রোনালদো মানে সাফল্য, রোনালদো মানে ব্যর্থতা। একই সঙ্গে বয়ে চলেছে তার ফুটবল ক্যারিয়ারে। একদিকে ক্লাব ফুটবলে রোনালদোর সাফল্যের বন্যা বয়ে যায়। তিন তিনবার জিতেছেন ব্যালন ডি’অর। তিনবার পেয়েছেন ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট। সেই রোনালদো দেশের হয়ে যখন খেলতে নামেন, তখন দলকে বড় কোন আসরে শিরোপা এনে দিতে হচ্ছেন লক্ষ্যভ্রষ্ট। স্প্যানিশ লা লিগায় বার্সেলোনার কাছে শিরোপা হারিয়ে টেবিলে দ্বিতীয় হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদকে। অথচ লিগ শিরোপা জিততে ব্যর্থ হলেও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো কিন্তু একেবারে খালি হাতে ফেরেননি। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে রিয়াল মাদ্রিদ তারকা পুরো মৌসুমে ছুটেছেন নিজের মতোই। লিগের ফুটবল ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা ছয় মৌসুমে ৫০ কিংবা তার বেশি গোল করার রেকর্ড গড়েন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে রিয়ালে যোগ দেয়ার পর দ্বিতীয় মৌসুমে (২০১০-২০১১) রিয়ালের জার্সিতে ৫৩ গোল করেছিলেন পর্তুগিজ তারকা। এর পরের পাঁচ মৌসুমে রোনালদোর গোলের হিসাবটা অবিশ্বাস্য: ৬০, ৫৫, ৫১, ৬১, ৫১। অর্থাৎ তিনিই একমাত্র ফুটবলার, যিনি টানা ৬টি মৌসুম ক্লাবের জার্সিতে ৫০ কিংবা তারও বেশি গোল করেছেন। বার্সার কাছে স্প্যানিশ লা লিগা শিরোপা হারানোর সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার পিচিচি অ্যাওয়ার্ডটাও একটুর জন্য হারাতে হয় রোনালদোকে; কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এক মৌসুমে ১৬ গোল করে দলকে একাদশতম শিরোপা এনে দিতে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ক্লাবের হয়ে এত সাফল্যের মাঝে জাতীয় দলের জার্সিতে ঠিক ততটাই ম্লান রোনালদো। তবে রোনালদো তো রোনালদোই। সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার, কারও কারও মতে ইতিহাসেরও অন্যতম সেরা। শুধু এই ইউরোতেই নয়, যে কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে পর্তুগালের সাফল্য আসলে নির্ভর করে রোনালদোর সাফল্যের ওপর। ক্লাব ফুটবলের আরো কিছু খেলোয়াড় পর্তুগাল দলে থাকলেও রোনালদোর ধারে-কাছে নেই কেউই। অথচ এই ইউরোতে এখনো প্রকৃত রোনালদো ‘শো’ দেখার সৌভাগ্য হয়নি ফুটবলপ্রেমীদের। এই হাহাকার শুধু সমর্থকদের মধ্যেই নয়, নিজের দলের মধ্যেও। কারণ তার পারফরম্যান্সের ওপরই নির্ভর করে দলের সাফল্য। তাই ‘এফ’ গ্রুপে মোটামুটি সহজ প্রতিপক্ষ পেয়েও জ্বলে উঠতে পারেনি রোনালদোর পর্তুগাল। এর মূল কারণ তার নিজের ব্যর্থতা। নিজেদের প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ গোলের ড্রয়ের পর অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে জয়ের সুযোগ নিজে থেকে ছেড়ে দিয়েছে পর্তুগাল। স্পষ্ট করে বলতে হয় ছেড়ে দিয়েছেন রোনালদোই। তবে চেষ্টার অবশ্য কোনো ঘাটতি ছিল না তিনবারের বর্ষসেরার। প্রথম দুই ম্যাচে ২০ বারের বেশি লক্ষ্য বরাবর শট নিয়ে তা থেকে গোল করতে পারেননি একটিও। আসরে দ্বিতীয় ম্যাচে তিনি নায়ক হতে পারতেন। অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের ৭৯তম মিনিটে আসে সেই সুযোগ। পেনাল্টি থেকে গোলরক্ষককেও বোকা বানিয়ে ফেলেছিলেন উল্টো দিকে মেরে; কিন্তু তার নেয়া স্পট-কিক ফিরে আসে বারে লেগে।দুই ম্যাচে ড্রয়ের পর সমর্থকদের মনের অবস্থাটাও বুঝতে পেরেছিলেন পর্তুগিজ অধিনায়ক ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ভক্তকূলকে ভরসা রাখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন রিয়াল মাদ্রিদ প্রাণভোমরা। অঙ্গীকার করেছিলেন স্বরূপে ফিরবেন, দলকে নিয়ে যাবেন নকআউট পর্বে। কথা রেখেছেন রোনালদো। প্রয়োজনের মুহূর্তে ঠিকই জ্বলে উঠলেন ‘সিআর সেভেন’। পর্তুগিজ যুবরাজ ফিরলেন ডাবলস নৈপুণ্যে। তার দলও জায়গা করে নিয়েছে শেষ ষোলোতে। আর পরের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে কোয়ার্টারেও জায়গা করে নিয়েছে রোনালদোর পর্তুগাল। শেষ চারে পৌঁছাতে বাধা ছিল লেভানডভস্কির পোলান্ড। এ বাধা টাইব্রেকারের মাধ্যমে পেরিয়ে এখন রোনালদোরা সেমিফাইনালে রোনালদোর মুখোমুখি হয়ে যাচ্ছেন গ্যারেথ বেল। পর্তুগালের বেল বাধা পেরুতে হলে জ্বলে উঠতে হবে দলের সেরা তারকা রোনালদোকেই।জাগো চ্যাম্পিয়নের ৬ষ্ঠ সংখ্যা পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে আইএইচএস/এবিএস
Advertisement