আন্তর্জাতিক

সেই ছবিটার পেছনের কথা

যুক্তরাষ্ট্রে গেল সপ্তাহে শুরু হওয়া আন্দোলনের স্রোত এখনও থামেনি। পুলিশ ও কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান আমেরিকানদের মধ্যে সহিংসতার পরই মূলত এ আন্দোলন, প্রতিবাদের সূত্রপাত।     রোববারও লুইজিয়ানার ব্যাটন রজ থেকে বেশ ক’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবারে এখানেই পুলিশের গুলিতে নিহত হন এক কৃষ্ণাঙ্গ। একবিংশ শতাব্দীতে এসে কার্যত বর্ণবাদী আচরণ ঘিরে উদ্ভূত উত্তেজনাকর পরিস্থিতি ও তা সামালে দিতে পুলিশের কর্মপদ্ধতিতে নিয়ে বির্তক চলছে। তবে এসবের মধ্যেই একটি ছবি সব বির্তক ছাপিয়ে গেছে। ছবিটি তুলেছেন সদ্য রয়টার্সের হয়ে কাজ শুরু করা জনাথন ব্যাচম্যান নামে এক আলোকচিত্রী। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আইয়েশিয়া ইভানস নামে এক তরুণী ভারী অস্ত্রে সজ্জিত দুই পুলিশের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন একেবারে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে। তারপরও পুলিশ ওই নারীর দিকে দৃশ্যত আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতেই এগিয়ে যাচ্ছে। ব্যাটন রজ পুলিশ সদর সফতরের বাইরে থেকে এই ছবিটি তোলা হয়েছে, শনিবারের আন্দোলনের বেশিরভাগটা ছিল এই স্থানটি ঘিরেই। ছবিটা যখন তোলা হয়েছে সেই সময়ের একটা বর্ণনায় ব্যাচম্যান বলেছেন, এয়ারলাইন হাইওয়ে অবরোধ করে রেখেছিল বিক্ষোভকারীরা। পুলিশকে বলা হলো সড়ক ফাঁকা করতে...বেশিরভাগ বিক্ষোভকারীকেই পুলিশ সরিয়েও দিল। আমি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের বাদানুবাদের ছবি তুলছিলাম। ডানদিকে তাকিয়ে দেখলাম এক তরুণীকে এগিয়ে আসতে। এগিয়ে এসে সে পুলিশের সামনে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে গেল। এরপর সে মুখে কিছু বলছিলও না, সেখান থেকে নড়ছিলও না। বোঝাই যাচ্ছিল পুলিশ তাকে আটক করবে। ওই তরুণীকে সত্যিই আটক করা হয় বলে জানা গেছে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে। বিষয়টি নিয়ে বেশ হৈ চৈ পড়ে গেলে পরে ইভানস নিজেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, তিনি বেঁচে আছেন এবং নিরাপদে আছেন। মানুষ যেভাবে শুভকামনা জানিয়েছেন এবং ভালোবাসা দেখিয়েছেন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। সবই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা, আমি তো উপলক্ষ্য মাত্র।     বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে যারা ছবিটি শেয়ার করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম সাংবাদিক শন কিং; ফেসবুকে যার অনুসারীর সংখ্যা ৫ লাখ ৬০ হাজার। শনের ওই পোস্টে একটি কমেন্টেই লাইক পড়েছে ৩ হাজার ৩শটি; যেখানে ছবিটিকে ‘লিজেন্ডারি’ আখ্যায়িত করা হয়েছে। পুলিশের গুলিতে অ্যালটন স্টার্লিং নামে এক কৃষ্ণাঙ্গের নিহত হওয়ার কয়েক দিন পর নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার এ বিক্ষোভের ডাক দেয়। ব্যাচম্যান জানিয়েছেন, তার তোলা এই ছবিটা যে এতটা প্রশংসা পাচ্ছে তা তিনি জানতেন না। পরে বাবার ফোনে ছবির বিষয়ে জানতে পারেন তিনি। তার মতে, ওই তরুণীর মধ্যে আক্রমণাত্মক কোনো ইঙ্গিত ছিল না। ওখানে যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছিল এই ছবিটি তা খুব ভালোভাবেই প্রকাশ করছে। নানা কারণে মানুষের প্রচুর ক্ষোভ রয়েছে, কিন্তু তারা কোথাও সহিংস কোনো আচরণ করেনি। এপি ফটোগ্রাফার ম্যাক্স বিশেরের ছবিটি অন্য একটি অ্যাঙ্গেল থেকে পেয়েছেন। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই তরুণী রাস্তা থেকে সরে যেতে অস্বীকৃতি জানালে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। লুইজিয়ানার দ্য অ্যাডভোকেট পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবাদ পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ ছিল না। ১০২ জনকে গ্রেফতার করা হয় এবং আটটি বন্দুক জব্দ করা হয়। একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে কয়েকটি দাঁতও হারাতে হয়েছে।এনএফ/পিআর

Advertisement