সোহরাওয়ার্দী শুভ নিজেকে খানিক দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন। ভাবছেন তাসকিনের বাউন্সারে মাথায় বল লেগে হাসপাতালে যেতে হয়েছে তাই? হ্যাঁ সেটা একটু আছেই। হেলমেট ব্যবহারের পরও মাথায় বল লেগে প্রায় অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে যাওয়া যে অনেক বড় ঝক্কির, ভোগান্তি ও শঙ্কারও। হাসপাতালে এক রাত কাটিয়ে ৭ দিনের পূর্ণ বিশ্রামে থাকাও কম অস্বস্তিদায়ক নয়। আর কারো লাগল না, হেলমেট পরে নামার পরও আমার মাথায়ই কেন বল এসে লাগল? সে আঘাতে প্রায় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় হাসপাতালে যেতে হলো এমন মনোকষ্ট আছে অবশ্যই। তারপর বাড়ি ফিরে ডাক্তারের পরামর্শে পূর্ণ বিশ্রামে থাকা মানে ২৪ ঘণ্টা বিছানায় শুয়ে থাকাও অন্যরকম ভোগান্তি। হাঁটতে গেলে একটু মাথা ঘোরাচ্ছে সেটাও মনের গহীনে কাঁটা হয়ে বিঁধছে। সংক্ষেপে এখন সেটাই একমাত্র সমস্যা। না হয় ভালোই আছেন সোহরাওয়ার্দী শুভ। কিন্তু ভিতরটা অন্যরকম যন্ত্রণায় কাতর। এক অস্ফুট বেদনায় নীল এ বাঁ-হাতি অলরাউন্ডারের মন। কারণ যে ম্যাচে আঘাত পেয়ে স্ট্রেচারে মাঠ ছাড়তে হলো, সে ম্যাচে তার বোলিং দেখতে এসেছিলেন জাতীয় দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। বাঁ-হাতি মিডল অর্ডার কাম অর্থেডক্স স্পিনার শুভ মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। যে করেই হোক ভালো বোলিং করে কোচের নজর কাড়তেই হবে। কিন্তু তাসকিনের বাউন্সার মাথায় লেগে সব এলোমেলো হয়ে গেল। হাসপাতাল থেকে ফিরে প্রথমবারের মত কোনো মিডিয়ার সঙ্গে আলাপকালে জাগো নিউজকে অনুশোচনা নিয়ে বলেন, ‘সেদিনই আমার বোলিং দেখতে মাঠে এসেছিলেন জাতীয় দলের হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের। আমার বোলিংটা পাখির চোখে পরখ করার কথা ছিল তার। কিন্তু তা আর হলো কই? মাথায় বল লেগে আমি ছিটকে গেলাম মাঠের বাইরে। চলে গেলাম এপোলো হাসপাতালের নিউরো আইসিইউতে। আর বল করা হলো না। জাতীয় দলের প্রধান কোচও আমার বোলিং দেখতে পারলেন না। নিজের বোলিং সামর্থ্যে নতুন করে প্রমাণ দেয়ার একটা সুযোগ এসেছিল। দুর্ভাগ্য সেটাও হাতছাড়া হয়ে গেল।’ মিরপুরে নিজ বাসায় বিছানায় শুয়ে এখন সে আফসোসেই পুরছেন শুভ। কথায় পরিষ্কার শুভর স্বপ্ন ভঙ্গেও বেদনায় নীল। এটুকু শুনে কেউ কেউ হয়ত ভাবছেন, তবে কি শুভ আকাশ কুসুম কল্পনা করতে শুরু করেছিলেন? আসলে তা নয়। তার মুখেই শোনা যাক, আসল ভাবনাটা কি ছিল? ‘কোচ হাথুরুসিংহে বোলিং দেখে মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে আমাকে আবার জাতীয় দলের জন্য বিবেচনায় আনতেন তা বলছি না। তবে বোলিংটা ভালো হলে আবার জাতীয় দলে ফেরার একটা সম্ভাবনার দ্বার অন্তত উন্মোচিত হতো। আমার বোলিং অ্যাকশন ও মেধা সামর্থ্য দেখে কোচ হাথুরুসিংহের অন্তত একটা ধারণাতো জন্মাতো।’সেই ২০১১ সালের ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে শেষ ওয়ানডে খেলার প্রায় পাঁচ বছর পর আবার জাতীয় দলে ফেরার যে সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল, তা অঙ্কুরে বিনষ্ট! সেটাই আফসোস। এখন আবার কবে হবে? আদৌ হবে কিনা? রাজ্যের চিন্তা এসে বাসা বাঁধছে শুভর। প্রশ্ন উঠতেই পারে সাকিব, আরাফাত সানি, তাইজুল ও সাকলাইন সজীব চারজন বাঁ-হাতি স্পিনার থাকার পরও আবার কেন পেছনে ফিরে তাকানো? কেনইবা সোহরাওয়ার্দীর কথা আবারো ভাবা? ভিতরের খবর, আরাফাত সানির বোলিং অ্যাকশনে ত্রুটি ধরা পড়া, সাকলাইন সজীবের অকার্যকারিতা- দুয়ে মিলে সীমিত ওভারের ফরম্যাটে সোহরাওয়ার্দী শুভর একটা জায়গা হয়েছে। আর তাইজুলকে দীর্ঘ পরিসরের জন্যই শুধু ভাবা হচ্ছে। আরাফাত সানি যদি সত্যিই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারেন, তাহলে তার মত টাইট লাইন ও লেন্থের একজন বাঁ-হাতি অর্থোডক্স স্পিনারতো লাগবে। সাকলাইন সজীবের বলে টার্ন আছে। কিন্তু সীমিত ওভারের ফরম্যাটে যত চোস্ত হওয়া দরকার, স্লথ সাকলাইন সজীবের তা নেই। তাই সাকিবের সঙ্গে দ্বিতীয় বাঁ-হাতি স্পিনার অপশন হিসেবে শুভ`র কথা ভাবা। আর তার ব্যাটিংটা প্লাস। সাকিব ছাড়া এ মুহূর্তে যে কজন বাঁ-হাতি স্পিনার আছেন, তার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী শুভর ব্যাটিং সামর্থ্য সবচেয়ে বেশি। এবারের লিগে ১৪ ম্যাচে ১৭ উইকেটের পাশাপাশি প্রাইম ব্যাংকের সঙ্গে একটি সেঞ্চুরিও আছে তার। চলতি প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত আর ব্যাটিংটাও বাকি সব স্পেশালিস্ট বাঁ-হাতি স্পিনারদের চেয়ে ভালো। তার কথা হয়তো জানা ছিল না কোচের। এবার যাও খোঁজ পেলেন। তাও বোলিংটা দেখা হল না। এ মনোকষ্ট ও দুঃখটা কি কম? তাইতো শুভর মন খারাপ। এমআর/এবিএস
Advertisement