তিন ভাই ছাড়াও হুমায়ূন আহমেদের ৩ ছোট বোন আছে। তাদের নাম শিকু, শিফু ও মনি।ছোটকালে হুমায়ূন আহমেদের নাম রাখা হয়েছিল শামসুর রহমান। ডাকনাম কাজল। তার পিতা নিজের নাম ফয়জুর রহমানের সাথে মিল রেখে ছেলের নাম রাখেন শামসুর রহমান। পরবর্তীতে তিনি নিজেই নাম পরিবর্তন করে হুমায়ূন আহমেদ রাখেন।ছাত্র হুমায়ূনবাবার চাকরি সূত্রে নেত্রকোণা, দিনাজপুর, বগুড়া, সিলেট, পঞ্চগড়, রাঙামাটি, বরিশালে তার শৈশব কেটেছে। সেই সুবাদে দেশের বিভিন্ন স্কুলে লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বগুড়া জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন এবং রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে সব গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। পরে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই বিজ্ঞানে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে বিএসসি (সম্মান) ও এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।হুমায়ূন আহমেদ মুহসীন হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন এবং ৫৬৪ নং কক্ষে তার ছাত্রজীবন অতিবাহিত করেন। এমএসসি শেষে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার রসায়ন বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি লাভ করেন।অধ্যাপককর্মে প্রবেশ করেন ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় লেখেন প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী তোমাদের জন্য ভালোবাসা। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। লেখালেখিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় একসময় অধ্যাপনা ছেড়ে দেন তিনি।স্বামী ও বাবা হুমায়ূন১৯৭৩ সালে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। হুমায়ূন আহমেদের প্রথম স্ত্রীর নাম গুলতেকিন আহমেদ। এই দম্পতির তিন মেয়ে এবং দুই ছেলে। তিন মেয়ের নাম বিপাশা আহমেদ, নোভা আহমেদ, শীলা আহমেদ এবং ছেলের নাম নুহাশ আহমেদ। অন্য আরেকটি ছেলে অকালে মারা যায় তাদের।১৯৯০ সালের মধ্যভাগ থেকে কন্যা শীলার বান্ধবী এবং তার বেশ কিছু নাটক-চলচ্চিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী শাওনের সাথে হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠতা জন্মে। এর ফলে সৃষ্ট পারিবারিক অশান্তির অবসানকল্পে ২০০৫ সালে গুলতেকিনের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয় এবং ওই বছরই শাওনকে বিয়ে করেন।এ ঘরে তাদের তিন ছেলে-মেয়ে জন্মগ্রহণ করে। প্রথম ভূমিষ্ঠ কন্যাটি মারা যায়। কন্যার নাম রেখেছিলেন হুমায়ূন লীলাবতী। দুই ছেলের নাম নিষাদ হুমায়ূন ও নিনিত হুমায়ূন।আমাদের হুমায়ুন আহমেদঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলের ছাত্র জীবনে সাহিত্যে যাত্রা শুরু করেন ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাসের মাধ্যমে। শঙ্খনীল কারাগার তার ২য় গ্রন্থ। তারপর থেকে যেখানেই হাত দিয়েছেন হুমায়ূন সেখানেই সোনা ফলেছে।সময়ের অববাহিকায় দীর্ঘদিনের সাহিত্য জীবনে তিনি রচনা করেছেন প্রায় তিনশ’র মত উপন্যাস। যা বিশ্ব সাহিত্যে একজন লেখক হিসেবে তাকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। তার রচনাসমগ্রের মধ্যে এইসব দিনরাত্রি, জোছনা ও জননীর গল্প, মন্দ্রসপ্তক, দূরে কোথাও, সৌরভ, নি, ফেরা, কৃষ্ণপক্ষ, সাজঘর, বাসর, গৌরীপুর জাংশান, বহুব্রীহি, আশাবরি, দারুচিনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, আমার আছে জল, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, মেঘ বলেছে যাবো যাবো, মাতাল হাওয়া, শুভ্র গেছে বনে, বাদশাহ নামদার, এপিটাফ, রূপা, আমরা কেউ বাসায় নেই, মেঘের ওপারে বাড়ি, আজ চিত্রার বিয়ে, এই মেঘ, রৌদ্রছায়া, তিথির নীল তোয়ালে, জলপদ্ম, আয়নাঘর, হুমায়ূন আহমেদের হাতে ৫টি নীলপদ্ম ইত্যাদি অন্যতম।বাংলা সাহিত্যের নতুন যুগের স্রষ্টা ছিলেন হুমায়ুন আহমেদ। বাংলা সাহিত্যকে সার্বজনীন করে তুলতে এই কিংবদন্তি কথাশিল্পীর অবদান ইতিহাস হয়ে আছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্তের জীবন যাত্রা তার মতো করে পৃথিবীর আর কোনো সাহিত্যিক কলমের কালিতে তুলে ধরতে পারেননি। সেজন্যই তিনি বাংলা সাহিত্যের অঘোষিত বাদশাহ! হুমায়ূন আহমেদের তৈরি করা চরিত্ররা আশ্চর্য রকম জীবন্ত। বিচিত্র সেইসব চরিত্ররা মানুষকে হাসিয়েছে, কাঁদিয়েছে, স্বপ্নে ভাসিয়েছে। এক একটি চরিত্র পাঠক-দর্শকদের কাছে একেকটি নতুন আবিষ্কার হিসেবে ধরা দিয়েছে। হুমায়ূনের গড়া এসব চরিত্রে কখনো কখনো তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন যেন নিজেকে। তার মধ্যে আমরা তাই খুঁজে পাই কখনো হিমু, কখনো বা মিসির আলী, আবার কখনো কখনো শুভ্রকে। তার তৈরি করা চরিত্রের জনপ্রিয়তা ব্যক্তি হুমায়ূনকেও কখনো কখনো যেন ছাড়িয়ে যায়। বাকের ভাই, ছোট মামা, মুনা- সেইসব চরিত্রদের কয়েকজন। এছাড়াও মাজেদা খালা, লীলাবতী, রূপা, কঙ্কা, আনিস চরিত্ররাও তাকে যুগে যুগে অমর করে রাখবে বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের অন্তরে।টিভি নাটকের অমর স্রষ্টা!হুমায়ূন আহমেদ কিংবদন্তি হয়ে আছেন বাংলাদেশের টিভি নাটকের জগতে। সাহিত্যে জনপ্রিয়তার হাত ধরে একসময় বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য নাটক রচনা শুরু করেন তিনি। আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকে টেলিভিশনে প্রচারিত হুমায়ূন আহমেদের নাটকগুলো এতোটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে তার সৃষ্টি করা চরিত্রের ফাঁসি ঠেকাতে রাত-বিরাতে আন্দোলন করে রাস্তায় নেমে এসেছিলো মানুষ। ‘কোথাও কেউ নেই’, নাটকের শেষ পর্বে বাকের ভাইকে ফাঁসি না দেয়ার জন্যে লেখকের বাড়ি ঘেরাও করেছিলেন দর্শকরা। দর্শকেদের মিছিল বের হয়েছিল। কথা শোনেননি হুমায়ূন আহমেদ। তিনি বাকের ভাইয়ের ফাঁসি দিয়েছিলেন। এই ঘটনা বিনোদন দুনিয়ায় বিরল।তার অন্যতম নাটকগুলোর মধ্যে এইসব দিন রাত্রি, বহুব্রীহি, কোথাও কেউ নেই, নক্ষত্রের রাত, অয়োময়, আজ রবিবার, তারা তিনজন, আমরা তিনজন, মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন শুভেচ্ছার স্বাগতম, জল তরঙ্গ, ইবলিশ উল্লেখযোগ্য।চলচ্চিত্রের জাদুকরএকজন চলচ্চিত্রকার হিসেবেও হুমায়ুন আহমেদ ছিলেন দেশের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় নাম। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যতে শোক প্রকাশ করে স্বনামধন্য চলচ্চিত্র নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘হুমায়ূনকে হারিয়ে অনুভব করছি, আপনজন হারানোর বেদনা। সুস্থ ধারার চলচ্চিত্রের জন্য আমরা যারা কাজ করে আসছি, হূমায়ূন আহমেদ তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি মানুষকে হলমুখী করেছিলেন।’মুলত তার চলচ্চিত্র নির্মাণের আগ্রহ তৈরি হয় নব্বুই দশকের প্রথম দিকে। এই আগ্রহ আর সীমাহীন স্বপ্ন ছিল জীবনের শেষভাগেও। মোট ৮টি ছবি নির্মাণ করে গেছেন তিনি। ৮টি ছবি হলো- আগুনের পরশমনি, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, শ্যামল ছায়া, নয় নম্বর বিপদ সংকেত, আমার আছে জল আর ঘেটুপুত্র কমলা। তার ছবিতে কাজ করে রিয়াজ, জাহিদ হাসান, বিপাশা হায়াত, বারী সিদ্দিকীরা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন।সম্মানীত মানুষদীর্ঘদিনের সাহিত্য জীবনে একজন লেখক হিসেবে প্রায় সবই তিনি অর্জন কিংবা জয় করে নিয়েছিলেন। পাঠক, ভক্ত, সম্মান, টাকা- সব কিছুই তিনি পেয়েছিলেন দু’হাত ভরে। আর স্বীকৃতিস্বরুপ নানা সময়ে ঘরে উঠেছে নানা পুরস্কার। তার মধ্যে রয়েছে সাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসুদন পদক, হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক, এবং চলচ্চিত্রে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (শ্রেষ্ঠ কাহিনি ১৯৯৪, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ১৯৯৪, শ্রেষ্ঠ সংলাপ ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার ইত্যাদি।নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে...কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ ২৩ জুলাই সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়। আগেই সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট লেখকের প্রতি সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যে জনস্রোত শৃংখলা বজায় রাখার উদ্দেশে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তারা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন প্রিয় মানুষটিকে শেষ দেখা দেখতে মানুষের ঢল নামবে। হয়েছিলোও তাই। ঢাকা তো বটেই, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে এসেছিলেন হুমায়ূন ভক্তরা। তাদের কেউ হিমুর সাজে, কেউ রূপার নীল শাড়িতে, কেউ মিসির আলীর মতো গোল কাঁচের চশমা পড়ে নির্বিকার দৃষ্টি রেখেছিলেন শোকাতুর শহীদ মিনারে। হুমায়ূনকে শ্রদ্ধা জানাতে গণমানুষের ভীড়ে সেদিন অপেক্ষায় ছিলেন রাজনীতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারা। বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্র-নজরুলের পর আর কোনো লেখক এমন ভালোবাসাময় শেষ বিদায় পেয়েছেন কি না আমার জানা নেই। সবার চোখে জল, হাতে ফুল। সবার চোখে মুখে আপনজন হারানোর গাঢ় বেদনা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভক্ত-অনুরাগীদের পাশাপাশি তারকাদের ভিড় বাড়তেই থাকে। এরই মধ্যে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে যায়, আবার ওঠে রোদ। ফুলে ফুলে ভরে উঠতে থাকে হুমায়ূনের কফিন। অবশেষে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার নিজের হাতে গড়া নুহাশপল্লীতে। সেখানে লিচু গাছের নিচে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। সমাপ্তি হলো একটি যুগের। হলো কী! আজও তো কিংবদন্তীর স্মৃতিরা পড়ে আছে এখানে-ওখানে বেদনার রঙ ছড়িয়ে। আজও তো কেউ হাঁটে অবিরাম, তার চরিত্রদের ধারণ করে। সাহিত্যের আড়ালে হুমায়ূন আহমেদ খুব হালকা ভাষায় বলে যেতেন মানবজীবনের চরম বাস্তবতার কথা। তেমনি এক লেখায় বলেছিলেন- ‘তুমি হাসলে সবাই তোমার সাথে হাসবে, কিন্তু তুমি কাঁদলে কেউ তোমার সাথে কাঁদবে না। মানুষকে কাঁদতে হয় একা একা।’ কত মানুষ তার বিরহে আজ একা একা কাঁদে সে কথা কি হুমায়ূন স্যার জানেন কিংবা দেখতে পান? কে জানে!এলএ/পিআর
Advertisement