ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দেশে প্রথমবারের মত লিফটযুক্ত অত্যাধুনিক বিলাসবহুল সর্ববৃহৎ সুন্দরবন-১০ লঞ্চ চালু করা হচ্ছে। বরিশাল-ঢাকা নদীপথে যাত্রীদের ভ্রমণ আরামদায়ক করতে দেশের অন্যতম আধুনিক ও বিলাসবহুল নৌযান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানি সমুদ্রগামী বড় জাহাজের আদলে তৈরি করছে লঞ্চটি।
Advertisement
তিন হাজার অশ্বশক্তির দুটি ইঞ্জিনের কারণে ৫ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ।চলাফেরায় অক্ষম শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সুবিধার জন্য চারতলা লঞ্চটিতে থাকছে লিফটের ব্যবস্থা। একজন চিকিৎসক, ফার্মেসিসহ হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য লঞ্চে করোনারি কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে প্লে-গ্রাউন্ড, ফুড কোড এড়িয়া, কফি হাউজ এবং ওয়াইফাই সুবিধাসহ রাখা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা।নিরাপত্তার জন্য পুরো নৌযানটি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। থাকবে একজন কমান্ডার ও ৫ জন সশস্ত্র আনসার সদস্য। এছাড়া যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য ২৫০টি লাইফ বয়া রাখা হয়েছে।দেশের সবচেয়ে বেশি যাত্রী ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বিলাসবহুল এই লঞ্চটি বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলা নদীর তীরে বেলতলা ফেরিঘাট এলাকায় সুন্দরবন নেভিগেশন ডক ইয়ার্ডে নির্মাণ করা হয়েছে। দেশি ও বিদেশি প্রযুক্তিনির্ভর এই লঞ্চটি উদ্বোধনের জন্য শেষ মুহূর্তের রঙ ও সাজসজ্জার কাজ চলছে। এরই মধ্যে ৩০ ঘণ্টা পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন নদীতে চালিয়ে দেখা হয়েছে।লঞ্চ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টরা জানায়, এরই মধ্যে সুন্দরবন-১০ লঞ্চের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ২৩ জুন মিলাদ ও দোয়া মোনাজাতের মধ্য দিয়ে বরিশাল থেকে ঢাকা নদীপথে যাত্রী পরিবহন শুরু করবে।তবে উদ্বোধনের মূল আনুষ্ঠানিকতা হবে ঢাকায়। আগামী ২৫ জুন (শনিবার) সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে বিকেলে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে এমভি সুন্দরবন-১০ নামের বিলাসবহুল এই লঞ্চটির।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ করা হয়েছে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, সংসদ সদস্য তালুকদার মো. ইউনুস, সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ, সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমোডর এম জাকিউর রহমান ভূইয়া, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর এম মোফাজ্জেল হক, অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল সংস্থার চেয়ারম্যান (বীর বিক্রম) মাহাবুব উদ্দিন আহম্মেদসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের।সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপক আবুল কালাম ঝন্টু জাগো নিউজকে জানান, বিশেষজ্ঞ নৌ স্থপতির নকশায় সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের প্যানেল প্রকৌশলীদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে ৩২ মাস ধরে প্রতিদিন ২০০ জন শ্রমিক নিরলস পরিশ্রম করে সুন্দরবন-১০ লঞ্চের নির্মাণ কাজ শেষ করেছে। ৩৪০ ফুট দৈর্ঘ্যর এ নৌযানটির প্রস্থ ৫৫ ফুট। এর লোয়ার ডেক, আপার ডেক ও দুই শতাধিক প্রথম শ্রেণির কক্ষ (কেবিন) ছাড়াও ১৫টি ভিআইপি কক্ষে অনুমোদিত যাত্রী ধারণক্ষমতা এক হাজার ৪০০ জন। নৌযানটিতে ৪০টি সোফা বা বিলাস আসন রয়েছে।এছাড়াও প্রায় ৫ শতাধিক টন পণ্য পরিবহনের সুবিধাও রয়েছে নৌযানটিতে। জার্মানের একটি কোম্পানির তৈরি তিন হাজার অশ্বশক্তির দুটি মূল ইঞ্জিন ছাড়াও নৌযানটির বাতানুকূল প্রথম শ্রেণি ও ভিআইপি কক্ষসহ ডেক যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস নিশ্চিতকরণে তিনটি জেনারেটরসহ আরো একটি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটরও সংযোজন করা হয়েছে। পুরো নৌযানটির পারিচালন ব্যবস্থা সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। পুরো লঞ্চে যাত্রীদের ওয়াইফাই সুবিধা প্রদান করবে নৌযান কর্তৃপক্ষ।সুন্দরবন-১০ লঞ্চের হুইল হাউজে (চালকের কক্ষ) সম্পূর্ণ অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্রাংশ সংযোজন করা হয়েছে। এর রাডার-সুকান ‘ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক’ ও ম্যানুয়াল দ্বৈত পদ্ধতির। পাশাপাশি নৌযানটিতে আধুনিক রাডার ছাড়াও জিপিএস পদ্ধতি সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে লঞ্চটি চলাচলরত নৌপথের এক বর্গকিলোমিটারের মধ্যে গভীরতা ছাড়াও এর আশপাশের অন্য যেকোনো নৌযানের উপস্থিতি চিহ্নিত করতে পারবে। এমনকি ঘন কুয়াশার মধ্যেও নৌযানটি নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে।সুন্দরবন-১০ লঞ্চ পরিচালনার জন্য দক্ষ মাস্টার ও ইঞ্জিন কর্মকর্তা ছাড়াও মোট ৪০ জন বিভিন্ন শ্রেণির ক্রু থাকছেন। তবে অত্যাধুনিক এ নৌযানটির সব শ্রেণির যাত্রী ভাড়া অন্যসব নৌযানের মতোই থাকছে বলে জানায় নৌযান কর্তৃপক্ষ।সুন্দরবন-১০ লঞ্চের স্বত্বাধিকারী বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, সমুদ্রগামী বড় জাহাজের আদলে তৈরি হচ্ছে এ লঞ্চটি। আমরা প্রচলিত ভাষায় লঞ্চ বলে অভিহিত করলেও বাস্তবে এটি পরিপূর্ণ জাহাজ। তৈরির সময়ই যাত্রী ও নৌযানের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। প্রথম শ্রেণির কেবিনগুলো বানানো হয়েছে বিলাসবহুল আবাসিক তিন তারকা হোটেলের আদলে। ব্যয়বহুল ও দৃষ্টিনন্দন আসবাবপত্রে সাজানো প্রতিটি কক্ষ। প্রতিটি কেবিনের সঙ্গে রয়েছে সুবিশাল বারান্দা। এখানে বসে নদী, আকাশ আর আশপাশের মনোরম প্রকৃতি দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। কক্ষের ভেতরে রয়েছে টেলিভিশন। রিভার সাইটের কেবিনের ভেতর থেকেও সহজেই দেখা যায় বাইরের নয়নাভিরাম দৃশ্যাবলি।ঐতিহ্য আর আধুনিকতার সমন্বয়ে তৈরি করা হযেছে নিরাপদ ও বিলাসবহুল এই লঞ্চটি। আকার, নকশা, নান্দনিকতা এমনকি নিরাপত্তার দিক থেকেও অন্য যেকোনো লঞ্চের তুলনায় নির্ভরযোগ্য এবং আরামদায়ক হবে।সুন্দরবন-১০ লঞ্চের স্বত্বাধিকারী সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, আগামী ২৩ জুন মিলাদ ও দোয়া মোনাজাতের মধ্যদিয়ে বরিশাল থেকে ঢাকা নদীপথে যাত্রী পরিবহন শুরু করবে বিলাসবহুল সুন্দরবন-১০ লঞ্চটি। ২৫ জুন বিকেলে সুন্দরবন-১০ লঞ্চটির আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে।এআরএ/আরআইপি