দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অনিয়ম কমাতে সরকারি কেনাকাটার ধরন বদলে যাচ্ছে। কাগজ থেকে চলে যাচ্ছে অনলাইনে। এ প্রক্রিয়ায় ঘরে বসেই দরপত্র সংক্রান্ত সব কাজ করতে পারবেন ঠিকাদাররা। বর্তমানে চারটি সরকারি সংস্থায় পরীক্ষামূলক ই-টেন্ডারিং চালু হলেও চলতি বছরের শেষ নাগাদ অনলাইনে যাচ্ছে সরকারি সব দরপত্র।চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সবগুলো মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে ই-জিপির আওতায় নিয়ে আসতে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ)। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ডেটা সেন্টার স্থাপনের কাজ শেষ হবে। ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে ই-টেন্ডারিং কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে যুক্তদের। চলছে ঠিকাদারদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও। এ কার্যক্রমকে আরো বেগবান করতে বর্তমান পাইলট প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত চলমান চারটি টার্গেট এজেন্সির মাধ্যমে জেলা পর্যায়ে ল্যাব স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।এ প্রসঙ্গে সিপিটিইউয়ের মহাপরিচালক ফারুক হোসেন বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে এটি মাইলফলক হবে। দেশের সব সরকারি সংস্থার ক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা ও অনলাইনে দরপত্র প্রক্রিয়াকরণ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সিপিটিইউ সূত্র জানায়, গত মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ঠিকাদার এবং পরামর্শক মিলে মোট ১৯ হাজার ৬৮২ জন ই-জিপিতে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। ৩৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে দুই হাজার ২৩৬টি সরকারি ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে। সারাদেশে ৪০টি ব্যাংকের এক হাজার ৭০০-এর বেশি শাখা ই-জিপিতে সেবা দেয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। তাছাড়া নিবন্ধিত উন্নয়ন সহযোগী রয়েছে পাঁচটি। নিবন্ধিত উন্নয়ন সহযোগীগুলো হচ্ছে- বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা), ইউনিসেফ, চীন ও নেদারল্যান্ডস। ২০১১ সাল থেকে শুরু করে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ই-জিপির আওতায় ২১ হাজার ৭৮৩টি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। যেগুলোর মোট আর্থিক সংশ্লেষ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে সিপিটিইউ গত জানুয়ারি পর্যন্ত নিবন্ধন ফি ও টেন্ডার ডকুমেন্ট বিক্রি বাবদ ই-জিপি সিস্টেম থেকে আয় করেছে ৫৯ কোটি টাকা, যা চালানের মাধ্যমে সরকারের কাছে জমা দেয়া হয়েছে।এদিকে, সরকারি কেনাকাটায় মান বৃদ্ধির জন্য সারা দেশে গঠন করা হচ্ছে গভর্নমেন্ট অ্যান্ড কন্ট্রাক্টর ফোরাম বা ক্রয় সংলাপ ফোরাম। ইতোমধ্যেই ২৩টি জেলায় গঠন করা হয়েছে এই ফোরাম। এর মাধ্যমে সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ক্রয়কারী সংস্থা এবং ঠিকাদারদের মাঝে সরকারি ক্রয় বিষয়ে পারস্পরিক ধারণা, অভিজ্ঞতা ও মতবিনিময়ের মধ্যে যে কোনো সমস্যা সমাধানের পথ তৈরি হবে। সিপিটিইউ বলছে, সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় ক্রয়কারী ও টেন্ডার সমান গুরুত্বপূর্ণ। যথাসময়ে ও সফলভাবে চুক্তি সম্পাদন করার জন্য উভয়পক্ষের মধ্যে একটি আস্থার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। কারণ, চুক্তিতে দু’পক্ষেরই অধিকার ও দায়িত্ব বিদ্যমান। চুক্তির শর্তের সীমানা অক্ষুণ্ণ রেখে ক্রয়কারী ও টেন্ডারের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারলে চুক্তির সফল বাস্তবায়ন সহজতর হবে। সে লক্ষ্যে সিপিটিইউ দেশের সব জেলায় ক্রয়কারী ও টেন্ডারের জন্য ক্রয় সংলাপ ফোরাম গঠনে সহায়তা করছে।উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২ জুন এ প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ক্রয় প্রক্রিয়া ছাড়াও উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি দূর করতে অনেক আগে থেকেই দাতা সংস্থারা চাপ দিয়ে আসছিল। এ অবস্থায় প্রথম পর্যায় সরকারি চারটি সংস্থা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে পরীক্ষামূলকভাবে ই-টেন্ডারিং চালু করা হয়। বিশ্বব্যাংকের মতে, প্রতি বছর সরকারিভাবে যে ক্রয় কাজ করা হয় তার অধিকাংশই এ চারটি সংস্থা সম্পন্ন করে থাকে।এমএ/এনএফ/এমএস
Advertisement