বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের ৬৮টি কারাগারে ৭০ হাজারেরও বেশি বন্দি রয়েছে। কারাগারে বন্দি এসব কয়েদি হাজতিদের অর্ধেকই মাদকাসক্ত বলে জাগো নিউজের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।হাজার হাজার বন্দির মধ্যে শতকরা কতভাগ মাদকাসক্ত ও তারা কি ধরনের মাদক গ্রহণ করে এ সংক্রান্ত সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে জরিপ বা সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে কারা অধিদফতর ও একাধিক কারা কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, কারাবন্দিদের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা অর্ধেকের বেশি ছাড়া কম হবে না।নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারা অধিদফতর ও একাধিক কারা কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও কারাবন্দিদের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা অর্ধেকের চেয়ে বেশি হবে। সম্প্রতি কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি বন্দি রয়েছে। মাদকাসক্ত বন্দিদের কারণে যে কোনো সময় অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, কারাগারগুলোতে অভিনব উপায়ে ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল, ঘুমের ট্যাবলেট ও নেশাজাতীয় ইনজেকশন প্রবেশ করছে। কারাগারগুলোর প্রবেশপথে তল্লাশি ও ভেতরে নজরদারির মধ্যেও নানা অপকৌশল ও কারারক্ষীদের ম্যানেজ করে মাদক ঢুকছে।কারাগারগুলোতে মাদকাসক্তদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করেন তারা। কীভাবে কারাগারে মাদক প্রবেশ করছে জানতে চাইলে কারা অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা একটি বাস্তব ঘটনা তুলে ধরে বলেন, সম্প্রতি কক্সবাজারে ইয়াবার চালানসহ মিয়ানমারের কয়েকজন নারী পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। মিয়ানমার হয়ে কক্সবাজারে অবাধে ইয়াবার চালান আসে এ অভিজ্ঞতা থেকে কারা কর্তৃপক্ষ নারীদের বিশেষ কায়দায় উঠবস করান। এক পর্যায়ে তাদের গোপণাঙ্গ থেকে একাধিক ইয়াবার প্যাকেট বের হয়ে আসে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, যারা নেশাগ্রস্ত তারা নানা উপায়ে মাদকদ্রব্য বিশেষ করে সম্প্রতি ইয়াবা কারা অভ্যন্তরে প্রবেশ করাচ্ছে। কারাগার থেকে আদালতে যেসব বন্দি মামলায় হাজিরা দিতে যায়, তারা কখনও জুতার সোলে, কখনও শার্টের কলারের ভাজে, হাতায় ও প্যান্টের কোমড়ের অংশে ইয়াবা লুকিয়ে আনে। কখনও কখনও কারারক্ষীদের যোগসাজশেও মাদক প্রবেশ করে। সম্প্রতি এ প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে রাজধানীর চাঁনখারপুলে বন্দিদের একটি গাড়িতে ছোট ছোট সাদা কাগজে মোড়ানো মাদক ছুড়ে দিতে দেখা যায়। এ সময় বহনকারী গাড়িটি ধীরগতিতে চলছিল। অভিযোগ রয়েছে, যেসব পুলিশ ভ্যানে থানা থেকে আসামিদের কারাগারে আনা হয় কিংবা আদালতে আনা-নেয়া করা হয়, সেসব ভ্যানের পুলিশের যোগসাজশে মাদক কারাগারে আসে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ বিভিন্ন কারাগারে প্রতিদিন মাদকের লাখ লাখ টাকার কেনাবেচা হয়।মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে সোমবার (২৭ জুন) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান খানও মাদকের ভয়াবহ প্রকোপে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।তিনি বলেন, আকারে ছোট, সহজে বহনযোগ্য ও ব্যবসায় লাভ বেশি হওয়ায় ইয়াবা মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকাসক্তদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেছে। শুধু আইন বা সাজা দিয়ে মাদকের অপব্যবহার বন্ধ করা যাবে না মন্তব্য করে তিনি সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রতি আহ্বান জানান।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, ২০১৪ সালে ৬৫ লাখ ১২ হাজার ৮৬৯ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। ২০১৫ সালে উদ্ধারকৃত ইয়াবার পরিমাণ তিনগুণের বেশি অর্থাৎ ২ কোটি ২৬ লাখ ৯ হাজার ৪৫ পিস। একই সময় ফেনসিডিল, কোকেনসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য উদ্ধারের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। আটকের পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি মাদক দেশের বাজারে প্রবেশ করছে। কারা অধিদফতরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. আবদুল্লাহ আল মামুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের কারাগারে অর্ধেকই মাদকাসক্ত এমন তথ্য জানা নেই। তবে কারাগারে মাদকাসক্ত রয়েছে। তিনি বলেন, হত্যা, খুন, ধর্ষণ মামলার আসামিরাই কারাগারে বন্দি থাকে। তারা মূলত টাকা-পয়সার জন্যই অপরাধে সম্পৃক্ত হয়। অপরাধীদের একটি বড় অংশ মাদকের টাকা জোগাড় করতেই অপরাধ করে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এমইউ/এআরএস/একে/এবিএস
Advertisement