রাজধানীর গুলশানে গত শুক্রবার হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় ঘটে গেল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার জিম্মিদশার ঘটনা। জঙ্গিদের দ্বারা বাংলাদেশি ও বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় শোকে ভাসছে দেশের মানুষ। রাষ্ট্রীয়ভাবেও দুদিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে।এই ঘটনাটি গেল দুদিন ধরে বিশ্বের সবখানেই আলোচিত। উঠেছে নিন্দার ঝড়ও। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পাশাপাশি বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আজ রোববার (৩ জুলাই) একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি লিখেছেন, ‘দেশটা ভারত নিয়ে নিলো? ইসলাম ধর্মকে ধ্বংস করার চক্রান্ত নিয়ে মাঠে নেমেছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ? যারা প্রাণ হারিয়েছে, তাদের ছবিগুলোর দিকে তাকাতে পারি নাই। এইসব বিকৃত লাশের ছবি দেখার পরও কীভাবে আমরা গাইব- এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি? বিদেশিরা যখন জানতে চায় বাংলাদেশ কি আফগানিস্তান হতে চলেছে, তখন আমাদের গলায় আর কত দিন জোর পাবো বলতে- না? কতটা পৈশাচিক হলে মানুষ এই কাজ করতে পারে?’ফারুকী হামলাকারীদের নিয়ে তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘এরপর আমি পিশাচদের দেখতে গেলাম ফেসবুকে। আমি দেখি, আমি অন্ধ। পিশাচ খুঁজি, প্রোফাইলে ভাসে একদল হাস্যোজ্জ্বল তরুণ, যারা মায়ের সাথে, বোনের সাথে, বন্ধুর সাথে মায়াভরা চোখে পোজ দেয়, যারা পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণই মূল্যবান বলে পোস্ট দেয় কয় মাস আগেও। কে তাদের এত দ্রুত মানুষ থেকে অমানুষ বানাল? কী বলে তাদের ব্রেনওয়াশ করল, ওদের ভেতরের কোন ক্ষোভকে পুঁজি করল? সামনে এদেরই মতো আরো কাউকে যখন ব্রেনওয়াশ করবে কোন ক্ষোভের দাবানলকে পুঁজি করবে?ওহে তরুণ, তোমার কানের কাছে যারা এইসব বলবে তাদের প্রশ্ন করো, ‘এইসব করলে কি দেশ উদ্ধার হবে নাকি আরো বিপদে পড়বে?’ প্রশ্ন করো এইসব বিকৃত লাশ আর ‘আল্লাহু আকবর’ ডাক দিয়ে করা নিষ্ঠুর খুন কি ইসলামের ইমেজ বৃদ্ধি করবে না ধ্বংস করবে? মনে রাখবা, তুমি যখন ছোট ছিলা তখন তোমার বাবা-মাকে তোমার দরকার ছিল। এখন তুমি যখন বড় হচ্ছো তোমার বাবা-মায়ের তোমাকে খুব দরকার। তাদের হাত ধরে যেমন তুমি হাঁটা শিখেছিলে, তাদেরও এখন তোমার হাতটা দরকার। তুমি যখন জড়ানো পায়ে হাঁটতে, তারা একমুহূর্তের জন্যও তোমার হাত ছাড়ত না, যাতে তুমি পড়ে না যাও। সেই তুমি কীভাবে আজকে তাদের হাত ছেড়ে দিবা?তোমাকে তাদের দরকার। তোমাকে তোমার বোনের দরকার, ভাইয়ের দরকার, বান্ধবীর দরকার, এমনকি যে দেশ আর ধর্ম রক্ষার জন্য তুমি জীবন দিতে চাও সেই দেশ এবং ধর্মেরও তোমাকে দরকার। তুমি না থাকলে সুন্দরবন বাঁচাবে কে? ট্রানজিট মাশুল নির্ধারণের নামে যে হাস্যকর ফি ধার্য করা হলো, এটার যুক্তিযুক্ত প্রতিবাদ কে করবে? আমাদের সাগরে চোখ পড়েছে পশ্চিম-পূর্ব সকলের। তোমার সজাগ উপস্থিতি ছাড়া কে বাঁচাবে আমাদের সাগর। তুমি তো দেশ বাঁচাতেই চাও। তাহলে তোমাকেই তো থাকতে হবে। তোমার জীবন অদরকারী নয়, যেমন অদরকারী না তোমার ছুরির আঘাতে ওই পাড়ে থাকা জীবনটাও।’এলএ/এমএস
Advertisement