‘আর মাত্র ৪২ দিন পর ১৬ আগস্ট নিষেধাজ্ঞা মুক্তির দিন। তা ভেবে নিশ্চয়ই পুলকিত মোহাম্মদ আশরাফুল। মাঠে ফেরা নিয়ে তার ভাবনা কি? আবার ঘরের ক্রিকেটে ভাল খেলে সবার মন জয় করার ইচ্ছে কতটা প্রবল? খুব জানতে ইচ্ছে করছে তাই না? আশরাফুলের মুখ থেকেই শুনুন, ‘চিন্তা মানে? বলেন সার্বক্ষণিক ভাবনা। আমিতো মাঠে ফিরতে উন্মুখ। মাঠের ঘাস মারানো ছেলে অমি। মাঠ, ব্যাট আর বলই আমার বড় ভালবাসার ধন। তিন বছর পর সে প্রিয় ভবনে আবার ফিরতে পারবো- সেটা ভেবেই তো পুলকিত।’ কিন্তু তিন বছর সব ধরনের প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন। আর এখন বয়স ৩২ (আগামী ৭ জুলাই বৃহস্পতিবার তার ৩২তম জন্মদিন)। এ দীর্ঘ সময়ের বিরতি একটা বড় বাধা। মানসিক একটা বড় ধাক্কা ছিল সঙ্গী। সবচেয়ে বড় কথা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন। এসব হিমালয় সমান প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে পারবেন আবার আগের মত পারফর্ম করতে- এ প্রশ্ন সবার। জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে আশরাফুলের স্থির বিশ্বাস ও আস্থা ‘পারবো’। মাঠে ফেরার জন্য যা যা করণীয় তা করার সর্বাত্মক চেষ্টাই চলছে। সে অর্থে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক আসরে নিষিদ্ধ থাকলেও আমি কিন্তু ক্রিকেটের একদম বাইরে ছিলাম না। এক কথায় ক্রিকেট ছাড়িনি। টুক টাক খেলার মধ্যেই ছিলাম। দেশে এদিক ওদিক আরও বিদেশে আমন্ত্রণমূলক আসরে অংশ নিয়েছি। একটা সময় শ্রদ্ধেয় ইমরান স্যারের ( জাতীয় দলের সাবেক কোচ সারোয়ার ইমরান) কাছে প্র্যাকটিস করেছি। আর আমার বাসার কাছে নেটে সময় ও সুযোগ পেলেই দীর্ঘ সময় ব্যাটিং প্র্যাকটিস করেছি। এখন গোড়ান ক্রিকেট একাডেমিতে গিয়ে ব্যাটিং ও বোলিং প্র্যাকটিস করছি দুই ঘণ্টার বেশি সময় নিয়ে। আশিক ভাই (প্রাইম ব্যাংক ও জাতীয় মহিলা দলের সহকারি প্রশিক্ষক) আমাকে আন্তরিকভাবে সাহায্য করছেন। গত ১০ দিন ধরে রোজা রেখে রুটিন করে একদিন জিম ও পরদিন নেটে ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলন চলছে। ঈদের পর বিকেএসপি হেড কোচ ফাহিম স্যারের (নাজমুল আবেদিন) কাছে যাব। তার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় বুদ্ধি ও পরামর্শ নেব। সামনেই বিসিএল, আগামী ২০ সেপ্টেম্বর থেকে। ওই আসর দিয়েই মাঠে ফেরার আশা আশরাফুলের। বিসিএলে শেষবার খেলেছিলাম ওয়াল্টন মধ্যাঞ্চলের হয়ে। ‘এখনো কারো সাথে কথা হয়নি। আশা করছি কথা হবে।’ তা নয় হলো। মাঠে ফিরলেন। কিন্তু আবার সেই আশরাফুলের দেখা কি মিলবে? পারবেন মধ্য তিরিশে গিয়ে নিজেকে আবার খুঁজে পেতে? আশরাফুলের চিবুক সোজা ও চোয়াল শক্ত জবাব, ‘না পারার কি আছে?’ ‘মিসবাহ উল হক যদি ৪২ বছরেও পাকিস্তানের নেতৃত্ব দিতে পারে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারে, তাহলে আমি আরও অন্তত ৫/৬ বছর খেলতে পারবো না কেন? নিশ্চয়ই পারবো। আমি বিশ্বাস করি হোক তা ঘরের ক্রিকেট কিংবা আন্তর্জাতিক আসর- সেখানে খেলার প্রধান যোগ্যতা দুটি। ফিটনেস আর পারফরম্যান্স। ফিটনেস লেভেল যদি ঠিক থাকে আর পারফরম্যান্স যদি ভাল হয়, তাহলে না খেলার কি আছে? আমার স্থির বিশ্বাস, আমি পারবো। দেখবেন ঠিক পারবো।’ ‘ঘরের ক্রিকেটে না হয় পারবেন, জাতীয় দলে কি আর সুযোগ করে নিতে পারবেন? ‘এখনতো জাতীয় দলে ঢোকার লম্বা লাইন? পারবেন, সে লাইন ধরে জায়গা করে নিতে? ‘হ্যাঁ পারবো। আত্মবিশ্বাস আছে পারবো। আমার মূল স্বপ্ন সেটাই। আবার আমার দেশের হয়ে খেলা। লাল সবুজ জার্সি গায়ে ব্যাট হাতে নামা। ভাল খেলে সবার প্রশংসা কুড়োনো। সেটাই লালিত স্বপ্ন। এ স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে আছি। এ স্বপ্ন পূরণে সামর্থের সবটুকু উজার করে দেব। ‘জানি জাতীয় দলে সুযোগ পাবার পূর্বশর্ত থাকবে ঘরোয়া আসরে ভাল খেলা। সেটা প্রথম লক্ষ্য। সে লক্ষ্য পূরণ হলে আশা করি জাতীয় দলেও জায়গা করে নিতে পারবো।’ দেশ ও ক্রিকেট তাকে অনেক দিয়েছে। জাগো নিউজের সঙ্গে নিবিড় ও একান্ত আলাপের শেষ অংশে আশরাফুলের শেষ কথা, ‘জাতীয় দল ও দেশের কাছে আমার যে অনেক দায়। ক্রিকেট আমাকে অনেক দিয়েছে। অর্থ-খ্যাতি যশ সব পেয়েছি। দেশের মানুষের বুক ভরা ভালবাসা আর সমর্থনও পেয়েছি। কিন্তু ভুল পথে হেটে আমি অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলেছি। বলতে পারেন, এখন শূন্য হাতে দাঁড়িয়ে।’ ‘জানি এখান থেকে আবার ফ্রেশ গার্ড নিতে হবে। শুরু করতে হবে নতুন করে। ভিতরে অপরাধ বোধ নিয়েই বলছি , আমি সৌভাগ্যবান। স্রষ্টা আমাকে আবার মাঠে ফেরার সুযোগ দিয়েছেন। অনেকের ভাগ্যে তা হয় না। আমার শেষ কথা, আর কেউ যেন আমার মত ভুল না করেন। ম্যাচ পাতানোর মত কোন অন্যায় ও অনৈতিক পথে পা না বাড়ান।’ ‘আমার বিশ্বাস, আমার ওপর জমে থাকা যত রাগ- ক্ষোভ ও অবিশ্বাস কেটে যাবে। তার আগে আমাকে মাঠে ফিরে ভাল খেলতে হবে। যদি ভাল খেলতে পারি, আবার আমার ব্যাট কথা বলে, তখন সবাই বলবেন, ‘আরে এ যে নতুন আশরাফুল!’ ‘আমি সেই নতুন আশরাফুল হবার স্বপ্ন দেখি। এই রোজায় পাঁচ ওয়াক্ত এবং তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে মহান আল্লাহ পাকের কাছে সে দোয়াই চাচ্ছি।’ এআরবি/আরটি/জেএইচ/এমএস
Advertisement