রাজধানীর গুলশান-২ গোল চত্বর পেরিয়ে কিছুদূর এগোলেই পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনি। পাশেই গুলশান থানা। চারদিকে কেমন যেন নীরবতা। নিরাপত্তার প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে সামনে একটু ডানে ঢুকতেই ৭৯ নম্বর সড়ক। সড়কটির শেষ মাথায় শোক স্মৃতির সেই হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁ। সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে এখনো আসছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন স্তরের মানুষ। হলি আর্টিসানে যেতেও কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনি। কয়েক দফায় পুলিশের ব্যারিকেড ও জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে সবাইকে। সব পেরিয়ে ভিড় করছে শোকাতুর মানুষ। যারা নিহত হয়েছেন কিংবা সেখানে জিম্মি ছিলেন তাদের স্বজন ও পরিচিতরা ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষ আসছে ভালোবাসার ফুল হাতে শ্রদ্ধা জানাতে। দৃশ্যপট এমন যেন মানুষের শ্রদ্ধা ও শোকের মিনার হয়ে উঠেছে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁ। রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, জঙ্গি হামলার ৯ দিন পরও নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। রেস্তোরাঁটির খাবারের মান, চারদিকে সবুজ গাছ-গাছালি আর লেকের মনোরম পরিবেশ যে কাউকে আকৃষ্ট করবেই। তাই তো দেশি-বিদেশি সবারই প্রিয় ছিল হলি আর্টিসান। মাত্র ১০ দিন আগেও রেস্তোরাঁটি ছিল প্রাণোচ্ছলে ভরপুর। কিন্তু সবুজ আঙিনায় এখন শুধুই শোকের আবহে শুনশান নীরবতা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ধ্বংসস্তূপ। গত ১ জুলাই জঙ্গি হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় রেস্তোরাঁটি। জিম্মি করে হত্যা করা হয় দেশি-বিদেশি ২০ নাগরিককে। জিম্মিদের উদ্ধার করতে গিয়ে জীবন দেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। ওই ঘটনায় কমান্ডো অপারেশনে পাঁচ জঙ্গি সদস্য নিহত হয়। অবসান হয় জিম্মিদশার। ওই ঘটনার পর থেকে রেস্তোরাঁটি হারিয়েছে তার স্বপ্রাঞ্জল। নিরাপত্তা ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া সেখানে আর কারো ছায়া পড়েনি। রোববার দেখা যায়, রেস্তোরাঁটির ঢোকার রাস্তায় পুলিশের ব্যারিকেড। ব্যারিকেডের সামনেই নিহতদের ছবি সংবলিত বড় পোস্টার। তার নিচেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে অনেকে। চারপাশে বড় বড় ব্যানারে শোকের কথা। একই সঙ্গে দেশ থেকে জঙ্গিবাদ দূর করারও প্রত্যয়। প্রতিদিনই ওই রাস্তায় চলাচল করেন ইউনাইটেড হাসপাতালের কাস্টমার রিলেশন সুপারভাইজার আসমা ফাতিমা। যিনি ওই হামলার ঘটনার পরদিন শনিবার সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় আটকা পড়েছিলেন। রোববার আবারো দেখা তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কি ভয়ার্ত সময়টাই না সেদিন গেল। এখনও মানুষের মধ্যে ভয় কাটেনি। কিন্তু তারপরও মানুষ আসছে শ্রদ্ধা জানাতে। জঙ্গিবাদবিরোধী অবস্থান থেকে সবার চাওয়া এদেশের মুক্ত আকাশ-বাতাস রক্তের হোলি খেলা আর আর্তনাদে যেন ভারি না হয়।’ এক আদিবাসী সংগঠক বলছিলেন, ‘আমরা এখানে নিহতদের শ্রতি শ্রদ্ধা ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানাতে এসেছি।’ বিদেশি নাগরিকরাও আসছেন শ্রদ্ধা জানাতে। অনেকে কথা বলতে রাজি না হলেও নীরবতাই বলে দেয় তাদের শোক ও জঙ্গিবিরোধী অবস্থানের কথা। শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন স্কলাসটিকাসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গুলশান কূটনৈতিক এলাকার উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন জানান, শ্রদ্ধা জানাতে যারা আসছেন তাদের যেতে দেয়া হচ্ছে, তবে সবাইকে তল্লাশি করার পর। জেইউ/এমএমজেড/পিআর
Advertisement