দুই স্তরের নির্বাচক প্যানেল হবার অর্থ মূল নির্বাচক কমিটির স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং তাদের অধিকার খর্ব হওয়া। প্রকারান্তরে ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে যাওয়া- সবাই এমন বলবলি করলেও বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তা মনে করেন না। বুধবার বিকেলে জনার্কীর্ন সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, মোটেই তা হবে না।নির্বাচকরা আগে যেমন স্বাধীন ছিলেন। তাদের কাজের ধরন ও দল সাজানোর প্রক্রিয়া যেমন ছিল, ঠিক তেমনই থাকবে। এমন মত প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামের কনফারেন্স রুমে সাংবাদিকদের পাশে বসে থাকা দুই নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ও হাবিবুল বাশারকে দেখিয়ে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন অনেকটা চ্যালেঞ্জের সুরেই বলে উঠলেন-‘এখানে দুই নির্বাচক আছেন, তাদের জিজ্ঞাসা করুন, তারা যে দলটিকে নির্বাচন করতো বা করেছে, তা আমার মানে বোর্ড প্রধানের অনুমোদনের আগে কি ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যানের হাত হয়ে আসতো কি না? আসতো। তারপর আমার তথা বোর্ডের অনুমোদন হতো। মানে কোন না কোনরকম হস্তক্ষেপ সব সময়ই ছিল। আমার কাছে ওই হস্তক্ষেপটাকে অযাচিত মনে হতো, আমি চাই না বারবার এমন হস্তক্ষেপ করতে। বরং চেয়েছি দল সাজানো ও নির্বাচন প্রক্রিয়াকে একটা পরিমার্জিত রূপ দিতে। যাতে করে দল নির্বাচনের পর আর বারবার আমার পর্যন্ত আসতে না হয়। এ কারণেই দ্বি-স্তরের নির্বাচক প্যানেল।’বোর্ড প্রধানের সুরে সুর মিলিয়েছেন নতুন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও। অকপটে স্বীকার করেছেন, ‘আমারও মনে হয় দল নির্বাচক প্রক্রিয়ায় কোন পরিবর্তন আসবে না।’ মিনহাজুল আবেদিনের ধারনা, তারা আগে যেভাবে কাজ করতেন, দল নির্বাচন প্রক্রিয়া যেমন ছিল- তেমনই থাকবে।তাই তো তার কথা, ‘আমার মনে হয় সব আগের মতই থাকবে। আগেও আমরা দল তৈরী করে ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাতাম। তার সই হবার পর তা বোর্ড প্রধানের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হতো। আমার মনে হয়, আমরা আগে যে প্রক্রিয়ায় কাজ করতাম আগামীতেই তাই করতে পারবো।’বুধবারের সংবাদ সন্মেলনের একটা পর্যায়ে বিসিবি প্রধানকে খানিক আবেগতাড়িৎ মনে হলেও জাতীয় দল নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি অনেক কঠিন সত্য প্রকাশ করে দিয়েছেন। বাস্তবতা হলো, কোন সময়ই নির্বাচকদের দল সাজানোই শেষ কথা নয়। ওই দল চলে যেত ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে। তার সই হবার পর বোর্ড তথা বোর্ড প্রধানের অনুমোদনের প্রশ্ন।আর এখন ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি চেয়ারম্যানের সই লাগবে না। কারণ, এখন নির্বাচক প্রক্রিয়ার অন্যতম প্রধানই থাকবেন ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান। নির্বাচকদের সাজানো খেলোয়াড় তালিকা নিয়ে ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি প্রধান, হেড কোচ ও জাতীয় দলের ম্যানেজার বৈঠকে বসেই দল চূড়ান্ত করবেন।সে কারনেই হয়ত মিনহাজুল আবেদিন নান্নু প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেননি। উল্টো তাকে প্রধান নির্বাচক মনোনীত করায় বোর্ডকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় মিনহাজুল আবেদিন বলেন, ‘খুব ভাল লাগছে। পাঁচ বছর ধরে হাবিবুল বাশারের সাথে কাজ করেছি। বিসিবি আমাদের এ দায়িত্ব দেয়ায় ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আরও ওপরে তোলার চেষ্টা করবো।’তারপরও নতুন প্রক্রিয়ায় তার এবং নির্বাচক কমিটির স্বাধীনতা হস্তক্ষেপ হবে কি না, তারা হেয় হয়ে পড়বেন কি না? এমন প্রশ্ন উঠেছে। নতুন প্রধান নির্বাচকের মত, ‘না আমরা হেয় হবো না। আর স্বাধীনতায়ও হস্তক্ষেপ হবে না। আগেও ক্রিকেট অপারেশন্স আমাদের ওপরেই ছিল। আমরা কিন্তু সব সময়ই ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির অধীনে ছিলাম। দল তৈরি করে আমরা তার সাক্ষর নিতাম। তখন কিছু না কিছু কথাবার্তা হতোই। আলোচনা-পর্যালোচনাও হতো। এখন তো একত্রে বসেই সব কিছু হবে। কাজেই ভুল বোঝাবুঝির কোন কারণ নেই।’এআরবি/আইএইচএস/বিএ
Advertisement