দেশজুড়ে

সর্বোচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে ঢাকা-বরিশাল রুটে নামছে পারাবত-১২ লঞ্চ

ঈদুল ফিতর সামনে রেখে দেশের অন্যতম আধুনিক ও বিলাসবহুল নৌযান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রাবেয়া শিপিং কোম্পানির নৌযান বহরে যুক্ত হচ্ছে পারাবত-১২ লঞ্চ। এমভি পারাবত-১২ লঞ্চটি রাবেয়া শিপিং কোং এর এ যাবতকালের সর্ববৃহৎ লঞ্চ। ঢাকা-বরিশাল রুটে যাত্রী পরিবহন করবে এই বিলাসবহুল লঞ্চটি। ইতোমধ্যে লঞ্চটির নির্মাণকাজ শেষে পানিতে ভাসানো হয়েছে। ইঞ্জিন পরীক্ষা করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ঈদের আগেই এর উদ্বোধনের জোর প্রচেষ্টা চলছে। আধুনিকতা ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে কমতি নেই লঞ্চটিতে। যাত্রীদের যাত্রা আরো আরামদায়ক করতে রয়েছে আধুনিক ও বিলাসবহুল কেবিন। যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত ওয়াইফাই ব্যবস্থা, থাকছে এটিএম বুথের মাধ্যমে ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও সুসজ্জিত খাবার হোটেল। লঞ্চের করিডোরগুলোতে রয়েছে নান্দনিক ডিজাইন। দুই ও তিন তলায় কাঠের কারুকাজ যে কারো মন কারবে। তিন তলা এই লঞ্চটির ডেকের যাত্রীদের জন্য নিচ তলা ও দুই তলায় বেছানো রয়েছে মসৃণ কার্পেট। ঢাকার সূত্রাপুরের অদূরে ফরাশগঞ্জে নিজস্ব ডকইয়ার্ডে ২০১২ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রতিদিন প্রায় ৮০ জন শ্রমিকের নিরলস পরিশ্রমে পারাবত-১২ লঞ্চের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। লঞ্চটি উদ্বোধনের জন্য শেষ মুহূর্তের রঙ ও সাজসজ্জা এবং ইঞ্জিন চালিয়ে পরীক্ষা দেখা হচ্ছে। লঞ্চ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টরা জানায়, এ লঞ্চটি দৈর্ঘ্যে ২৯৬ ফুট এবং প্রস্থে ৪৮ ফুট। এর লোয়ার ডেক, আপার ডেক ও দুই শতাধিক প্রথম শ্রেণির কক্ষ (কেবিন) ছাড়াও রয়েছে সাতটি ভিআইপি কক্ষ। লঞ্চটির অনুমোদিত যাত্রী ধারণক্ষমতা এক হাজার ৫০০ জন। অন্যান্য লঞ্চে সেন্ট্রাল পদ্ধতিতে এসি চালানো হলেও নবনির্মিত এ লঞ্চটির কেবিন যাত্রীরা রিমোট দ্বারা নিজের খুশিমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। লঞ্চটিতে নামাজের জন্য আলাদা কক্ষ, খাবার জন্য দুটি ক্যান্টিন ও পর্যাপ্ত টয়লেট ব্যবস্থা রয়েছে। যাত্রী সেবায় প্রতি কেবিনে রঙিন টেলিভিশন ও ইন্টারকম যোগাযোগের ব্যবস্থা ছাড়াও রয়েছে তৃতীয় শ্রেণির যাত্রীদের জন্য বড় পর্দার টিভি এবং অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম। আর নিরাপত্তার জন্য থাকছে সিসি ক্যামেরা। যাত্রীদের সুবিধার্থে নৌযানে থাকছে এটিএম বুথের মাধ্যমে ব্যাংকিং ব্যবস্থা। পারাবত-১২ লঞ্চে কয়েক স্তরবিশিষ্ট স্টিলের মজবুত পাটাতন তলদেশে থাকায় দুর্ঘটনায় তলদেশ ফেটে লঞ্চডুবির আশঙ্কা নেই।এছাড়া ৫ শতাধিক টন পণ্য পরিবহনের সুবিধাও রয়েছে নৌযানটিতে। জাপানের তৈরি ২ হাজার ৪০০ অশ্বশক্তির দুটি মূল ইঞ্জিন ছাড়াও নৌযানটির বাতানুকূল প্রথম শ্রেণি ও ভিআইপি কক্ষসহ ডেক যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস নিশ্চিতকরণে তিনটি জেনারেটরসহ আরো একটি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটরও সংযোজন করা হয়েছে। পুরো নৌযানটির পারিচালন ব্যবস্থা সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। চলাচলের সময় ইকো সাউন্ডার নামের পানির গভীরতা নির্ণয় যন্ত্র, সঠিক পথ নির্ণয়ে জিপিএস ব্যবস্থা, ঝড়ের পূর্বাভাস নির্ণয়ে শক্তিশালী রাডার ও ওয়ারলেস ব্যবস্থা ছাড়াও রয়েছে অটোমেটিক ফায়ার কন্ট্রোল, পর্যাপ্ত সিকিউরিটি ব্যবস্থা। ম্যানুয়াল, ইলেক্ট্রিক এবং হাইড্রোলিক পদ্ধতিতে থাকছে লঞ্চ চালানোর ব্যবস্থা।রাবেয়া শিপিং কোম্পানির মালিক শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া জাগো নিউজকে জানান, লঞ্চটির নির্মাণে যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা ও নিরাপত্তার বিষয়টির উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এজন্য নির্মাণ কাজে সময়ও বেশি লেগেছে। নিরাপত্তার জন্য পুরো নৌযানটি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। থাকবে সশস্ত্র আনসার সদস্য। এছাড়া পর্যাপ্ত সংখ্যক লাইফ বয়া রাখা হয়েছে যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য। লঞ্চটি পরিচালনার জন্য দক্ষ মাস্টার অফিসার ও ইঞ্জিন অফিসার ছাড়াও মোট ৫৫ জন বিভিন্ন শ্রেণির ক্রু দায়িত্বে থাকবে। নৌযানটি বিলাসবহুল হলেও ভাড়ায় তেমন পরিবর্তন হবে না। সব শ্রেণির যাত্রী ভাড়া অন্যসব নৌযানের মতোই থাকবে। শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়ার দাবি, মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি যাত্রীসেবা প্রদান হবে পারাবত-১২ এর মূল লক্ষ্য।এমএএস/এমএস

Advertisement