এক সময় মনে হচ্ছিল ‘আশরাফুল উপাখ্যান’ শেষ। বাংলাদেশের ক্রিকেটে উল্কার মত যার আবির্ভাব, অভিষেকে সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান হবার অসামান্য কৃতিত্ব ও দুর্লভ রেকর্ড যার- সেই অসাধারণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার যখন ম্যাচ গড়াপেটার কথা অকপটে স্বীকার নিষিদ্ধ হন, তখনতো অমন হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু চরম সত্য হচ্ছে, বাংলা সাহিত্যের ছোট গল্পের মত আশরাফুল উপাখ্যান শেষ হয়ে শেষ হয়নি। হবেও না। বরং শিগগিরই আশরাফুলকে ঘিরে লেখা হবে নতুন গল্প। যার পরতে পরতে থাকবে এক অসামান্য প্রতিভাবান ক্রিকেটারের অনৈতিক পথ থেকে আবার ন্যায়ের পথে ফেরার কঠিন সংগ্রামের কাহিনী। সব কিছু ঠিক থাকলে আর ৪২ দিন পর শুরু হবে এ নন্দিত-নিন্দিত ক্রিকেটারের নতুন পথচলা। অগণিত আশরাফুল ভক্ত উন্মুখ হয়ে আছে প্রিয় ক্রিকেটারের নতুন জীবন দেখতে। আশরাফুল নিজেও অপেক্ষার প্রহর গুনছেন; কবে আসবে সেই শুভ দিন ( ১৬ আগস্ট)। আঁধার কেটে আবার আলোয় ফেরার মিলবে সুযোগ। সেই শুভক্ষণের কথা ভেবে ভেবেই চলছে সময়। ২০১৩ সালের ৮ মে বুলাওয়েতে লাল সবুজ জার্সি গায়ে জিম্বাবুয়ের সাথে শেষ ওয়ানডে খেলা। সে বছরই বিপিএল ফাইনালে সিলেটের বিরুদ্ধে ঘরের ক্রিকেটে শেষ মাঠে নামা। তারপর ম্যাচ গড়াপেটায় যুক্ত থাকার অভিযোগে নিষিদ্ধ হয়ে মাঠের বাইরে ছিটকে পড়া। সে বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাজার মেয়াদ কমে ৫ বছরে নেমে আসে। সঙ্গে আরও দুই বছর কম শাস্তি শিথিলের একটি সুযোগ। আর তাতেই মিলেছে আগামী ১৬ আগস্ট। নিষেধাজ্ঞামুক্ত আশরাফুলের আবার মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে ক্রিকেট আকাশে ওড়ার সুযোগ। আশরাফুল আবেগতাড়িৎ। তাইতো নিষেধাজ্ঞা কেটে যাবার দিনক্ষণের হিসাব ভুলে ১৬’র বদলে ১৩ আগস্ট গুণতে শুরু করেছেন। সোমবার বিকেলে জাগো নিউজের সাথে দীর্ঘ সময়ের একান্ত আলাপের শুরুতেই ওই ভুল দিনের উল্লেখ, ‘আমার পরিবার, ভক্ত-সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীরা অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। আমিও উন্মুখ হয়ে আছি ১৩ আগস্ট কবে আসবে? সেই দিন। সে শুভক্ষণের কথা ভেবেই কাটছে সময়। ’ ‘মাঝের তিন বছর কেমন কেটেছে? ’ ক্রিকেটপাগল আশরাফুলের দীর্ঘশ্বাসযুক্ত জবাব, কি আর বলবো? ক্রিকেট যার ধ্যান জ্ঞান, সেই ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ আমি মাঠে নিষিদ্ধ- কেমন থাকতে পারি বুঝে নিন।’
Advertisement
এ দীর্ঘ তিন বছরে দুটি করে ছয়টি ঈদ এসেছে খুশির বারতা নিয়ে। চলেও গেছে। কেমন ছিল আশরাফুলের ওই ঈদের দিনগুলো? আমি ভালই ছিলাম। কিন্তু মনে একটা কাটা বিধতো সব সময়। একটা অপরাধ বোধ তাড়া করে ফিরতো। আগের সেই উচ্ছলতা ও চপলতা স্থবির হয়ে এসেছিল। ঈদে অন্য সময় মনের আনন্দে বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি, তার অনেকটাই হয়নি। বলতে পারেন, নিজেকে গুটিয়ে রাখতে হয়েছে। আর এর মধ্যে একটি ঈদতো পবিত্র হজব্রত পালনে কেটেছে। আর গতবার রোজার ঈদ করেছি যুক্তরাষ্ট্রে। রোজার মধ্যে খেলতে গিয়েছিলাম। সেখানেই ঈদ করেছি। ’ এবারের ঈদ সম্পর্কে কিছু বলুন? এটা কি আশরাফুলের স্পেশাল ঈদ? স্মিত হেসে। বলতে পারেন, অনেক কারণেই এবারের ঈদ অন্যরকম। বিয়ের পর প্রথম ঈদ। আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। তার কোল জুড়ে ফুটফুটে এক সন্তান আসবে- সেই আশায় প্রহর গুনছি। সেটা এক অন্যরকম ভাললাগা। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমার নিষেধাজ্ঞা মুক্ত হবার বিষয়। সব মিলে এবারের ঈদ অন্যরকম খুশি আর আনন্দের বার্তা নিয়েইে আসছে আশা করি।’ এআরবি/আরটি/জেএইচ/এমএস