জমিসংক্রান্ত জটিলতায় ঝুলে গেছে ১৪২ তলাবিশিষ্ট স্বপ্নের আইকন টাওয়ার নির্মাণ। এছাড়া টাওয়ারের উচ্চতা নিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের অনাপত্তি এবং আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং সম্পন্ন না হওয়ায় আইকন টাওয়ারের নির্মাণ কাজ শুরু নিয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।সূত্র জানায়, সুউচ্চ আইকন ভবন নির্মাণে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যানেও কিছুটা সংশোধন আনা হচ্ছে। তবে টাওয়ারটির উচ্চতা দুই হাজার ফুটের বেশি হওয়ায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন কর্তৃপক্ষের অনাপত্তিপত্র ইতোমধ্যেই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) দিয়েছে। এছাড়া পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং (মতামত) প্রয়োজন। যা এখনো সম্পন্ন হয়নি। এসব কারণেও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কেপিসি গ্রুপের সঙ্গে গত ১২ জুন চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভবিষ্যতে যাতে কোনো আইনি জটিলতার সৃষ্টি না হয় সেজন্য গত ২৮ জুন আন্তর্জাতিক নিলাম আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় রাজউক। কিন্তু জমিসংক্রান্ত জটিলতাসহ পুরো প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ থাকায় নিলাম করতে পারেননি রাজউক। এ বিষয়ে রাজউকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আতিক জাগো নিউজকে বলেন, ২৮ জুন নিলামের দিন নির্ধারণ হয়েছিলো। কিন্তু নানা জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি। এরপর বিষয়টির আর কোনো অগ্রগতি নেই। সূত্র জানায়, নিলামে যখন হবে তখন আন্তর্জাতিক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও অংশ নিতে পারবে। নিলাম প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রকল্প এলাকার প্রযুক্তিগত সমীক্ষার (টেকনিক্যাল স্টাডি) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট), ব্যুরো অব রিসার্চ ও টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেশন বিভাগকে। জানা গেছে, দেশে একটি বহুতল ভবন নির্মাণসহ পরিপূর্ণ উপশহর তৈরিতে গত দুই বছর ধরে কেপিসি গ্রুপের চেয়ারম্যান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কালী প্রদীপ চৌধুরীর সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর একাধিক বৈঠক হয়েছে। সূত্র জানায়, প্রথমে কেরানীগঞ্জে ভবনটি নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু ভূমির অবস্থা বিচারে তা বাতিল হয়। অতপর গত সেপ্টেম্বরে কেপিসি’র পক্ষে অর্থমন্ত্রী ১০০ একর জায়গার ওপর মূল ভবনসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাগুলো নির্মাণে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দেয়। এর প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় নভেম্বরে পূর্বাচলের সিবিডি অংশে ওই জায়গা দিতে রাজি হয়। কিন্তু দামের বিষয়ে বনিবনা না হলে পিছু হটে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কেপিসি গ্রুপই আইকন টাওয়ার নির্মাণ করবে। তবে জমি সংক্রান্ত বিষয়গুলোর এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তাই আপাতত চুক্তিটি পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, রাজধানীর অদূরে জলসিঁড়িতে প্রস্তাবিত দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ ১৪২ তলা ‘আইকন টাওয়ার’ নির্মাণের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন। সুতরাং যত দ্রুত সম্ভব কেপিসির সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এ টাওয়ারের নকশা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে ভবনের দিকে তাকালে মুক্তিযুদ্ধের কথা মনে পড়বে। এটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে দুই পাশ থেকেই ‘৭১’ লেখা ফুটে উঠবে। সুউচ্চ ভবনটি ছাড়াও এটিকে ঘিরে আরো কিছু ছোট-বড় ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা থাকবে। এ প্রকল্পে পূর্বাচলের ১৯ নম্বর সেক্টরে সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট বা সিবিডি অংশে একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার ও স্টেডিয়াম তৈরি হবে। দুটি প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা)। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) দুই হাজার ফুটের বেশি উচ্চতার এই ভবন ২০১৮ সালের মধ্যে নির্মাণ শেষ হতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এমইউএইচ/এসকেডি/এমএস
Advertisement