গুলশানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞে উদ্বিগ্ন-শঙ্কিত গোটা জাতি। নাগরিক জীবনে এ নারকীয় ঘটনা কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, এর সুদূরপ্রসারী ফল কী হবে? তা সময়ই বলে দেবে। তবে ক্রিকেট অনুরাগীরা চিন্তিত, দেশের ক্রিকেটের ওপর ওই ঘটনার যথেষ্ট নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু ক্রিকেটপ্রেমীদের কথা বলা কেন? খোদ বোর্ড (বিসিবি) কর্মকর্তারাই চিন্তিত।‘আমরা চিন্তিত। কয়েক মাস পরই ইংল্যন্ডের পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে আসার কথা। এ ঘটনার পর ইংলিশরা আসতে চাইবে কি না? তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করাই যায়’।বিসিবি মুখপাত্র, মিডিয়া কমিটি চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসের এমন মন্তব্যই বলে দেয় বোর্ডের ভেতরে এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড একটা সংশয়ের জাল ফেলে দিয়েছে। এদিকে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এবং বিসিবি প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দীন চৌধুরী সুজন আইসিসির বার্ষিক সাধারণ সভায় অংশ নিতে এখনো স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় অবস্থান করছেন। রোববার না হয় সোমবার তাদের দেশে ফেরার কথা। ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ড কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই তাদের সঙ্গে সাক্ষাতে কোনরকম নেতিবাচক কথা বলেছেন কি না, তা এখনো জানা যায়নি। তারা দেশে ফিরলে জানা যাবে। তবে বিসিবি পরিচালক জালাল ইউনুস এখনই ইংল্যান্ডের সফর নিয়ে নেতিবাচক চিন্তায় যেতে নারাজ। তার ব্যাখ্যা, ‘ইংল্যান্ডের পূর্বনির্ধারিত বাংলাদেশ সফরের এখনো বাকি তিন মাস। কাজেই এত জলদি নেতিবাচক চিন্তা করা ঠিক হবে না। তবে ইংলিশরা গুলশানে ঘটে যাওয়া অনভিপ্রেত প্রাণ সংহারের ঘটনায় যে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করবে, তা এখনই বলে দেয়া যায়।’ জালাল ইউনুস একা নন। বিসিবির আরেক পরিচালক আকরাম খানও রয়েছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা ও আন্তর্জাতিক সফরসূচি নির্ধারণ যে কমিটির মূল কাজ, সেই ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি প্রধানও চিন্তিত। তার একটাই কথা, ‘অবশ্যই এ ঘটনার নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা আগে থেকেই ‘নাচুনী বুড়ি।’ একটু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, হরতাল-অসহযোগ আন্দোলন হলেই তারা বাংলাদেশে আসতে চায় না। সফর বাতিল করে দেয়। সেখানে এত বড় পৈশাচিক ও বর্বরোচিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর অন্যান্য টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করবে। তাদের সঙ্গে বোর্ডের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে, সরকারি পর্যায় থেকে পূর্ণনিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। তবেই না আসার প্রশ্ন।’ জাগো নিউজের সাথে আলাপে আকরাম খান আরও কিছু কথা বলেছেন। যার ভাব এরকম, এমন ঘটনা জনগণের নিরাপত্তায়ই শুধু হুমকি নয়, বহির্বিশ্বে আমাদের ইমেজের জন্যও কুঠারাঘাত। আমাদের ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকাণ্ড পরিচালনা, বিশেষ করে সফরগুলো যথাযথভাবে আয়োজনের পথেও বড় ধরনের বাধা। যেখানে বেশ কজন ভিনদেশীর জীবন নাশ ঘটেছে, সেখানে একটা দেশের জাতীয় দল পুরো সিরিজ খেলার আগে দশবার ভাববে। বিসিবির দুই পরিচালক জালাল ইউনুস ও আকরাম খানের শেষ কথা, যেহেতু এখন পর্যন্ত কোন বোর্ডই আমাদের (বিসিবির) সঙ্গে যোগাযোগ করে নেতিবাচক কথা বলেনি। সেখানে আমরা তো আর বেচে যোগাযোগ করতে পারি না। সেটা হিতে বিপরীত হতে পারে। তার চেয়ে আমরা আপাতত অপেক্ষা ও পরিস্থিতির নিবিড় পর্যবেক্ষণ করাকেই উত্তম কাজ বলে মনে করি। উল্লেখ্য, এর আগে গত বছর সেপ্টেম্বরে গুলশানে ইতালি নাগরিক সিজার তাবেল্লা নিহত হওয়ার জের ধরে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলার ধুয়ো তুলে বাংলাদেশ সফর বাতিল করে অস্ট্রেলিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকার নারী দলও একই পথে হাঁটে। সেখানে এবার সত্যি সত্যিই সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হামলা- তার জের ধরে ইংল্যান্ড সফর বাতিল করলে কিংবা সাময়িকভাবে পিছিয়ে দিলে অবাক হবার কিছুই থাকবে না। বিসিবির চিন্তার আরও কারণ আছে। বাংলাদেশের জাতীয় দলের হেড কোচ, ফিল্ডিং কোচ, স্পিন কোচ, ট্রেনার এবং এইচপির কোচও বিদেশি। তাদের যে কেউ এখন নিরাপত্তার ধুয়া তুলে কাজ বাদ দিয়ে দেশে ফিরতে চাইতে পারেন। তবুও রক্ষা, বর্তমান হেড কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে ট্রেনার ভিল্লাভারায়ন ও স্পিন কোচ রুয়ান কালপাগে- সবাই শ্রীলঙ্কান।গুলশান ট্র্যাজেডির পর ইংলিশ বা অস্ট্রেলিয়ান হলে তাদের ধরে রাখা সত্যিই কঠিন হতো। তারপরও কেউ যে কোন অজুহাত দাঁড় করাবেন না, সেটাই বা কি করে বলা যায়? এআরবি/আইএইচএস/এবিএস
Advertisement