ঈদের আনন্দ রাঙিয়ে তুলতে মানসম্মত নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারের প্রতিযোগিতায় নামে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল। তারা সাত দিনব্যাপী টানা ঈদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এবারের ঈদেও তার ব্যতিক্রম ছিল না। গেল ঈদে বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে অসংখ্য নাটক ও টেলিছবি। এসব নাটক-টেলিছবি প্রচারের পর ভালো-মন্দের মিশেলে সাড়া পাওয়া গেছে। তবে আগের মতোই খানিকক্ষণ পর পর বিজ্ঞাপন বিরতি এবং একঘণ্টা পর পর একই সংবাদ প্রচার দর্শকদের বিরক্তি করেছে। তবে এর মধ্যে জিটিভি আগেরবারের মত ঈদের অনুষ্ঠানে বিরতিহীনভাবে নাটক প্রচার করেছে। এছাড়া বেশকিছু নাটক ব্রেক-ফ্রি হিসেবেও প্রচার হয়েছে।এদিকে বিভিন্ন চ্যানেলের অনুষ্ঠানমালা দেখতে বসে আরেকটি সমস্যায় পড়েছেন দর্শক। দেখা গেছে, প্রিয় তারকার অনুষ্ঠান বা নাটক একই সময় একাধিক চ্যানেল প্রচার করছে। একটি ভালো অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে আরেকটি ভালো অনুষ্ঠান মিস করতে হয়েছে দর্শকদের। প্রতি বছরের মতো এবারও প্রায় প্রতিটি চ্যানেলই এক পর্বের নাটকের পাশাপাশি ৬ থেকে ৭ পর্বের ধারাবাহিক নাটক প্রচারিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাভিশনে ছয় পর্বের সাগর জাহানের ‘এভারেজ আসলাম’, মাসুদ সেজানের ‘ওয়াও ফ্যান্টাসি’, দেশ টিভিতে বান্নাহ’র ‘তিনি আমাদের বকর ভাই’, এশিয়ান টিভির ‘অ্যা জার্নি বাই চিটাগং’ ছাড়াও আরো অনেক। দীপ্ত টিভিতে পিআর প্রোডাকশনের তিন পর্বের ধারাবাহিক কাজল আরেফিন অমি’র ‘একটি বিড়াল বিড়ম্বনা’ এবং ইশতিয়াক আহমেদ রুমেলের ‘যা কিছু ঘটে’ নাটকটিও বেশ প্রশংসিত হয়েছে। একই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে এশিয়ান টিভিতে জাহিদ হাসানের পরিচালনায় ‘ঈদ মোবারাক’, সাখাওয়াত মানিকের পরিচালনায় ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’, এবং বৈশাখী টিভিতে সাজিন আহমেদ বাবুর পরিচালনায় ‘কিড সোলায়মান’ নামের ঈদের বিশেষ ধারাবাহিকগুলোও আলোচনায় ছিলো।একঘন্টার নাটকের মধ্যে মাসুদ সেজানের ‘একটি তাল গাছের গল্প’, কৌশিক শংকর দাশের ‘মন খারাপের দৃশ্যাবলী’, মাহফুজ আহমেদের ‘জল কলঙ্ক’, সাফায়েত মুনসুর রানার ‘লাইক এন্ড শেয়ার’, মোস্তফা কামাল রাজের ‘রূপকথা’, সালাহউদ্দিন লাভলুর ‘পাষাণ ইজ ব্যাক’, হিমু আকরামের ‘হ্যালো মিস্টা স্যাম’, সকাল আহমেদের ‘চাই শিক্ষিত চোর পাত্র’, তানিম রহমান অংশুর `দুই অংশের শেষ এখানেই`, শিহাব শাহিনের `প্রেম একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া` ইত্যাদি নাটকগুলো দর্শকদের মন কেড়েছে। পাশাপাশি জহির রায়হানের গল্প অবলম্বনে আশুতোষ সুজের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ‘ভাঙাচোরা’ নাটকটি দর্শকদের ভিন্ন স্বাদের বিনোদন দিয়েছে। এই নাটকে প্রায় এক বছর পর জুটি হয়ে কাজ করলেন চিত্রনায়ক রিয়াজ ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী তারিন। আলোচনায় ছিলো বেশ কিছু টেলিফিল্ম। তারমধ্যে সালাউদ্দিন লাভলুর পরিচালনায় জাহিদ হাসান ও লাক্স তারকা তাহসিন অভিনীত ‘হোয়াট ইজ ইউর ফাদার নেম’ প্রশংসিত হয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো গেল ঈদেও চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে নাটকের প্রাধান্য ছিল। পাশাপাশি চ্যানেলগুলো চেষ্টা করেছে ভিন্নধর্মী ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান প্রচার করে দর্শক টানতে। অসংখ্য নাটক ও টেলিফিল্মের ভিড়ে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের সংখ্যা খুব উল্লেখযোগ্য ছিল না বললেই চলে। ঈদ অনুষ্ঠানের সঙ্গে তুলনা করলে বলা যায়, এবারের ঈদেও প্রচারিত নাটক ও ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে আহামরি নতুনত্ব দেখা যায়নি। তবে এশিয়ান টিভিতে `লাক্স সেলিব্রেটি লাউঞ্জ` নামের একটি সাত পর্বের অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মত উপস্থাপনায় এসেছেন তারকা দম্পতি তৌকির আহমেদ-বিপাশা হায়াত। ব্যতিক্রমী ভাবনা নিয়ে এই অনুষ্ঠানটির সাতটি পর্বের তৌকির-বিপাশার অতিথি হিসেবে হাজির ছিলেন বিনোদন অঙ্গনের বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় তারকা। সেখানে মজার মজার গেমস-এ অংশ নেনে তারা এবং প্রতি পর্বে একজন বিজয়ী পেয়েছে ঢাকা-নিউইর্য়ক-ঢাকা টিকিট। এটি ছিল এবারের ছোটপর্দার অন্যতম একটি সফল ঈদ অনুষ্ঠান।এছাড়া একুশে টেলিভিশন টিভিতে ফারনাহা নিশোর উপস্থাপনায় চিত্রনায়ক শাকিব খান এবং ক্রিকেটার সাবিক আল হাসানকে নিয়ে ‘শাকিব বনাম সাকিব’ অনুষ্ঠানটি বেশ আলোচনায় এসেছে। বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত ঈদের বিশেষ নাটক ও টেলিফিল্মে এবারে বেশি দেখা গেছে মোশাররফ করিম, জাহিদ হাসান, চঞ্চল চৌধুরী, রিয়াজ আহমেদের নাটক-টেলিফিল্মের আধিক্য। তাদের মধ্যে মোশাররফ করিম একই ঘরানার অভিনয়ের জন্য সমালোচিত হয়েছেন। তবে রোমান্টিক, কমেডি, শহুরে, গ্রামীন, গল্প প্রধান কাজের জন্য আলাদা করে প্রশংসিত হয়েছেন রিয়াজ। পাশাপাশি একাধিক কাজ নিয়ে হাজির ছিলেন মাহফুজ আহমেদ, মীর সাব্বির, আজাদ আবুল কালাম, আনিসুর রহমান মিলন, ফজলুর রহমান বাবু, তাহসান, মিশু, আরফান, আফরান নিশো, সজল, অপূর্ব, আ খ স হাসানরা। দেখা গেছে তৌকির আহমেদ, তৌসিফ মাহবুব, অ্যালেন শুভ্র, হিল্লোল প্রমুখ। বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে এবার ছোট পর্দায় নাটকের অভিনয় নিয়ে চমক দেখিয়েছেন কণ্ঠতারকা হৃদয় খান। তিনি মোস্তফা কামাল রাজের ‘রূপকথা’ নাটকে তিশার বিপরীতে অভিনয় করেছেন।অভিনেত্রীদের মধ্যে সর্বাধিক নাটক-টেলিছবি প্রচার হয়েছে তিশা, অপর্ণা, মৌসুমি হামিদ, সাবিলা নূর, শবনম ফারিয়া, আশনা হাবিব ভাবনা প্রমুখদের। ঈদের বিনোদন দিতে হাজির ছিলেন সুবর্ণা মুস্তাফা, মৌ, বিদ্যা সিনহা মিম, উর্মিলা, মম, সুমাইয়া শিমু, নিশা, ঈশিকা খান, সামিয়া, হিমি, তারিন, তাহসিন, নোভা, প্রভা, জ্যোতিকা জ্যোতি প্রমুখ। আর বাড়তি চমক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা। তিনি সজল, হৃদয় খানের বিপরীতে দুটি নাটকে কাজ করেছেন। পাশাপাশি বহুদিন পর এবারের ঈদে দর্শক নতুন করে পেয়েছেন মোনালিসার অভিনয়।নাটক-টেলিছবি নির্মাণে এবারেও প্রাধান্য পেয়েছে কমেডি। কমেডি বলতে জোর করে দর্শক হাসানোর যে প্রচেষ্টা বিগত চার-পাঁচ বছর ধরে দেখা গেছে এবারেও তার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। বিশেষ করে মোশাররফ করিমকে দেখা গেছে অপ্রাসঙ্গিক এবং একঘেয়েমি গল্পে ভাঁড় হিসেবে হাজির হতে। তারমধ্যে অবশ্য ‘জমজ-৫’, ‘বাপের বেটা’, ‘কিড সোলায়মান’ ইত্যাদি নাটকগুলো দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন জনপ্রিয় এই অভিনেতা। কমেডি নাটকে সাবলীল ছিলেন জাহিদ হাসান, রিয়াজ, চঞ্চল চৌধুরী, আফরান নিশো, মিশু সাব্বিররাও। পাশাপাশি এবারে চোখে পড়েছে বেশ কিছু শিক্ষামূলক বা গল্প প্রধান নির্মাণ। ছিলো শহুরে-গ্রামীন প্রেক্ষাপটে বেশ কিছু রোমান্টিক গল্পও। চ্যানেলগুলোর মধ্যে বাংলাভিশন, চ্যানেল আই, বৈশাখী, জিটিভি, এশিয়ান টিভি, আরটিভি, এনটিভি, এটিএন বাংলা, চ্যানেল নাইনের অনুষ্ঠানই ছিলো সবার পছন্দের শীর্ষে। বিটিভি এবারেও হতাশ করেছে। অল্প বাজেটের অনুষ্ঠান আয়োজনে ছিলো না কোনো বৈচিত্রতা। নাটক-টেলিছবিগুলোর নির্মাণে অযত্নের ছাপ ছিলো যথেষ্ট। বলা চলে ঈদ জুড়ে বিটিভিতে কেবলমাত্র হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি’ই কিছুটা আলোচনায় ছিলো।এনই/এলএ/আরআইপি
Advertisement