চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু খুন হওয়ার ১৫ দিন অতিবাহিত হয়েছে। মাঝের এই সময়ে পরিবারের সদস্যদের চোখের পানি কিছুটা শুকিয়ে গেলেও শুকায়নি হৃদয়ের ক্ষত। তরতাজা প্রাণটি এভাবে ঝড়ে যেতে পারে তা এখনও কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারেন না তার আত্মীয়-স্বজন।সাহসিকতার সঙ্গে চট্টগ্রামে সর্বত্রই জঙ্গি আস্তানা খুঁজে তাদের উত্থান ঠেকানোর নেপথ্যের নায়ক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার হাজার হাজার মানুষের জীবন রক্ষা করেছেন। অথচ নিজের স্ত্রীকে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে বাঁচাতে না পেরে গুমড়ে কাঁদেন।শোকে মূহ্যমান পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার নিজের কষ্ট লুকিয়ে এখন তার দুই শিশু সন্তান আকতার মাহমুদ মাহির ও তাবাসসুম তাজনীন তাপুকে বুকে আগলে রেখে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। শিশু দু’টি অকালে অকস্মাৎ হারিয়েছে তাদের মমতাময়ী মা’কে। ছেলে আকতার মাহমুদ মাহিরের বয়স সাত বছর, মেয়ে তাবাসসুম তাজনীন তাপুর চার বছর।জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বের ৫২টি দেশে বাবা দিবস হিসেবে পালিত হয়। সে হিসেবে আজ বাবা দিবস। বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য দিনটি বিশেষভাবে উৎসর্গ করা হয়ে থাকে। এই বাবা দিবসে মাহির ও তাবাসসুম তার বাবাকে খুব কাছে থেকে পাচ্ছে। শত ব্যস্ততা সত্বেও বাবা বাবুল আক্তার মায়ের মতো করে তাদের দেখাশোনা করছেন। কিন্তু তারা তো বাবা দিবসে বাবার সঙ্গে মাকেও চেয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কারণে ওই দুই শিশুকে শুধু বাবার সঙ্গ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে (৪০) গত ৫ জুন (রোববার) চট্টগ্রামে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওইদিন সকাল ৬টা ২০ মিনিটে বাসা থেকে বের হন মিতু। বাসার ১০০ গজ দূরত্বে নগরের পাঁচলাইশ থানার জিইসি মোড়ে দুর্বৃত্তরা মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। তারপর থেকেই দুই শিশু সন্তানের এখন একমাত্র ভরসা বাবা বাবুল আক্তার। ১৫ দিন ধরে ওই শিশুদের বাবাও তিনি মাও তিনি। দুই শিশুকে খাবার খাওয়ানোসহ বাবা-মায়ের সকল কাজ এখন একাই করছেন বাবুল আক্তার। শনিবার দুপুরে বাবুল আক্তারের বনশ্রীর বাসায় গিয়ে এক সাংবাদিক এমনই দৃশ্য দেখতে পেয়েছেন। সোনায় মোড়ানো সংসার থেকে মায়ের চলে যাওয়ায় সন্তানরা এখন পুরোপুরি বাবা নির্ভর হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশ পুলিশের নির্ভরতার প্রতীক এই বাবা এখন সন্তানদেরও নির্ভরতার প্রতীক। উল্লেখ্য, ছেলে আকতার মাহমুদ মাহিরকে চট্টগ্রাম ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে রেখে আসার জন্য প্রতিদিন সকাল ৭টায় বাসা থেকে বের হতেন পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু। তবে গত ৪ জুন (শনিবার) রাতে একটা নম্বর থেকে তার মোবাইলে এসএমএস দিয়ে ছেলের স্কুলে কুচকাওয়াজ ও অ্যাসেমব্লির কথা বলা হয়।ওই এসএমএস পেয়েই মিতু পরদিন ৫ জুন (রোববার) সকাল ৬টা ২০ মিনিটে বাসা থেকে বের হন। বাসার ১০০ গজ দূরত্বে নগরের পাঁচলাইশ থানার জিইসি মোড়ে দুর্বৃত্তরা মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে।মাহমুদা আক্তার মিতু নগরের ও আর নিজাম আবাসিক এলাকার ‘ইক্যুটি সেনটিয়াম’ নামের একটি বাড়ির সপ্তম তলায় পরিবার নিয়ে থাকতেন। বাসায় ছেলে আকতার মাহমুদ মাহির, মেয়ে তাবাসসুম তাজনীন তাপু ও গৃহকর্মী ফাতেমা আক্তার ছিলেন।একে/এবিএস
Advertisement