ঢাকার ক্লাব ক্রীড়াঙ্গনে রেফারিং-আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক অনেক পুরনো। বড় দল, বিশেষ করে সমর্থনপুষ্ট দলগুলোকে আম্পায়ারের আনুকূল্য পাবার ঘটনাও নতুন নয়, অনেকদিনের। ৭০, ৮০ এবং ৯০ দশকে ক্রিকেট-হকি- তিন খেলাতেই দুই জনপ্রিয় ক্রীড়া শক্তি মোহামেডান-আবাহনীর পক্ষে রেফারি ও আম্পায়ারদের অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কের জন্ম হয়েছে। অভিযোগ আছে, ওই সময় দুই বড় দলের সাফল্যের পিছনে রেফারি-আম্পায়ারদের পরোক্ষ ভূমিকাও নাকি ছিল।আম্পায়াররা নিজেরা যেচেই কখনো মোহামেডান, আবার কখনো আবাহনীর পক্ষে আঙ্গুল তুলেছেন। ধারণা করা হয়, সেটা যতটা না মোহামেডান-আবাহনীর শীর্ষ কর্তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ও প্ররোচনায়- তার চেয়ে অনেক বেশি স্বেচ্ছা প্রণোদিত। তখন মোহামেডান-আবাহনীর জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। দেশের ক্রীড়াপ্রেমীর ৯৮ ভাগ ওই দু’দলের সমর্থক। ভাবা হয় রেফারি ও আম্পায়ারাও তখন সেই সমর্থকদের মানসিকতা থেকে দুই বড় দলের পক্ষে কোন না কোন সময় সিদ্ধাত দিয়ে ফেলেছেন। সেসব নিয়েই হয়েছে রাজ্যের বিতর্ক। তবে অভিযোগ উঠেছে এবার প্রিমিয়ার লিগে পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারিং অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। কোনো কোনো ক্লাবের অভিযোগ, প্রথম পর্বে আম্পায়ারদের পক্ষপাত পেয়েই সুপার সিক্সে জায়গা পেয়েছে আবাহনী। সেটা কতটা ক্লাব কর্তাদের প্রভাব ও প্ররোচনায়? আর কতটা স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে- তা নিয়ে ছোটখাটো বিতর্ক হতেই পারে। তারপরও এবারের ক্রিকেট লিগে আম্পায়ারিং নিয়ে কথাবার্তা একটু বেশিই হয়েছে। হচ্ছেও। যে দলটির বিরুদ্ধে আম্পায়ারকে প্রভাবিত করার অভিযোগ সবচেয়ে বেশি- সেই আবাহনী লিমিটেডের কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন কিছুতেই মানতে নারাজ, আবাহনী আম্পায়ারদের আনুকুল্য নিয়ে শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। খালেদ মাহমুদ সুজনের সোজা সাপটা উত্তর, ‘সামগ্রিকভাবে আমার মনে হয় আম্পায়ারিং নিয়ে অনেক বেশি কথা হয়েছে। খেলা পরিচালনা নিয়ে যতটা রটেছে। ততটা ঘটেনি।’ তবে কোন কোন ক্ষেত্রে খালেদ মাহমুদেরও মনে হয়েছে কিছু কিছু আম্পায়ার কোনো কোনো ম্যাচে আবাহনীর পক্ষ নিতে চেয়েছেন। সেটা কেন? এর পেছনে কারো হাত আছে? নাকি আম্পায়ারদের কেউ কেউ যেচেই তা করতে গেছেন। তা পরিষ্কার হয়নি খালেদ মাহমুদের। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে তার মনে হয়েছে, আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্তই অনেক বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে জাগো নিউজের সাথে একান্ত আলাপে অনেক কথার ভীড়ে আম্পায়ারিং নিয়ে কথা বলতে গিয়ে খালেদ মাহমুদ সুজন বলে ওঠেন, ‘আমার কাছেও মনে হয়েছে কোন কোন খেলায় আম্পায়াররা আবাহনীর পক্ষে সিদ্ধান্ত দিতে চেয়েছেন। যেমন কলাবাগান একাডেমির সাথে ম্যাচে। সামগ্রিকভাবে ওই খেলার আম্পায়ারিং ভাল হয়নি। খুব বাজে ছিল। আমি পরিষ্কার বুঝেছি, তারা আমাদের ফেবার করার চেষ্টা করেছেন।’কেন করেছেন? ‘বিষয়টা বোধোগম্য হয়নি; কিন্তু শুনলে অবাক হবেন, সেই ম্যাচে জিতিনি আমরা। শেষ পর্যন্ত হেরেছি। আমি টিম মিটিংয়ে প্রচন্ড রাগারাগি করেছি। ২৮২ করেও পারিনি। খেলা দেখে আমার মনে হচ্ছিল আম্পায়ারদের ফেবার করার মানসিকতায় আমার দলের ক্রিকেটারদের তেড়েফুড়ে ভাল খেলার ইচ্ছে ও দৃঢ় সংকল্পে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাদের আন্তরিক চেষ্টায় ঘাটতি চলে এসেছিল। যার চড়া মূল্য হিসেবে ম্যাচ হারতে হয় আমাদের।’তবে সুজন মনে করেন, যা ঘটেছে তার চেয়ে বেশি রটেছে। তিনি বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে আমার বোধ ও উপলব্ধি, আম্পায়ারিং নিয়ে একটু বেশি রটনা হয়েছে। যত কথা হয়েছে, যেভাবে ঢালাও আম্পায়ারদের ফেবার নিয়ে ভাল করার অভিযোগ করছেন কেউ কেউ আমি মনে করি তা অতিরঞ্জিত।’তবে আম্পায়ারিংয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সুজন। তিনি বলেন, ‘আম্পায়ারিংয়ের মান নিয়ে আমারও প্রশ্ন রয়েছে। আমার কাছে ভিডিও আছে। আবাহনী-প্রাইম দোলেশ্বর ম্যাচে যার আউটের সিদ্ধান্ত নিয়ে এত কথা, সেই রকিবুল মনে হয় আউট ছিলেন। অথচ আম্পায়ার আউট দেননি। মানছি তামিম তা নিয়ে একটু বাড়াবাড়ি আচরণ করে ফেলেছে; কিন্তু মনে রাখতে হবে, সে ম্যাচের আলোকে আম্পায়ারের হয়ত ওই সিদ্ধান্তটাই হতে পারতো টার্নিং পয়েন্ট। হয়ত ওই এক ভুলে হেরে যেতে পারতাম আমরা। তাই হয়ত তামিম একটু বেশি আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিল। আমি তার আচরণকে সমর্থন করছি না। তবে তা নিয়ে যত হই চই ও কথা হয়েছে- দেখেই আমি বলছি, আসলে আম্পয়ারারের ভুল থেকেই কিন্তু অমন অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্ম।’ওই ম্যাচে আম্পায়ারের সঙ্গে নাসিরের বাজে আচরণ নিয়ে সুজন বলেন, ‘অথচ একই ম্যাচে নাসিরও তিন তিন বার আম্পায়ারের সাথে বাজে আচরণ করেছেন। তা নিয়ে একটি কথাও ওঠেনি। আসলে আম্পায়ারের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত দেখেই ঢালাও চুরির অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ।’আম্পায়ারিং নিয়ে খালেদ মাহমুদ আরও বলেন, ‘অথচ যারা আবাহনীর বিরুদ্ধে আম্পায়ারকে প্রভাবিত ও প্ররোচিত করার অভিযোগে সোচ্চার, তারা একবারের জন্যও বলছেন না, আম্পায়াররা কোন কোন ম্যাচে আবাহনীর বোলারদের তিন চারটি ‘ফুট নো বল’ও ধরেছেন। আমার পাল্টা প্রশ্ন , আম্পায়ারা যদি আমাদের ফেবারই করবেন, তাহলে ওই ফুট নো বল ধরলো কেন। কোন টিভি ক্যামেরা তো সেখানে ছিল না। সেগুলো তারা এড়িয়ে যেতে পারতেন অবলীলায়।’মাঠের মানুষ খালেদ মাহমুদ সুজন আম্পায়ারিং বিতর্কের অবসান চান। তার অনুভব, আম্পায়ারদের ভুলে কোন দলের সাফল্যে কালো দাগ মোটেই কাঙ্খিত নয়। রীতিমত অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্খিত। তাই তো কন্ঠে একথা, ‘আমি আম্পায়ারিংয়ে স্বচ্ছতা চাই। বিশ্বাস করি প্রিমিয়ার লিগের আকর্ষণ-প্রতিদ্ব›িদ্বতা এবং দর্শকপ্রিয়তা ধরে রাখতে স্বচ্ছ ও ভাল আম্পায়ারিং খুবই জরুরী। প্রয়োজনে ভিনদেশি আম্পায়ার দিয়ে খেলা পরিচালনার পক্ষে আমি।’বোর্ডকে বিদেশি আম্পায়ারের বিষয়ে নাকি তিনি বলেও দিয়েছেন। সুজন নিজেই বলেন, ‘ইতিমধ্যে বোর্ড সভাপতিকে বলেও দিয়েছি ঢাকা লিগকে সুন্দর ও নিষ্কলুশ রাখতে দরকার হলে বিদেশি আম্পায়ার আনতে হবে। আর অতি অবশ্যই টিভি ক্যামেরার প্রচলন রাখতে হবে। তাতে করে সব ঘটনারই দলিল থাকবে। বিতর্কের জন্মও হবে কম।’আইএইচএস/আরআইপি
Advertisement