‘দীর্ঘদিন পরে অইলেও শেখের বেডি যে আমগরে খবর নিল, এইডা বুলবার নয়। সোয়ামি হারাইয়া যে দুঃখ-কষ্ট পাইছিলাম, আজ শেখের বেডির সম্মান আতে পাইয়া সব দুঃখ-বেদনা ভুইল্লা গেছি।’ কাঁদতে কাঁদতে শাড়ির আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে কথাগুলো বললেন বীরাঙ্গনা মোছা. আয়শা খাতুন। দেশ স্বাধীনের ৪৪ বছর পর ‘নারী মুক্তিযোদ্ধা’ সম্মাননা পেলেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার রাঙ্গামাটি খাটুয়াপাড়া গ্রামের শহীদ বাদশা মিয়ার স্ত্রী আয়শা খাতুন। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর বীরকন্যাপল্লীর (আগের নাম বিধবাপল্লী) চারজন এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার রাঙ্গামাটি খাটুয়াপাড়া গ্রামের তিনজনসহ জেলায় সাতজন বীরাঙ্গনা নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছেন।গেজেটভুক্ত হওয়া পাকহানাদার বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত এসব নারী মুক্তিযোদ্ধাকে গত জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে একত্রে ছয় মাসের নারী মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা ভাতা দেয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা ভাতাপ্রাপ্ত বীরাঙ্গনা হলেন- সোহাগপুর বীরকন্যাপল্লীর শহীদ ফজর আলীর স্ত্রী জবেদা বেওয়া, শহীদ বাবর আলীর স্ত্রী জোবেদা বেওয়া, শহীদ কাইঞ্চা মিয়ার স্ত্রী আছরন বেওয়া, শহীদ আব্দুল লতিফের স্ত্রী হাসেন বানু এবং রাঙ্গামাটি খাটুয়াপাড়া গ্রামের শহীদ বাদশা মিয়ার স্ত্রী আয়শা বেওয়া, তমিজ উদ্দিনের স্ত্রী শরফুলি বেগম ও মোজাফফর আলীর স্ত্রী বিবি হাওয়া। ঝিনাইগাতী উপজেলার রাঙ্গামাটি খাটুয়াপাড়া গ্রামের তিন নারী মুক্তিযোদ্ধার হাতে ৬০ হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতার চেক বিতরণ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম রেজা। ২৭ জুন সোমবার ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদ হলরুমে এ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আমিরুজ্জামান লেবু, সহ-সভাপতি মো. জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওমর আলী, আ. হাকিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আ. হালিম।আরও উপস্থিত ছিলেন বন ও পরিবেশ সম্পাদক নজরুল ইসলাম দুলাল, প্রচার সম্পাদক মজিবুর রহমান, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা সাকলাইন মো. আবু সালেহ, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম ভূগোল, উপ-প্রচার সম্পাদক মো. ফিরোজ মিয়া ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী মিনারা খাতুন প্রমুখ। নালিতাবাড়ীর চার বীরাঙ্গনা নারী মুক্তিযোদ্ধার হাতেও আগামীকাল (৩০ জুন) বৃহস্পতিবার মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা ভাতার চেক তুলে দেয়া হবে ইউএনও অফিস সূত্রে জানা গেছে। চেক হাতে পেয়ে আবেগোপ্লুত বীরাঙ্গনা বিবি হাওয়া বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর মাইয়া দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৪ বছর পরে আমগরে যে সম্মান দিলো তা আমি আমার সারাজীবনেও ভুলবো না। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, শেখের বেডি হাসিনারে যেন আল্লায় অনেক দিন বাঁচাই রাহে।’ সেদিনের সেই বিভৎস ঘটনার কথা স্মারণ করে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনাগুলার কতা মনে অইলে এহনো আমাগো কাঁন্দন পায়। বছর ঘুইরা ওই দিন আইলেই মনে পইরা যায় পাকিগরে তাণ্ডবলীলার কতা। কি অত্যাচারডাইনা আমগরে শরিলের ওপর চালাইছে। খোদায় যেন ওই নরপশুগরে বিচার করে।’ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার আবু সালেহ মো. নূরুল ইসলাম হিরু বলেন, শেরপুর জেলা প্রথম দফায় সোহাগপুর ট্র্যাজেডির বীরকন্যাপল্লী ও কাটাখালী ট্র্যাজেডি রাঙ্গামাটিয়া খাটুয়াপাড়া গ্রামের ৭ জন বীরাঙ্গনা নারী মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা ভাতার গেজেটভুক্ত হয়েছেন। আরও কয়েকজনের নাম তালিকায় রয়েছে।পর্যায়ক্রমে তারাও তালিকাভুক্ত হবেন বলে আশা করি। দীর্ঘদিন পর এসব বীরাঙ্গনা তাদের প্রাপ্য মর্যাদা ফিরে পেলেন। সরকার এসব বীরাঙ্গনাকে সম্মান জানানোয় আমরা সংসদের পক্ষ থেকে তাদের অভিনন্দন জানাই। হাকিম বাবুল/এসএস/এবিএস
Advertisement