খেলাধুলা

পরিচিতি ও কদর বেড়েছে মোসাদ্দেক-আল আমিন-মজিদের

দল বদলে স্বাধীনতা নেই। ক্রিকেটারদের ইচ্ছেমত দল বেছে নেবার পথরুদ্ধ। ‘প্লেয়ার্স বাই চয়েজ’ নামের এক অদ্ভুত ব্যবস্থায় তুলনামুলক কম মূল্যে বিক্রি হতে হচ্ছে। তারপরও ক্রিকেটারদের কারো কারো ভাগ্যে সে টাকাটাও পুরো  মিলছেনা। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ‘আম্পায়ারিং বিতর্ক।‘ এত কিছুর পরও ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট আবেদন হারায়নি। দর্শক-সমর্থক ও অনুরাগীদের কাছে এ আসরের কদর এখনো অনেক।প্রিমিয়ার লিগে কেউ ভাল খেললে, রান করলে শুধু মাঠই আলোকিত হয়না। পরিচিতিও বাড়ে। সবাই চেনেন। জানেন। এবারের লিগে ভাল  খেলে সে সত্য উপলব্ধি করছেন তিন তরুণ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, আব্দুল মজিদ আর মোহাম্মদ আল আমিন। তিনজনের কারোই এটা প্রথম লিগ নয়। প্রত্যেকেই ঢাকা লিগ খেলছেন গড়ে তিন-চার বছর ধরে। পুরোন ঢাকার জুরাইন পোস্তগোলার ছেলে আল আমিন এবার নিয়ে চতুর্থবার প্রিমিয়ার লিগ খেললেন। ময়মনসিংহ শহর থেকে আসা আব্দুল মজিদও তাই। একই শহরে বেড়ে ওঠা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের সঙ্গে ঢাকা লিগের সখ্য তিন বছরের।এ সময়ের মধ্যে তারা বেশ কয়েকটি ক্লাবের হয়েই খেলেছেন। কিন্তু কোনবার এমন পরিচিতি মেলেনি। যেমনটা পাচ্ছেন এবার। তাতো পাবেনই। এবার যে তিনজনের ব্যাটই কথা বলেছে। ভিক্টোরিয়ার ওপেনার মজিদ ৭০৬ রান (দুই সেঞ্চুরি আর পাঁচ হাফ সেঞ্চুরি)  করে রান তোলায় তিন নম্বরে। একই দলের মিডল অর্ডার আল আমিনের সংগ্রহ ৬৭২ (এক শতক, ৭ অর্ধশতক)। রান তোলায় তার স্থান চার নম্বরে। আর আবাহনীর সাফল্যের অন্যতম রূপকার মোসাদ্দেক সৈকত পাঁচ ফিফটিতে ৬২২ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারিদের মধ্যে ছয় নম্বর। এবারের প্রিমিয়ার লিগ দেখা দর্শক, সমর্থক ও ক্রিকেট অনুরাগী এবং স্থানীয় কোচ ও বিশেষজ্ঞ - সবাই একমত এবারের লিগে এই তিন তুর্কী তরুণই সবচেয়ে বেশী ভাল খেলেছেন। জাগো নিউজের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ের আলাপে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, আবাহনী কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন এবং লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জ প্রশিক্ষক খালেদ মাসুদ পাইলটও এই তিন সম্ভাবনাময় তরুণকেই এবারের লিগের সেনসেশন ও প্রাপ্তি বলে অভিহিত করেছেন। এবারের লিগ শেষে এই তিন মেধাবী তরুণকে নিয়েই যত কথা। মোসাদ্দেক সৈকত, আল আমিন আর আব্দুল মজিদও ক্রিকেট অনুরাগীদের অকুন্ঠ ভালবাসা ও প্রশংসায় সিক্ত হচ্ছেন। ডাক খোঁজ বেড়ে গেছে। শপিং মলে গেলে অনুরাগীদের ভীড়। কেউবা এসে হাত মিলাচ্ছেন। বলছেন, আরে আপনি ........... না! এবারতো দারুণ খেললেন। সেলফি তোলার আব্দারকারির সংখ্যাও বেড়েছে বহু। মঙ্গলবার দুপুরের জাগো নিউজের সাথে আলাপে ওই তিন তরুন ক্রিকেটারের মুখে ঠিক ওই কথাগুলোই শোনা গেল। আসুন শোনা যাক তিন তরুনের কথা  গুলো মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত‘ময়মনসিংহের গোলাপজান রোডের ছেলে আমি। ওখানেই বেড়ে ওঠা। আবাহনীর হয়ে প্রিমিয়ার লিগ খেলছি তিন বছর।  আগের ঈদের সঙ্গে এবারের ঈদের তেমন পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছিনা। ঈদ ঈদের মতই। আগে যেমন পরিবার ও আপনজনের সাথে খুশি ও আনন্দ শেয়ার করতাম। ইনশাল্লাহ এবারো করবো।  এবারো ময়মনসিংহ শহরের গোলাপজান রোডে নিজ বাসায়ই ঈদ করবো।’‘তবে একটা পার্থক্য অনুভব করছি। এবার  লিগে রান করেছি। তাই আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশী মানুষ চিনেছে। ডাক খোঁজ বেড়ে গেছে। শপিং মলে গেলে অপরিচিত লোকজনও কাছে এগিয়ে আসছেন। বলছেন, আপনিতো মোসাদ্দেক সৈকত তাইনা? এবারতো বেশ ভাল খেললেন। অনেক রানও করলেন - এই সব। কেউ কেউ সেলফিও তুলছেন।’‘লিগ শেষ হবার আগে একদিন যমুনা ফিউচার মার্কেটে গেছি। সেখানে যে দোকান থেকে শপিং করেছি তারাও চিনে ফেললো। আগে এমনটা হতোনা। এটা অন্যরকম ভাল লাগার।’ আল আমিন  (নিজ বাসায় বাবা মার সাথে ঈদ করবেন আল আমিন। তার অনুভুতিও অভিন্ন।)  “বুঝতে পারছি এবার প্রিমিয়ার লিগে ভাল খেলায় এবং রান পাওয়ায় পরিচিতি বেড়েছে অনেক।  তা বুঝলাম ২২ রোজায় পাঞ্জাবী কিনতে গিয়ে।  বসুন্ধরা শপিং মলে আগে আরও অনেকবার গেছি। কেউই জিজ্ঞেসও করেনি। কিন্তু এবার পাঞ্জাবী কেনার সময় হলো নতুন অভিজ্ঞতা - বেশ কজন  তরুন ঘিরে ধরলেন, ‘আরে আপনি আল আমিন জুনিয়র না? আমি বললাম হ্যা। তারা কথা বললো। সেলফি তুললো। চমৎকার অনুভুতি।’ বোঝা যায় এবারের প্রিমিয়ার লিগে ভাল খেলার পুরষ্কার এটা।”‘তবে আমার দৃষ্টি অন্যত্র; ঈদের ছুটির সপ্তাহখানেক পর হাই পারফরম্যান্স ট্রেনিং প্রোগ্রাম। আমি এইচপিতে ডাক পেয়েছি। সেখানে কিভাবে ট্রেনিং করবো, নিজেকে আরও ওপরে তুলবো - এ চিন্তায় বিভোর।’আবুল মজিদ ‘আগের মত এবারো ঈদ করবো ময়মনিংহ শহরের নাটকঘর লেনে। আব্বা আম্মার সাথেই করবো। সবাই না হলেও ময়মনসিংহ শহরে শুভগত ভাই (শুভগত হোম), সৈকত (মোসাদ্দেক হোসেন) আর আমার কম বেশী পরিচিতি ছিল। কিন্তু এবার লিগে ভাল খেলার পর তার বিস্তৃতি ঘটেছে।’‘অনেকেই যেচে এসে কথা বলছেন। হাই হ্যালো করছেন। খোঁজ খবর নিচ্ছেন। উৎসাহ দিচ্ছেন। বলছেন লিগে ভাল খেলেছো। এখন জাতীয় দলে ঢোকার চেষ্টা করো। এমন অনুপ্রেরনাদায়ক কথাবার্তা শুনতে পাচ্ছি। বেশ ভাল লাগছে।’এআরবি/আরটি/এমএস

Advertisement