নান্দনিক নদী প্রকৃতির এই দেশে পর্যটন শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রীয় এই উপলদ্ধি ও চেতনার বেশ কয়েক বছর আগেই প্রতিশ্রুতিশীল উদ্যোক্তা প্রবীর কুমার সাহা পর্যটন শিল্পে অনন্য সংযোজন হিসেবে নরসিংদী জেলার পাঁচদোনায় গড়ে তুলেছেন অত্যাধুনিক মনকাড়া বিনোদন কেন্দ্র ড্রিম হলিডে পার্ক। ঈদকে সামনে রেখে বর্ণিল সাজে সেজেছে পার্কটি। এবারের প্রধান আকর্ষণ : নান্দনিক প্রকৃতির মাঝে বিস্তৃত পরিসরের ড্রিম হলিডে পার্কে আছে একাধিক পিকনিক ভেন্যু, শ্যুটিং স্পট, অ্যাডভেঞ্চার রাইডস, ওয়েভ ওয়াটার পার্ক ও এক্সক্লুসিভ কটেজ। শহুরে কর্মব্যস্ত জীবনের এক চিলতে অবসরে প্রশান্তিময় সময় কাটাতে অথবা স্মরণীয় মুহূর্তগুলোকে আরো প্রাণবন্ত ও উদযাপনের নানা মাত্রায় সমৃদ্ধ করে নেয়ার প্রায় সব আয়োজনই রয়েছে ঢাকার অদূরে অবস্থিত ড্রিম হলিডে পার্কে। বিস্তীর্ণ সবুজ শ্যামলিমায় জলজ আবহে রয়েছে অধিকাংশ মজাদার উপভোগ্য আয়োজন। যেমন- জলকামান, ওয়াটার আম্ব্রেলা, রাজ হংস ও রেইনবো ওয়াটার। আছে অর্ধডুবন্ত বিখ্যাত টাইটানিক সদৃশ জাহাজ। এখানে উপভোগ করা যাবে সমুদ্রের কৃত্রিম গর্জন ও জলপ্রবাহ। সোয়ান বোট, বাম্পার বোট ও স্পিড বোটে ঘুরে উপভোগ করা যাবে স্বদেশের সমৃদ্ধ নদীপ্রকৃতির জলজ জীবনের কিছুটা সময়। নদ-নদী ও সামুদ্রিক প্রকৃতিকে বুঝবার মতো এমন নির্মল বিনোদনের আয়োজন নেই দেশের অন্য কোথাও। এবার ঈদকে আরো আর্কষণীয় করার লক্ষ্যে মজার মজার নতুন রাইড সংযোজন করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশে এই প্রথম দীর্ঘ ক্যাবল কার-এ চড়ে উপর থেকে পার্কের সকল দৃশ্য অবলোকনের ব্যবস্থা। আরো আছে মজার ওয়াটার রয়েল সেলুন কার ও ওয়াটার জিপ। ব্যাটারি চালিত এই গাড়ী নিজেও চালানো যাবে, যা সত্যিই অনেক আনন্দদায়ক। আরো আছে মোটর সাইকেল রাইড, কাইট ফ্লয়িং, ম্যাজিক বল, স্পেস বল, মিগ ফাইটার, অন্যতম আকর্ষণ ৯-ডি থিয়েটার। আরো আছে ওয়াটার পার্কে ডি জে জিকো পলুর আকর্ষণীয় চমক। শিশুদের জন্যও বিনোদনের ব্যবস্থা : ড্রিম হলিডে পার্ক ছোট্ট সোনামনিদের জন্য যে সত্যিই স্বপ্নরাজ্য তা বলাই বাহুল্য। নাগেট ক্যাসেল, স্প্রিং ক্যাসল, রকিং হর্স, জাম্পিং হর্স, চিলড্রেন ক্যাসল, সুয়িং চেয়ার, চাইল্ড ট্রয় ট্রেন, ফ্রি ক্যাসল ফর চিলড্রেন, আর সাহসী ছেলে-মেয়েদের জন্য ভুতের বাড়ি এসবই শহুরে ইট-কাঠ পাথুরে জীবনে আটকেপড়া শিশুদের রুটিন বাঁধা একঘেয়ে জীবনে কিছুক্ষনের জন্য হলেও প্রশান্তি দিবে। মায়াবী রূপকথার রাজ্যে দেখা হয়ে যাবে রূপকথার অসাধারণ কিছু চরিত্রের সঙ্গে। ভুতের বাড়িতে রয়েছে দারুণ সব ভৌতিক আয়োজন। আর যারা ভুতের ভয় পায় তাদের জন্য রয়েছে বুলেট ট্রেন। এ ট্রেন নিয়ে যাবে এক রোমাঞ্চকর জগতে। পাশাপাশি এয়ার বাইসাইকেলে চড়ে ওড়া যাবে আকাশে। এই ধরনের রাইড এই প্রথম চালু করল ড্রিম হলিডে পার্ক। এ পর্যন্ত আয়োজনেই থেমে থাকতে চান না ড্রিম হলিডে পার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রবীর কুমার সাহা। অদূর ভবিষ্যতে আরো নতুন মজাদার সব শিশু-চিত্ত মনোহর খেলনা ও বিনোদন সামগ্রীর আয়োজন থাকবে। আগামীতে তার পরিকল্পনা হচ্ছে, এমন কিছু করবেন যেন দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে এই পার্কের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, এই পার্কের মাধ্যমে যাতে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটে এবং অর্থনীতিতে এই পার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ইতোমধ্যে পার্কটি আর্ন্তজাতিক মানসম্মত পার্ক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও পর্যটনশিল্পে এই পার্ক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ইতোমধ্যে বিদেশি পর্যটকরা ড্রিম হলিডে পার্ক পরিদর্শন করেছে। শুধু তাই নয়, আপনারা শুনে খুশি হবেন কোন কোন বিদেশি পর্যটক এই পার্ক দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাদের ধারণা ছিল না, বাংলাদেশে এই ধরনের একটি চমৎকার বিনোদন স্পট থাকতে পারে। যোগাযোগ ব্যবস্থা : ঢাকা থেকে দেড় ঘন্টার দূরত্ব। গুলিস্তান এবং মহাখালী থেকে নরসিংদী ও সিলেট বিভাগের যে কোন বাসে চড়ে ড্রিম হলিডে পার্কে যাওয়া যায়। পার্কের ভিতর ঘরোয়া পরিবেশে স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের ব্যবস্থা আছে। এছাড়াও রয়েছে কফি হাউস এবং ড্রিম জামদানি হাউস নামে নারায়ণগঞ্জের বিখ্যাত জামদানি শাড়ির শো-রুম। নিজস্ব সিকিউরিটিসহ আনসার ক্যাম্প নিয়োজিত আছে সার্বক্ষনিক নিরাপত্তার দায়িত্বে। ড্রিম হলিডে পার্কে রয়েছে স্বচ্ছ টলমলে পানির সুইমিংপুল, আর ওয়াটার হ্যাভেন নামে বিশাল পুকুর। আছে দিবা ও রাত্রি নামে চমৎকার স্থাপত্যশৈলীর দুটি কটেজ। এর প্রতিটি রুম রুচিশীল সব আসবাবপত্রে সজ্জিত। ইচ্ছে করলে এসব কটেজে রাত্রি যাপনও করা যায়। খাবার ব্যাপারে চিন্তা নেই। রয়েছে হরেকরকম দেশী-বিদেশি ছাড়াও সব মুখরোচক খাবার। আরো আছে আইস কর্ণার, ড্রিম কফি কর্ণার। সব মিলিয়ে বেড়ানোর নতুন নতুন উপকরণ ও মাত্রা পাওয়া যাবে ড্রিম হলিডে পার্কে। ২০০৭ সালে ২০ একরের ওপর এই পার্কের জন্ম। আর এই পার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রবীর কুমার সাহা মনে করেন ড্রিম হলিডে পার্ক তার চিন্তাচেতনায় তিলে তিলে গড়া। ইতোমধ্যে পার্কটি আর্ন্তজাতিক মানসম্মত হিসেবে সুপরিচিত। তিনি মনে করেন, এদেশের মানুষের চাহিদা ও রুচির দিকে দৃষ্টি দিয়েই পার্কটি সাজানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, পার্কের প্রবেশ মূল্য বড়দের ভ্যাটসহ ২৫০/- টাকা ও ছোটদের ১৫০/- টাকা।এমএ/এমএমজেড/আরআইপি
Advertisement