মতামত

আমরাই পারবো

গুলশানে জঙ্গিদের নারকীয় তাণ্ডবের পর বাংলাদেশ তো বটেই বহির্বিশ্বও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। নানা রকম সহযোগিতার আশ্বাস আসছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল তার পূর্ব নির্ধারিত সফর এগিয়ে এনে অনেকটা তড়িঘড়ি বাংলাদেশ সফর করে গেলেন।  এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে কারিগরি ও প্রশিক্ষণবিষয়ক সহযোগিতার কথা জানান।  তার দেশের এই আগ্রহ নতুন কিছু নয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় অনেক দেশই বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ দমনে সহযোগিতার কথা বলে আসছে। এখন আমাদের বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতায় বহির্বিশ্বের উদ্বেগ থাকাটা স্বাভাবিক। বিশেষ করে গুলশান ট্র্যাজেডিতে এত সংখ্যক বিদেশি নাগরিক নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য, কূটনৈতিকসহ নানামাত্রিক আন্তসম্পর্কের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়ছে। কাজেই জঙ্গিবাদ দমনে এক সঙ্গে কাজ করার মধ্যে দোষের কিছু নেই। তাছাড়া জঙ্গিবাদ এখন একক কোনো সমস্যা নয়। গোটা বিশ্বই জঙ্গিবাদের ভয়াল থাবার নিচে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে। তবে কথা এই যে, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। কোনো বিষয়ে বৈদেশিক সহায়তা নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন দেশের সার্বভৌমত্বের বিষয়টি সবার আগে মাথায় রাখতে হবে। বিদেশি সহযোগিতার প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের জন্য যে ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে, সেটাই চাওয়া হবে। এখন কোন কোন ক্ষেত্রে কী ধরনের সহযোগিতা আমরা পেতে পারি সেটি সঠিকভাবে নির্ণয় করতে হবে। জঙ্গিবাদ দমনে কারিগরি সহায়তা ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে। তবে সে সহযোগিতা কার কাছ থেকে কতটুকু নেয়া হবে, কোন কোন ক্ষেত্রে নেয়া হবে- এসব নির্ধারণ করতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। অতীতে সহায়তার নামে ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়ায় যা হয়েছে সেই অভিজ্ঞতা বিশ্ববাসীর রয়েছে। তাই সহযোগিতা হস্তক্ষেপে রূপ নিক-এটা কিছুতেই কাম্য নয়। বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর সহযোগিতার আগ্রহকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তবে কোনো কোনো দেশের অতিউৎসাহের কারণও বোধগম্য নয়। জঙ্গিবাদ বৈশ্বিক সমস্যা হলেও এমনকি বাংলাদেশে সাম্প্রতিক উপর্যুপরি হামলার পরও পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়ায়নি যা বাংলাদেশ সামাল দিতে পারবে না। এ জন্য নানা মাত্রিক উদ্যোগ নিতে হবে। সরকার সেটা নিচ্ছেও। একটি কথা সবাই স্বীকার করেন যে, বাংলাদেশের মাটি ও মানুষ জঙ্গিবাদের আগাছাকে বৃক্ষে পরিণত হতে দিবে না। অতীতে অনেক সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ পারঙ্গমতার পরিচয় দিয়েছে। জঙ্গিবাদের সংকট থেকেও বাংলাদেশ মুক্ত হবে- এই বিশ্বাস এদেশের মানুষের মনে গভীরভাবে প্রোথিত। মানুষকে সঙ্গে নিয়েই জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় এগিয়ে যেতে হবে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ কিছু উগ্রবাদীর কাছে মাথা নোয়াতে পারে না। এইচআর/এমএস

Advertisement