তার মেধা- প্রজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন না কেউ। খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন লড়াকু এক ক্রিকেটারের প্রতিচ্ছবি। সমসাময়িক ও উত্তরসূরিদের সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্কের কারণে দেশের ক্রিকেট অঙ্গনে তার আরেক নাম ‘চাচা।’ ক্রিকেটাঙ্গনের অনেকে তাকে চাচা নামেই ডাকেন।মাঠমুখিতায় সমসাময়িকদের মধ্যে তিনি সবার চেয়ে এগিয়ে। অতিবড় সমালোচকও মানেন, খালেদ মাহমুদ সুজন যথার্থই ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ মানুষ; কিন্তু সেই নিবেদিতপ্রাণ ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব যখন বোর্ড পরিচালক, পাশাপাশি বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান, প্রিমিয়ারের কোনো না কোনো শীর্ষ দলের ম্যানেজার, জাতীয় দলেরও ম্যানেজার, আবার নতুনভাবে গড়া দ্বি-স্তরের নির্বাচক কমিটিরও অংশ- তখনই উঠলো সমালোচনার ঝড়।এমনিতেই যে কারো পক্ষে এতগুলো দায়িত্ব একসঙ্গে পালন করা কঠিন। তারপর কেন তাকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা? এর প্রয়োজনীয়তাই বা কী?জাতীয় দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনকে জাতীয় দল নির্বাচন প্রক্রিয়ার অংশ করা নিয়ে তাই নানা প্রশ্ন। নানা গুঞ্জন। অবশেষে বুধবার মিললো এ কৌতূহলী প্রশ্নের জবাব। খোদ বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনই দিলেন সে জবাব। জানিয়ে দিলেন, তিনি জেনে-বুঝেই খালেদ মাহমুদ সুজনকে দল সাজানো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করেছেন।কেন তাকে যুক্ত করা? এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিসিবি সভাপতি একটা নাতিদীর্ঘ বক্তব্যই দিয়ে ফেলেছেন। যার সারমর্ম হলো, মুলত প্রধান কোচের সঙ্গে অধিনায়ক, সহ-অধিনায়কের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করবেন জাতীয় দলের ম্যানেজার।বিষয়টির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নাজমুল হাসান পাপন স্পষ্ট জানিয়েছেন, তার মনে হয় দেশে ও দেশের বাইরে দল, বিশেষ করে একাদশ সাজানো, টিম কম্বিনেশন গড়া, গেম প্ল্যানিং করায় কোচের সঙ্গে প্রায়ই মতপার্থক্য হয় অধিনায়ক, সহ-অধিনায়কের।কিন্তু টিম মিটিংয়ে তারা সেভাবে নিজেদের মতো উপস্থাপন করতে পারে না। দেশের বাইরে বেশ কয়েকবার বিসিবি সভাপতির স্মরণাপন্ন হয়েছেন অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক। এটা যাতে করতে না হয়, সে কারণেই না কি ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা।বিষয়টির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে বোর্ড প্রধান বলেন, বাংলাদেশের হেড কোচ হচ্ছেন ভিনদেশি একজন। আমি বেশ কবার টিম মিটিংয়ে উপস্থিত থেকে লক্ষ্য করেছি দল নির্বাচন, গেম প্ল্যান, লক্ষ্য-পরিকল্পনা এবং একাদশ সাজানোয় কোচের সামনে অধিনায়ক, সহ-অধিনায়ক ও সিনিয়র ক্রিকেটাররা টু শব্দটি করেন না। তাদের সঙ্গে চিন্তা-চেতনা ও লক্ষ্য-পরিকল্পনায় কোচের মতের ফারাক থাকার পরও তারা কিছু বলতে পারেন না বা বলেন না। দেশের বাইরে জাতীয় দলের অধিনায়ক, সহ-অধিনায়করা বহুবার আমার স্মরনাপন্ন হয়েছেন। সে অবস্থা যাতে না হয়, অধিনায়ক, সহ-অধিনায়কের ইচ্ছে, মত ও লক্ষ্য-পরিকল্পনার বিষয়টি যাতে যথা সময় ও ভালোভাবে কোচের কানে পৌঁছে- সে লক্ষ্যেই জাতীয় দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদকে দল নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অংশ করা।বিসিবি সভাপতির ব্যাখ্যায় পরিষ্কার, অধিনায়ক- সহ-অধিনায়কের সঙ্গে হেড কোচের মধ্যস্থতাকারী হিসেবেই জাতীয় দলের ম্যানেজারকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জড়ানো হয়েছে। তবে স্থানীয় বিশ্লেষকদের কারো কারো মতে এ ছাড়া- আরো একটি বড় কারণও আছে। যা বোর্ড সভাপতি মুখে বলেননি।সে কারণ হলো, ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন শুধু অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কের মতামতই কোচের কাছে ব্যক্ত করবেন না। তিনি বোর্ডের প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করবেন। দল নির্বাচনে যাতে হেড কোচের মতামত পুরোপুরি প্রাধান্য না পায়, তার ওপর খবরদারি ও নজরদারি করার জন্যই আসলে খালেদ মাহমুদকে রাখা।প্রশ্ন উঠতে পারে, ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খানই তো ওই কাজ করার জন্য যথেষ্ঠ। তাহলে আবার ম্যানেজারকে রাখা কেন? রাখা এই কারণে যে, ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান শুধু স্কোয়াড চূড়ান্ত করার সময়ই নির্বাচকদের সঙ্গে কথা বলে সই করেন; কিন্তু একাদশ সাজানো এবং মাঠে টিম কম্বিনেশন কী হবে? সেখানে তার মতামত দেয়ার সুযোগ থাকে না।এখন ম্যানেজারকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় না রাখলে জায়গামতো হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ইচ্ছেতেই সব হবে; কিন্তু ম্যানেজার নির্বাচন প্রক্রিয়ার অংশ হলে কোচ ইচ্ছেমত ক্রিকেটার নির্বাচন ও টিম কম্বিনেশন গড়তে পারবেন না।আসল কথা হলো, টিম মিটিংয়ে অধিনায়ক, সহ-অধিনায়কের বক্তব্যকে কোচের সামনে উপস্থাপন করার পাশাপাশি কোচের ওপর নজাদারি ও পরোক্ষ খবরদারিও করতে পারবেন ম্যানেজার। এ কারণেই মূলত খালেদ মাহমুদকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় রাখা।এআরবি/আইএইচএস/বিএ
Advertisement