আন্তর্জাতিক

নিশ্চল পালিত কন্যাকে খাবার চিবিয়ে খাওয়াচ্ছেন চীনা দম্পতি (ভিডিও)

চীনের সাংহাই প্রদেশের হৃদয় স্পর্শকারী একটি গল্প। সাংহাইয়ের এক দম্পতি খাবার মুখে নিয়ে চিবিয়ে সেরিব্রাল পালসিতে (জন্মের আগে অথবা পরে মস্তিষ্কের ক্ষতির কারণে পক্ষাঘাতগ্রস্থ) আক্রান্ত পালিত কন্যাকে গত ১৫ বছর ধরে খাওয়াচ্ছেন। নিজ মুখে খাবার চিবানোর পর সেই খাবার নিশ্চল সন্তানের মুখে তুলে দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির সংবাদমাধ্যমে চীনা নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লি হুয়ানমেই, দত্তক মা, দাতংয়ের একটি হাসপাতালে ক্লিনারের কাজ করেন। ২০০১ সালের শীতকালের কোনো একদিন হাসপাতালের হলওয়েতে পরিত্যক্ত এক শিশুকে দেখতে পান। তিনি ওই শিশুকে কোলে তুলে বাড়িতে নিয়ে যান। সেই দিন থেকে গত ১৫ বছর ধরে স্বামী ঝ্যাও ইউচুনসহ সেবা করে আসছেন শিশুটির। লি হুয়ানমেই বলেন, তিনি জানতেন যে, হাসপাতালের অভ্যন্তরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া অধিকাংশ শিশুকেই তাদের বাবা-মা ছুঁড়ে ফেলেন, কারণ তারা জন্মের সময়ই রোগে আক্রান্ত। এরপরও তিনি অসহায় শিশুকে সহায়তা থেকে কখনো নিজেকে ফিরিয়ে নিতে পারেননি। কিছুদিন পরে শিশুটির শরীরে সেরিব্রাল পালসি ধরা পড়ে। কখনো মায়ের বুকের দুধ পান করতে না পারা এই শিশুর অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর। স্বজনরা ওই শিশুর সেবা করা থেকে বিরত রাখতে লিকে প্রভাবিত করেছিল। কিন্তু লি দম্পতি সিদ্ধান্ত নেন যে, তারা একটি জীবন এভাবে ছেড়ে দিতে পারবেন না। পালিত ওই কন্যার নাম রাখার সিদ্ধান্ত নেন। হাসপাতালে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া শিশুর নাম রাখেন ঝ্যাও লিকুন। ছোট্ট লিকুনের সার্বক্ষণিক সেবা প্রয়োজন। ঝি ও ঝ্যাও কখনো একসঙ্গে বাড়ি থেকে বের হতে পারেন না। যদি একজন বেরিয়ে পড়েন, তাহলে অপরজন লিকুনের সেবার জন্য বাড়িতে থাকেন। ঝ্যাও ইউচুন বলেন, লিকুন এখনো খাবার চিবাতে পারে না। তাই লি এবং ঝ্যাও তাদের কন্যাকে খাবার চিবিয়ে খাওয়ান পাখি যেভাবে তার ছানাকে খাবার খাওয়ায়। শুধু তাই নয়, একবার লিকুনকে খাওয়ানোর জন্য সময়ের দরকার হয় পুরোপুরি ২ ঘণ্টা। দিনে তিনবার খাওয়াতে মোট ব্যয় হয় ৬ ঘণ্টা। লিকুনের খাওয়া শেষের পর সাংহাইয়ের এই দম্পতি নিজেরা ঠাণ্ডা খাবার খান। বয়স বাড়তে থাকায় পিঠে ব্যথা ও পেটের সময় ভুগছেন তারা। লিকুনের বয়স বর্তমানে ১৫ বছর, কিন্তু তার আইকিউ মাত্র তিন বছরের শিশুর মতো। লি এবং ঝ্যাও দম্পতির ১৪ বছর বয়সী আরো এক কন্যা সন্তান রয়েছে। দারিদ্র পরিবার হলেও সুখী জীবন-যাপন করছেন বলে জানান তারা। তবে সম্প্রতি পরিবারের অবস্থার বেশ অবনতি দেখা যায়, যখন লির গলায় ক্যান্সার ধরা পড়ে। খরচ চালানোর সামর্থ্য না থাকায়  চিকিৎসা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তবে নিজেকে নিয়ে যতটা না চিন্তিত এই মা, তারচেয়ে বেশি চিন্তিত শয্যাশায়ী ১৫ বছরের পালিত কন্যাকে নিয়ে। লি বলেন, যদি সন্তানের ভালো আশ্রয় ও ভবিষ্যতের ব্যবস্থা হতো তাহলে তার আর কোনো দুঃশ্চিন্তা থাকতো না বলে জানান।সূত্র : সাংহাইস্ট ডটকম ও সিনহুয়া নিউজ।এসআইএস/এবিএস

Advertisement