ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় নিস শহরে জাতীয় দিবস উদযাপনের সময় ট্রাক হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অন্তত শতাধিক। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে তিউনিশিয়ান বংশোদ্ভূত ফ্রান্সের এক নাগরিক ওই হামলা চালায়। সন্দেহভাজন হামলাকারীর বয়স ৩১ বছর। দুই দেশের নাগরিকত্ব ছিল বলে স্থানীয় পুলিশ নিশ্চিত করেছে। এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার না করলেও হামলার পেছনে আইএস জড়িত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত তথ্যের জন্য সমর্থকদের অপেক্ষা করতে বলছে আইএস নিয়ন্ত্রিত সংবাদসংস্থা আমাক নিউজ অ্যাজেন্সি। ফরাসি কর্মকর্তারা বলছেন, তারা ওই হামলার পর তদন্ত শুরু করেছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, হামলায় ব্যবহৃত ট্রাক থেকে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সূত্র ধরেই পুলিশ বলছে, হামলাকারী নিস শহরেই বসবাস করতেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গুলি ছুড়েছিলেন হামলাকারী বাস্তিল দিবস উদযাপন উপলক্ষে নিস শহরের বিখ্যাত প্রমেনেদ দে আঁগলাইসে জনতা যখন আতশবাজি পুড়িয়ে আনন্দ উদযাপনে মত্ত তখনই দ্রুতগতির একটি ট্রাক ইচ্ছে করেই চালক উঠিয়ে দেন জনতার উপর। হামলার পর ফ্রান্সের পুলিশ বলছে, এর আগে ওই হামলাকারী অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে তাদের কাছে তথ্য আছে। তবে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য ছিল না বলে ব্রিটিশ দৈনিক এক্সপ্রেস জানিয়েছে। ফ্রান্সের নিসে হামলাকারী ট্রাকের চালক পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার আগে পিস্তল উঁচিয়ে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়েছিলেন। শুক্রবার স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা এ তথ্য জানান। ফরাসি টেলিভিশন চ্যানেল আইটেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহরের একটি রেস্তোঁরায় ট্রাক হামলাকারীর সঙ্গে আরো এক বন্দুকধারী স্বাক্ষাৎ করেছিল। তবে সেখানে কোনো জিম্মি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেনি আইটেল। হামলার পর ট্রাক থেকে বেরিয়ে এক ব্যক্তি পায়ে হেঁটে পাশের একটি রেস্তোঁরায় ঢুকে পড়ে। লে বাফেলো নামের রেস্তোঁরায় ঢুকে পড়া ওই ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে প্রথমে ধারণা করেছিলেন এগুলো আতশবাজির শব্দ। এরপর সবখানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আমিও দৌড়ে পালাচ্ছিলাম। অন্তত এক মাইল রাস্তায় জনতার ওপর দিয়ে ট্রাক চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালায় ওই হামলাকারী। আল্পস সামুদ্রিক বিভাগের শীর্ষ পর্যোয়র রাজনীতিবিদ এরিক সিওট্টি বলেন, গুলি বিনিময়ের পর হামলাকারী ট্রাকচালককে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ।ফরাসি দৈনি লে ফিগারো পুলিশের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ট্রাকের ভেতর থেকে অস্ত্র, বন্দুক ও গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে। সর্বশেষ এ হামলাসহ গত বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ফ্রান্সে ১০টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটলো। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে প্যারিসের স্টেডিয়াম, রেস্তোঁরা, বাতাক্লঁ কনসার্ট হলে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের হামলায় ১৩০ জনের প্রাণহানি ঘটে। এর আট মাসের মাথায় আবারো রক্তাক্ত হামলার ঘটনা ঘটলো ফ্রান্সে। নিস হামলায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিন্দানিসের ভয়াবহ ট্রাক হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নিস হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এ হামলার ঘটনাকে কাপুরুষোচিত ও বর্বর বলে উল্লেখ করে নিন্দা প্রকাশ করেছে। চীনের প্রেসিন্টে শি জিনপিং নিস হামলাকে ‘আতঙ্কজনক’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন। চীনের গণমাধ্যম পিপলস ডেইলি বলছে, ফ্রান্সে ট্রাক হামলায় অন্তত দুই চীনা নাগরিক আহত হয়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন জার্মানির চ্যাঞ্চেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জার্মানি ফ্রান্সের পাশে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে নিস হামলাকে ‘অসহনীয় ও নিষ্ঠুর’ উল্লেখ করে ফ্রান্সের এই কঠিন সময়ে তার দেশ পাশে রয়েছে বলে জানিয়েছেন। এসআইএস/পিআর
Advertisement