দেশের কিংবদন্তি গানের মানুষ লাকী আখন্দ। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের একজন তিনি; যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। অসংখ্য কালজয়ী গান সুর করেছেন, গেয়েছেনও। এর মধ্যে উল্লেখ করা যায় ‘আমায় ডেকো না’, ‘এই নীল মনিহার’, ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে’, ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’, ‘মামনিয়া’, ‘লিখতে পারি না কোনো গান’, ‘ভালোবেসে চলে যেও না’, ‘বিতৃষ্ণা জীবনে আমার’, ‘কি করে বললে তুমি’, ‘এতো দূরে যে চলে গেছ’ ইত্যাদি।লাকী একজন নিভৃতচারী সৃষ্টির কারিগর। কখনোই নিজেকে প্রচারের স্রোতে ভাসাননি। গান করেছেন, সুর করেছেন; গানের সঙ্গেই বেঁধেছেন প্রাণ। আর সেই বন্ধনের জোরেই কয়েক প্রজন্মের কাছে সংগীতাঙ্গনের প্রিয় মানুষ তিনি। সর্বশেষ তিনি সরাসরি গান করেছিলেন গেল বছরের জুনের এক সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার একটি ক্লাবে গীতিকার আসিফ ইকবাল আয়োজিত একটি গানের অনুষ্ঠানে। সেদিন তিনি গলা খুলে গেয়েছিলেন ‘নীল মনিহার...’। তার সঙ্গে গলা মিলিয়েছিলেন শত শত উপস্থিত অতিথি।তার কিছুদিন পরই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে তার ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। তখনই ব্যাংককের পায়থাই হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। প্রথম দফায় শরীরে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। এরপর অক্টোবরের প্রথম দিকে ঢাকায় নিজ বাসায় ফেরেন লাকী। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় নভেম্বরে তাকে ফের ব্যাংককে নেওয়া হয়। এ অবস্থায় তার চিকিৎসায় এগিয়ে আসে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দেন।কিছুটা সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছিলেন দেশে। ভালোই ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজধানীর শাহবাগের ইব্রাহিম মেমোরিয়াল কার্ডিয়াক (বারডেম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসকদের নিবিড় পরিচর্যায় রয়েছেন তিনি। এদিকে গুণী এ শিল্পীর ব্যয়বহুল রোগটির চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে টানাপড়েনে পড়েছে তার পরিবার। গেল বছর অনেকেই লাকী আখন্দের প্রতি ভালোবাসা আর সম্মান দেখিয়ে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে তার পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। সেই ভালোবাসাকে তিনি নিজের জীবনের শ্রেষ্ট উপহার দাবি করে আর্থিক সাহায্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বিনয়ের সঙ্গেই। কিন্তু এবার চিকিৎসার জন্য লাকী আখন্দ নিজেই তার ভক্ত ও সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তা দাবি করেছেন। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙার কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শিল্পী বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমার চিকিৎসার জন্য সরকারের সহযোগিতা পেলে ভালো হয়। আমি আমার ভক্ত ও সরকারের কাছে চিকিৎসা সহায়তা চাইছি।’সাক্ষাৎকারটি দেখে সাড়া দেশেই লাকী আখন্দের ভক্ত-অনুরাগীরা আবেগাপ্লুত হয়েছেন। দাঁড়াতে চাইছেন প্রিয় শিল্পীর পাশে। ফেসবুকে এ নিয়ে অনেকে জোর প্রচারণাও চালাচ্ছেন শিল্পীর পাশে দাঁড়ােনোর আহ্বান জানিয়ে। যদিও লাকীর পরিবার থেকে এ বিষয়ে খুব বেশি প্রচার না চালানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে সংগীতাঙ্গনের মানুষদের দাবি প্রচারের নামে কোনো পাগলামি নয়, লাকী আখন্দকে ছোট করা নয় বরং চেষ্টা চলুক প্রিয় শিল্পীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অর্থের জোগানের। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী যতটুকু পারা যায় ততটুকু নিয়েই ভালোবাসার স্পর্শ রাখা যেতে পারে কিংবদন্তি লাকীর কণ্ঠে। আমরা বাংলাদেশের মানুষ বিপদে এক হতে জানি। এর অনেক নান্দনিক প্রমাণ রয়েছে। আমরা আরেক কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনকেও বাঁচিয়ে তুলেছিলাম সম্মিলিত ভালোবাসায়। আরেকটা চেষ্টা চলুক তবে। সুস্থ হয়ে আরো কিছুটা দিন আমাদের সঙ্গে থাকুন প্রিয় লাকী। আরো কিছু গান ও সুর উপহার আসুক তার সৃষ্টির নন্দিত রাজ্য থেকে। লাকী আখন্দের পাশে দাঁড়াতে হলে টাকা জমা দিতে পারেন-লাকী আখন্দউত্তরা ব্যাংক লিমিটেডএকাউন্ট নাম্বার: এস বি ১৪৭৬ডাচ্-বাংলা ব্যাংকএকাউন্ট নাম্বার: ১৬২.১০১.১৩৭৩৫৯ব্যাংকক ব্যাংক, থাইল্যান্ড একাউন্ট নাম্বার: ১১৩.৪.৯১৮৬৮.৭এলএ/এমএস
Advertisement