বিশেষ প্রতিবেদন

অবশেষে মুখ খুললেন জঙ্গি রোহানের বাবা

দেশ-বিদেশ তোলপাড় করার মত নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে ছেলে রোহান ইমতিয়াজ। মানুষের হৃদয়ও ছুঁয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত জঘন্যভাবে। রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে জিম্মি করে পুলিশসহ ২২ দেশি-বিদেশি নাগরিককে হত্যার মিশনে অংশগ্রহণকারী জঙ্গি সদস্যদের মধ্যে রোহান অন্যতম। ৬ মাস নিখোঁজ থাকার পর ছেলের মুখ দেখতে পান আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ও রক্তাক্ত মৃত অবস্থায়। ঘটনা ঘটার পর থেকে লাপাত্তা তিনি। মিডিয়ায় মুখ দেখানো ও লোক চক্ষুর আড়ালে ছিলেন গত ৪ দিন। তবে সমালোচনার মধ্যেই আজ মুখ খুলেছেন তিনি একজন সন্তানের ব্যর্থ বাবা হিসেবে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ের লালমাটিয়া বি ব্লকের ৭/৯ নং ভাড়া বাসায় জাগো নিউজের মুখোমুখি হন জঙ্গি রোহান  বাবা ইমতিয়াজ আহমেদ খান বাবুল। তিনি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক।তিনি বলেন, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর আমি বউকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাই। পরদিন ছোট মেয়ে ফোন করে বলে রোহান বাড়ি আসেনি। আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিল আমার দুই মেয়ে। ফিরে এসে দাড়োয়ানের কাছ থেকে শোনেন রোহান ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে গেছে রোহান। আর ফেরেনি। ২ দিন পর আমি দেশে ফেরি। এরপর ৪ দিন সকল আত্মীয় স্বজনের বাসায় খোঁজ নিই। সম্ভাব্য সকল স্থানে তালাশ করি। কিন্তু খোঁজ মেলেনি রোহানের। পরে ৪ জানুয়ারি মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি। ডায়েরি নং ২৭৯। ছেলের সন্ধান চেয়ে স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সহযোগিতা চাই। তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ যে তিনি নিজে বিভিন্নভাবে ছেলের (রোহান) খোঁজ করেছেন। মোহাম্মদুপর থানার ওসি জালাল সাহেব, এসি ফারুক ও ডিসি বিপ্লব অনেক চেষ্টা করেছেন জানি। কিন্তু গত ৬ মাসে ছেলের কোনো খোঁজ পাইনি আমি।ইমতিয়াজ বাবুল বলেন, গত ১ জুলাই আমি আমার আত্মীয়ের জানাযা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। ভোর রাতে একজন ফোন করে জানালেন আমার ছেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। গুলশানে জঙ্গি হামলায় রোহানের ছবি দেখা গেছে। আইএস তাদের বরাতে যে সব সংবাদ ছড়িয়েছে সেখানেও রোহানের ছবি দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি জানতে পেরে সকালেই বাসা চলে আসি। এসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে মিলিয়ে দেখি আমার রোহানেরই ছবি। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাই। “কি বলবো। গত ২১ জুন রাতে আমি ওর সন্ধানে ফেসবুকে ওর আর আমার ছবি দিয়ে লিখি, “Baba where are you? Please Come back. কিন্তু ও আর ফেরেনি।”গত বছরের ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী ইমতিয়াজ খান বাবুল কেঁদে বলেন, ‘পরের ছেলেকে আমি হেদায়েত করি। আমার ছাত্র রাষ্ট্র চালায়। কিন্তু নিজের ছেলে হয়ে গেলো জঙ্গি। আমি কখন কিভাবে সকলের অগোচরে বিপথে চলে গেল বুঝতেই পারিনি। বাবা হিসেবে আমার কষ্টের কথা, লজ্জার কথা কাকে বলবো। এখন মনে হচ্ছে আমি একজন ব্যর্থ বাবা। আজ সত্যি আমি ব্যর্থ বাবা হিসেবে গণমাধ্যমের সামনে হাজির হয়েছি।’‘এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর না হোক। সেজন্য প্রত্যেক অভিভাবকের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখুন। কোথায় যায় না যায়, কি করে না করে, কার সঙ্গে ঘোরে মেশে খেয়াল রাখুন। দেশ হিসেবে জাতি হিসেবে বিশ্বে যেন আমার মতো আর কেউ বিব্রত না হয়।’ছেলে সন্দেহভাজন কারো সঙ্গে মিশতো কিনা জানতে চাইলে বাবুল বলেন, না সে রকম কাউকে দেখিনি। তবে নিবরাস এর (গুলশানে আরেক নিহত জঙ্গি) মায়ের সঙ্গে রোহানের মায়ের পরিচয় ছিল। কারণ দু’জনেই স্কলাসটিকায় পড়তো। ঠিক কবে থেকে রোহানের পরিবর্তন দেখতে পান জানতে চাইলে তিনি বলেন, জঙ্গিদের সঙ্গে মিশবে বা নিজে হয়ে যাবে এমন কখনো ভাবি নি। তেমন কিছু দেখিও নি। তবে ‘এ’ লেভেল এবং ‘ও’ লেভেল শেষ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে ভর্তি করাই ২০১৪ সালে। তখন ক্যাম্পাসে কিংবা আসতে যেতে কারো সঙ্গে মিশলেও মিশতে পারে।দেশ বিদেশে জঙ্গি হিসেবে রোহানের পরিচয় হয়েছে। নিজেও নিহত হয়েছেন। জিম্মি দশায় রোহানসহ অন্য জঙ্গিদের হামলায় নিহতদের মরদেহ হস্তান্তর করা হলেও জঙ্গিদের মরদেহ সামরিক হাসপাতালেই রয়ে গেছে। আপনি কি রোহানের মরদেহ দাফনে আগ্রহী, জানতে চাইলে ইমতিয়াজ খান বাবুল বলেন, বাবা হিসেবে কোন বাবা চায় না তার ছেলের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হোক। তবে বিষয়টি এখন জাতীয় ইস্যু হয়ে গেছে। তাই সরকার যা করবে তাই মাথা পেতো নেবেন বলেও জানান এ মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা।প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ করে বাবুল বলেন, ‘যারা এ দেশে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে দিতে চায় তাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমিও একমত। আর যেন কোনো বাবাকে জঙ্গি সন্তানের বাবা হিসেবে বিব্রত হতে না হয়।”জেইউ/জেএইচ/এমএস

Advertisement