প্রবাস

পরিশ্রম করে ভাগ্য বদলেছেন কাতার প্রবাসী অমল বাড়ৈ

মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ সম্ভাবনাময় একটি দেশ কাতার। এটি পারস্য উপসাগরের ছোট দেশ, গরম ও মরুভূমির দেশ। মাথাপিছু আয়ে বর্তমানে পৃথিবীর সবচাইতে ধনী দেশও কাতার। দেশটিতে কর্মরত আছেন তিন লাখের মত বাংলাদেশি। এদের অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন খাতে সুনামের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। কাতারের ব্যবসা-বাণিজ্যে অন্যতম খাত হচ্ছে কনস্ট্রাকশন ওয়ার্ক। এই কনস্ট্রাকশনে, মেশন, কারপেন্টার, স্টিল ফিক্সার, টাইলসসহ বিভিন্ন নির্মাণ শ্রমিকের পেশায় কাজ করে চারটি কোম্পানির মালিক কাতার প্রবাসী বাংলাদেশি মাদারীপুরের কালকিনির অমল বাড়ৈ।কাতার প্রবাসী অমল বাড়ৈর (৪২) বাবার নাম ধিরেন বাড়ৈ। তিনি (ধিরেন বাড়ৈ) মাদারীপুর কালকিনি উপজেলার এনায়েত নগর গ্রামের বাসিন্দা। অমল বাড়ৈ মাদারীপুর কালকিনি হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। কিন্তু পরিবারের অভাব অনটনের কারণে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি।পরিবারের অভাব দূর করার স্বপ্ন নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে শ্রমিকের চাকরি নিয়ে ১৯৯৯ সালে প্রবাসী জীবন শুরু করেন অমল বাড়ৈ। তবে কাতারে শ্রমিকের ভিসায় অমল বাড়ৈ স্বপ্ন সুখের হয়নি। দালালের প্রতারণায় এক মাসের ভিজিটিং ভিসা দিয়ে কাতার আসেন, চার বছর অবৈধ হয়ে বিভিন্ন পেশায় কাজ করলেও দেশে পরিবারের কাছে তেমন কোনো টাকা পাঠাতে পারেননি।কাতার সরকারের সাধারণ ক্ষমার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ৬ হাজার রিয়াল জরিমানা দিয়ে বৈধ হয়ে নির্ভয়ে শুরু করেন কাজ।  পরিশ্রমের ফল স্বরূপ গত ১৪ বছরে একটি একটি করে চার কোম্পানির মালিক এখন অমল বাড়ৈ।এখন জন্মস্থান মাদারীপুর কালকিনি উপজেলার এনায়েত নগর গ্রামের মানুষকেও কাতারে এনে স্বাবলম্বী করেছেন অমল বাড়ৈ। ভাই, শালা, ভাতিজা, ভাগ্নেসহ অমল বাড়ৈর পরিবারেরই ১০০ সদস্য বর্তমানে কাতারে রয়েছেন।বর্তমানে ভারত, নেপাল, বাংলাদেশেরসহ মোট এক হাজার শ্রমিক অমল বাড়ৈ এর চার কোম্পানিতে কর্মরত রয়েছেন। এখন আর আগের মত অভাব অনটন নেই অমল বাড়ৈর বাংলাদেশের জন্মস্থান মাদারীপুর কালকিনিতে। এছাড়া ঢাকা শহরেও তার রয়েছে অনেকগুলো বাড়ি।নিজের জন্মস্থান মাদারীপুর নিয়ে অমল বাড়ৈ আক্ষেপ করে বলেন, বাংলাদেশে গেলে গরিব মানুষদের চাইতে বড় লোকদের বেশি সাহায্য করতে হয়। তারা গরিব মানুষের চাইতে বেশি গরিব, গরিব মানুষের সাহায্যের জন্য টাকা নিয়ে গিয়ে সেই টাকা বড় লোকদের দিয়ে আসতে হয়।বাংলাদেশের বিমানবন্দরে মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসী আর ইউরোপ আমেরিকার প্রবাসীদের দুই চোখে দেখেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, ইউরোপ আমেরিকার প্রবাসীরা বিমানবন্দরে ভিআইপি মর্যাদা পায়। মধ্যপ্রাচ্যর প্রবাসীদের পুলিশ বিমানবন্দরে বলে বিশ হাজার টাকার বেতনে চাকরি কর আবার বড় বড় কথা। মধ্যপ্রাচ্যে আমরা সবাই আর বিশ হাজার টাকায় চাকরি করি না। আমরা হাজার হাজার মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসী আছি যাদের মাসে আয় এক কোটি টাকারও বেশি। দেশের সিংহভাগই রেমিটেন্স আমরা মধ্যপ্রাচ্য থেকে পাঠাই। যার পরিমাণ ইউরোপ-আমেরিকার তুলনায় কয়েকগুন বেশি। অথচ দেশের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে ইউরোপ আমেরিকায় বসবাসকারীদের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীদের অনেক পিছিয়ে রাখা হয়েছে।মধ্যপ্রাচ্যের রেমিটেন্স দিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা আজ অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের অর্থনীতিতে কত বড় ভূমিকা রাখছেন মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসী শ্রমিকরা, জাতীয় অর্থনীতিতে মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স অনেক বড় অবদান রাখছে।অমল বাড়ৈ বলেন, এই কাতারের ৯০ ভাগ আরবিরা অনেক ভাল, বিশেষ করে আমার স্পন্সর সাইদ মোবারক আল কাওয়ারী অনেক ভাল মানুষ। তার কারণে আজ আমি চারটা কোম্পানির মালিক, কাতারে বাংলাদেশিরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে পান বিক্রি, সবজি বিক্রি করে ঠুনকো কারণে একজন আরেকজনের অনেক বড় ক্ষতি করে। এইসব কারণে বাংলাদেশিদের অনেক আত্মমর্যাদা ক্ষুন্ন হয় কাতারে। এসব দোষের মধ্যেও বাংলাদেশিদের মধ্যে রয়েছে ভাল করার অদম্য সাহস। সবাই নিজ অবস্থান থেকে দেশের জন্যে অর্থ আয় করছেন। যখন আরো শিক্ষিত বাংলাদেশি কাতারে আসবে দেশের প্রতিনিধিত্ব শুরু কররে বাংলাদেশের আত্মমর্যাদা আরও বাড়বে।কাতারস্থ বাংলাদেশ কমিউনিটিতে এখনো পরিচিত মুখ না অমল বাড়ৈ। তবে কাতারস্থ বাংলাদেশ কমিউনিটি, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনে সুযোগ পেলে কাজ করার আসা প্রকাশ করেন তিনি।একে

Advertisement