সৃষ্টিশীল মানুষ দু’ধরণের সম্পদ নিয়ে শিক্ষিত জীবন যাপন করে; প্রথমত বস্তুগত সম্পদ-জায়গাজমি, গাড়ি-বাড়ি, টাকা পয়সা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প কারখানা ইত্যাদি ও নানারকম প্রাত্যহিক ব্যবহার্য দ্রব্যাদি এবং দ্বিতীয়ত মেধাসম্পদ বা Intellectual Property এর আওতায় আছে- সাহিত্যকর্ম, নাট্যকর্ম, শিল্পকর্ম, সঙ্গীতকর্ম, অডিও-ভিডিওকর্ম, চলচ্চিত্রকর্ম, ফটোগ্রাফি, ভাস্কর্যকর্ম, সস্প্রচারকর্ম ইত্যাদি।
Advertisement
মানুষের বস্তুগত সম্পদ যেমন মালিক বৈ অন্য কেউ প্রকৃত মালিকের অনুমতি বা মূল্য পরিশোধ ছাড়া ভোগ বা ব্যবহার করতে পারে না, মেধা সম্পদের রক্ষায় সারা পৃথিবীর মানুষ ও আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ যতটা সচেতন ও কর্তব্য পরায়ন, মেধাসম্পদ রক্ষার ক্ষেত্রে ঠিক যেন তার বিপরীত, বিশেষ করে এশীয় প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোতে। মেধাসম্পদের রক্ষা এর ব্যবস্থাপনার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যে শব্দটি সংশ্লিষ্ট তা হচ্ছে বা Copyright কর্মের অধিকার। ইংরেজী Copyright শব্দটির মধ্যেই এর অন্তনির্হিত অর্থটি লুকিয়ে আছে। আমরা যদি Copyright ও Right এভাবে শব্দটি বিশ্লিষ্ট করে অর্থ বিশ্লেষণ করি তাহলে এর অর্থ দাঁড়ায় Copy করার অধিকার। অর্থাৎ সকল ধরণের সৃষ্টিশীল কর্মই (যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে) কর্মের স্রষ্টা বা রচয়িতার অনুমতি ছাড়া কপি করা বা পুনরুৎপাদন করা, অনুবাদ করা, উপযোগী করা, রুপান্তর করা বা অভিযোজন করা, তা বাণিজ্যিক বা ব্যক্তিগত, যে পর্যায়েই হোক না কেন, তা কপিরাইট ধারণা, আন্তর্জাতিক আইন, আন্তর্জাতিক চুক্তি, দেশিয় আইন, নৈতিকতা ও ইতিবাচকবোধের চরম পরিপন্থী।কপিরাইট সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড সবসময় একাধিক পক্ষ সংশ্লিষ্ট। সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রধানত লেখক, প্রকাশক ও পাঠক, সঙ্গীতের ক্ষেত্রে গীতিকার, সুরকার, গায়ক, যন্ত্রী ও সঙ্গীতকর্মের প্রকাশক বা উৎপাদক, চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে কাহিনীকার, স্ক্রিপ্ট রাইটার, প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, গায়ক, সহশিল্পীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এমনিভাবে সৃষ্টিশীল প্রতিটি কর্মপরিসরে অসংখ্য মানুষ সম্পৃক্ত থাকেন। যন্ত্র ও প্রযুক্তির যত উৎকর্ষ হচ্ছে, বিশেষ করে কম্পিউটার-ডিজিটাল বিশ্বে এ যুগে কার সৃষ্টিকর্ম কিভাবে চৌর্যবৃত্তির ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে তা সবসময় ঠিকভাবে অনুসরণ করাও সম্ভব না। বিশেষ করে বর্তমান ইন্টারনেট যুগে ঘরে বসেই আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক কর্মের উপাদান বা উৎস হাতে পেয়ে যাচ্ছি। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই সেই সৃষ্টিশীল কর্মের রচয়িতাই বঞ্চিত হচ্ছে তার যথাযথ Royalty থেকে। কেবল জীবিত রচয়িতাই নন, সারা পৃথিবীতেই জীবিত রচয়িতা এবং তার মৃত্যুর পর সেই রচয়িতার বৈধ উত্তরাধিকারগণের দেশভেদে পঞ্চাশ থেকে সত্তর বছর ধরে সৃষ্টিকর্মের রয়্যালটি পেয়ে থাকার কথা। বাংলাদেশি আইনে একজন রচয়িতার মৃত্যূর পর ষাট বছর পর্যন্ত এই অধিকার বলবৎ থাকে।বাংলাদেশের প্রায় সকল শিক্ষিত মানুষই একটি শব্দের সঙ্গে বহুল পরিচিত। এটি ইংরেজী শব্দ Piracy যার আভিধানিক অর্থ ‘গ্রন্থাদির স্বত্ত লঙ্ঘন’। কিন্তু বর্তমান বিশ্বের অর্থমান বহুগুণ সম্প্রসারিত। ফলে, এখন পাইরেসি কেবল গ্রন্থস্বত্ত লঙ্ঘনকেই বোঝায় না, যেকোন অনুমোদনবিহীন সৃষ্টিকর্মের উৎপাদনই পাইরেসি। বলতে দ্বিধা নেই, গ্রন্থ (বিশেষ করে বিদেশী), দেশি-বিদেশি চলচ্চিত্র, সঙ্গীত ও কম্পিউটার সফটওয়্যার ইত্যাদি সবগুলো বাজারের প্রায় পুরোটাই পাইরেসিকারদের দৃশ্য ও অদৃশ্য কালো জালে বন্দি। অনেক শিক্ষিত মানুষও তাদের সন্তানদের হাতে তুলে দিচ্ছেন পাইরেটেড বই। অথচ রঙিন বিদেশী বই এর জায়গায় পাইরেটেড কপি পড়ে আমাদের প্রকৌশল ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা বারংবার প্রতারিত হচ্ছে, বঞ্চিত হচ্ছে Global Knowledge থেকে; পিছিয়ে পড়ছে প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের প্রতিযোগীয়। পাইরেসির কারণে কর্মের রচয়িতা বঞ্চিত হচ্ছেন রয়্যালটি থেকে, পাঠক বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত জ্ঞান থেকে আর সরকার হারাচ্ছে তার রাজশ্ব।বাংলাদেশ World Intellectual Property Organization (WIPO) এর সদস্যভূক্ত দেশ হিসেবে WIPO পরিচালিত বার্ন কনভেনশন, UNESCO পরিচালিত ইউনিভার্সেল কপিরাইট কনভেনশন (UCC) এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) সদস্য হওয়ার কারণে এতদসংক্রান্ত, TRIPS (Trade Related Aspects of Intellectual Property Rights) চুক্তিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য চুক্তি কনভেনশনের কপিরাইট সংক্রান্ত সকল শর্ত মেনে চলতে বাধ্য। সারা বিশ্বে আধুনিক প্রযুক্তি উন্নয়নের সাথে সাথে কপিরাইট ব্যবস্থাপনারও যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। এ কারণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কপিরাইটের গুরুত্ব অনুধাবণ করে আন্তর্জাতিক কপিরাইট আইনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশের কপিরাইট আইন ২০০০ প্রণয়ন করা হয় এবং এ আইনটির যুগোপযুগী করণের লক্ষে ২০০৫ সালে সংশোধন করা হয়। আইনের যথাযথ প্রয়োগসহ কপিরাইট আইনের ১০৩ ধারার বিধানমতে কপিরাইট রুলস ২০০৬ (এসআর ও নং ২১৯-আইন/২০০৬) প্রণয়ন করা হয়।দুইকপিরাইট আইন ২০০০ (২০০৫ সালে সংশোধিত) এ সর্বমোট ১৭ টি অধ্যায় এবং ১০৫টি ধারা বিদ্যমান। এতে কপিরাইট লঙ্ঘনজনিত অপরাধ, অপরাধের প্রকৃত এবং তার বিপরীতে শাস্তির বিধানাবলী বর্ণনা করা হয়েছে, যা সংক্ষেপে নিম্নরূপ:১. কপিরাইটের মেয়াদ: ফটোগ্রাফ ব্যতীত অন্যান্য কর্মের ক্ষেত্রে কপিরাইট প্রণেতার মৃত্যুর পর ৬০ বছর (ধারা-২৪)। ফটোগ্রাফের মেয়াদ ৬০ বছর (ধারা-২৪)২. আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মের কপিরাইটের মেয়াদ: ৬০ বছর (ধারা-৩২)।৩. সম্প্রচার পুনরুৎপাদনের অধিকার: এরূপ কর্মের মেয়াদ সম্প্রচারের পরবর্তী বছরের শুরু থেকে ২৫ বছর (ধারা-৩৩)৪. কপিরাইট সমিতির নিবন্ধন: কপিরাইট আইন ২০০০-এর ৪১ ধারার বিধান মতে কপিরাইট সমিতি গঠন ও নিবন্ধন করা যাবে। নির্ধারিত ফরমে সমিতি নিবন্ধনের জন্যরেজিস্ট্রারের নিকট আবেদন করতে হবে। রেজিস্ট্রার উক্ত দরখাস্ত সরকারের নিকট দাখিল করবেন। প্রণেতা এবং এ আইনের অধীন অন্যান্য অধিকারের মালিকদের স্বার্থ, জনস্বার্থ ও জনগণের সুবিধা, বিশেষত লাইসেন্স প্রার্থী হতে পারে এমন ব্যক্তিসমষ্টির স্বার্থ ও সুবিধা, দরখাস্তকারীর যোগ্যতা এবং পেশাগত দক্ষতা বিবেচনা করে সরকার নির্ধারিত শর্ত সাপেক্ষে কোন সমিতিকে কপিরাইট সমিতিরূপে নিবন্ধিত করবে। একই শ্রেণীর কর্মের ব্যবসা করার জন্য একের অধিক সমিতিকে নিবন্ধন করা যাবে না।৫. অনুবাদ কর্মের লাইসেন্স: কপিরাইট আইনের ৫২ ধারার বিধানমতে কপিরাইট বোর্ডের অনুমোদনক্রমে কপিরাইট অফিস থেকে অনুবাদ কর্মের লাইসেন্স ইস্যু করা হয়।৬. কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন: কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি এর ট্রেজারি চালান, কর্মের ২ কপি নমুনাসহ নির্ধারিত ফরমে রেজিস্ট্রার অব কপিরাইটের নিকট আবেদন করতে হয় (ধারা-৫৫)।৭. আন্তর্জাতিক কপিরাইট: কপিরাইট আইনে ৬৮-৭০ ধারায় আন্তজার্তিক কপিরাইট সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে।৮. কপিরাইট লঙ্ঘন: কপিরাইট আইনের ৭১ ধারার বিধান মতে নিম্নলিখিত কারণে কোন কর্মের কপিরাইট লঙ্ঘিত হয়েছে বলে গণ্য হবে-
(ক) যখন কোন ব্যক্তি এ আইনের অধীন কপিরাইটের মালিক বা রেজিস্ট্রার কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স ব্যতীত বা অনুরূপভাবে প্রদত্ত লাইসেন্সের শর্ত বা এ আইনের অধীন কোন উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আরোপিত কোন শর্ত লঙ্ঘন পূর্বক-১. এমন কিছু করেন যা করার একচেটিয়া অধিকার এ আইন দ্বারা কপিরাইটের মালিককে দেয়া হয়েছে; অথবা
২. অবগত না থাকার এবং সন্দেহের কোন যুক্তিসংগত কারণের অনুপস্থিতিতে, মুনাফার উদ্দেশ্যে জনসাধারণ্যে এমন কোন কর্ম সম্পাদনের জন্য কোন স্থান ব্যবহারের অনুমতি দেন যাতে কর্মটির কপিরাইট লঙ্ঘন করে, যদি না এটা প্রমাণ করা হয় যে, বিষয়টি সম্মন্ধে তিনি অবগত ছিলেন না বা অনুরূপ সম্পাদন কপিরাইটের লঙ্ঘন হবে মর্মে বিশ্বাস করার তার কোন যুক্তিসংগত কারণ ছিল না; বা
Advertisement
(খ) যখন কোন ব্যক্তি১. কর্মটির অধিকার লঙ্ঘনকারী অনুলিপি বিক্রয় বা ভাড়া করেন বা বিক্রয় বা ভাড়া করান বা বাণিজ্যিকভাবে প্রদর্শনী করেন বা বিক্রয়ের কিংবা ভাড়ার প্রস্তাব করেন; বা২. বাণিজ্যিক উদ্দেশে অথবা কপিরাইটের মালিকের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয় এরূপ পরিসীমায় বিতরণ করেন; বা৩. বাণিজ্যিকভাবে জনসাধারণ্যে প্রদর্শন করেন; বা৪. কোন কর্মের অধিকার লংঘিত অনুলিপি আমদানি সংক্রান্ত বাংলাদেশে আমদানী করেন।ব্যাখ্যা: এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সাহিত্যে, নাট্য, সংগীত বিষয়ক বা শিল্পকর্মকে চলচ্চিত্র শিল্পকর্মে পুনরুৎপাদন একটি ‘অধিকার লঙ্ঘনকারী অনুলিপি’ হিবাবে গণ্য হবে।৯. অধিকার লঙ্ঘনকারী অনুলিপি আমদানি সংক্রান্ত : বাংলাদেশে তৈরি করা হল কপিরাইট লঙ্ঘন হতো এরূপ কর্মের বিষয়ে যথাযথ অনুমোদন ব্যতীত বাংলাদেশের বাইরে তৈরি অনুলিপি আমদানি করা যাবে না। এরূপ অনুলিপি জব্দ করার জন্য রেজিস্ট্রার অব কপিরাইট বা তার নিকট থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি উড়োজাহাজ, জাহাজ, যানবাহন, ডক বা আঙ্গিনায় তল্লাশি করতে পারবেন (ধারা-৭৪)।১০. দেওয়ানি এবং ফৌজদারি আইনে প্রতিকারের বিধান (ধারা-৭৫-৮১) : কপিরাইট লঙ্ঘনের বিষয়ে দেওয়ানি এবং ফৌজদারি উভয়ক্ষেত্রে প্রতিকার পাবার বিধান রয়েছে। দেওয়ানি আদালতের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা, ক্ষতিপূরণ আদায় ইত্যাদি এবং ফৌজদারি আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানা সংক্রান্ত শাস্তির বিধান রয়েছে।
১১. কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য শাস্তি:(ক) চলচ্চিত্র বিষয়ক কর্মের কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে, তবে এ অপরাধের জন্য সর্বনিম্ন শাস্তি এক বছরের কারাদন্ড এবং একলক্ষ টাকা অর্থদন্ড (ধারা-৮২)।(খ) কপিরাইট আইনের ধারা-৮২ এর বিধান মতে চলচ্চিত্র ব্যতিরেকে কোন কর্মের কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য অনূর্ধ্ব চার বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে, তবে এ অপরাধের জন্য সর্বনিম্ন শাস্তি ছয় মাস মেয়াদের কারাদণ্ড এবং অনূর্ধ্ব দুই লক্ষ টাকা কিন্তু সর্বনিম্ন পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে (ধারা-৮২)।
১২. কম্পিউটার প্রোগ্রামের লঙ্ঘিত কপি প্রকাশ, ব্যবহার ইত্যাদি অপরাধের শাস্তি:(ক) কম্পিউটার প্রোগ্রামের লঙ্ঘিত কপি অনুলিপি করে যে কোন মাধ্যমে প্রকাশ, বিক্রয় এবং বিতরণের অপরাধের জন্য চার বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং চার লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে, তবে এ অপরাধের জন্য সর্বনিম্ন শাস্তি ছয় মাস মেয়াদের কারাদণ্ড এবং একলক্ষ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে (ধারা-৮৪)।(খ) কম্পিউটার প্রোগ্রামের লঙ্ঘিত কপি ব্যবহারের অপরাধের জন্য তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে, তবে এ অপরাধের জন্য সর্বনিম্ন শাস্তি ছয় মাস মেয়াদের করাদণ্ড এবং একলক্ষ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে (ধারা-৮৪)।
১৩. অধিকার লঙ্ঘনকারী অনুলিপি তৈরি করার উদ্দেশে পেট দখলে রাখা: সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড (ধারা-৮৫)।১৪. রেজিস্ট্রারে মিথ্যা অন্তর্ভূক্তি ইত্যাদি অথবা মিথ্যা সাক্ষ্য উপস্থাপনা বা প্রদান করার শাস্তি : সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড(ধারা-৮৭)।১৫. প্রতারিত বা প্রভাবিত করার উদ্দেশে মিথ্যা বিবৃতি প্রদানের শাস্তি : সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা পঁচিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড (ধারা-৮৮)।১৬. প্রণেতার মিথ্যা কৃর্তৃত্ব আরোপ: সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা পঁচিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড (ধারা-৮৯)।১৭. কোম্পানি কর্তৃত্ব অপরাধ: দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিগণ উপরোক্ত হারে দণ্ডনীয় হবেন (ধারা-৯১)।১৮. অপরাধ বিচারার্থে গ্রহন: দায়রা জজ আদালত অপেক্ষা নিম্নতর কোন আদালত এই আইনের অধীন কোন অপরাধ, ধারা-৬৬ এর বিধান সাপেক্ষে, বিচারার্থে গ্রহন করবেন না(ধারা-৯২)।১৯. লঙ্ঘিত অনুলিপি জব্দ করতে পুলিশের ক্ষমতা : কপিরাইট আইনের ৯৩ (১) ধারার বিধান মতো সাব-ইনসপেক্টরের নিম্নতর পদাধিকারী নন এমন যে কোন পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়াই পাইরেসি সংক্রান্ত কর্মের সকল অনুলিপি বা যন্ত্রপাতি বা দ্রব্যসামগ্রী এবং অনুলিপি তৈরীর উদ্দেশ্য ব্যবহৃত সকল পেট বা যন্ত্রপাতি বা দ্রব্যসামগ্রী যেখানেই পাওয়া যাক তা জব্দ করতে পারেন।২০. রেজিস্ট্রার ও কপিরাইট বোর্ডের ক্ষমতা : রেজিস্ট্রার এবং বোর্ড-এর দেওয়ানি আদালতের অনুরূপ কতিপয় ক্ষমতা রয়েছে যেমন, সমন প্রদান, কোন ব্যক্তির উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ, তাকে শপথপূর্বক পরীক্ষাকরণ, কোন দলিল প্রদর্শন/উপস্থাপন করানো, হলফনামাসহ সাক্ষ্যগ্রহণ, কোন আদালত বা কার্যালয় হতে সরকারি নথি বা তার অনুলিপি তলব করা (ধরা-৯৯)।২১. রেজিস্ট্রার বা বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত অর্থ প্রদানের আদেশ: রেজিস্ট্রার বা বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত অর্থ প্রদানের আদেশ ডিক্রির ন্যায় কার্যকর হবে (ধারা-১০০)।২২. অব্যাহতি : এই আইনের উদ্দেশ্য সাধনকল্পে সরল বিশ্বাসে কৃত বা করার অভিপ্রায় এর জন্য কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন মামলা বা আইনগত কার্যক্রম চলবে না (ধারা-১০১)।তিনএখন প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কেন এই মুহুর্তে কপিরাইটকে এতোটা গুরুত্ব দিচ্ছি? কপিরাইটের সঙ্গে সভ্য মানুষের সম্পর্কই বা কী? কেন মানবো কপিরাইট আইন? এ প্রশ্নের উত্তরে সংক্ষেপে যে কথাটি বলবো তা হচ্ছে-কপিরাইট আমাদের জ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিকাশের অন্যতম Tool বা কৌশল। অন্য কথায় একবিংশ শতাব্দীর সকল সৃষ্টিশীল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডই বার বার হোঁচট খেতে বাধ্য। অন্যের সম্পদ ধার করে বা চুরি করে বেশিদূর এগুনো যায় না। কপিরাইটের সঙ্গে সৃষ্টিশীলতার নিবিড় সখ্য বিদ্যমান। ফলে, সৃষ্টিশীল মেধাসম্পদ যদি কেবলই চুরি হতে থাকে বা সৃষ্টিশীল কর্মের পাইরেসি হতে থাকে তবে একদিন সেই সৃষ্টিশীল মানুষগুলো হয়তো মুখ ফিরিয়ে নেবেন তাঁর আরাধ্য শিল্প সৃষ্টি থেকে। জীবানানন্দের ভাষায়, “সৃষ্টির সিন্ধুর বুকে” আর কেউ জাগাবে না ঢেউ! অথবা পাড়ি জমাবেন অন্য কোথাও অন্য কোন দেশে; আমরা কেবলই শিকার হব মেধাশূন্যতার। স্থলবুদ্ধির ভারে আক্রান্ত হবে দেশ এবং কেবলই পরনির্ভরশীল হয়ে থাকবো আমরা, দেশে-বিদেশে পরিচিত হবো আইন অমান্যকারী হিসেবে!
Advertisement
তাই আসুন: কপিরাইট আইন মান্য করে পাইরেসিকে না বলি।তথ্যসূত্র: মো: মনজুরুর রহমান রচিত ‘কপিরাইট কী ও কেন’ বই থেকে