বছর না ঘুরতেই আবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এটি যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে জনদুর্ভোগ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কি ভেবে দেখা হয়েছে? গৃহস্থালি ব্যবহারের ক্ষেত্রে দুই চুলার জন্য মাসিক বিল ১ হাজার ২০০ টাকা এবং এক চুলার জন্য ১ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া সিএনজির দাম প্রতি ঘনমিটার ৩৫ থেকে বাড়িয়ে ৫৮ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। সব কোম্পানির কাছ থেকে পাওয়া গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বিইআরসির অভ্যন্তরীণ বিশেষজ্ঞ দল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। এখন প্রস্তাবগুলো নিয়ে গণশুনানির আয়োজন করা হবে। ঈদের আগেই তা হতে পারে। গণশুনানি হবে ভালো কথা। ভোক্তাদের কথা শুনে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে তো? নাকি গণশুনানি বরাবরের মতো কেবলই লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা? গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবাসিকসহ কয়েকটি শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। তখন দুই চুলার বিল ৪৫০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা এবং এক চুলার বিল ৪০০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়েছিল। এই বৃদ্ধি নিয়েও তখন প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সবচেয়ে বড় কথা, বিইআরসি আইন, ২০০৩ অনুযায়ী কোনো সংস্থা এক বছরের মধ্যে দুবার দাম বাড়ানোর আবেদন করতে পারে না। অথচ বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির জন্য দেখানো হচ্ছে অদ্ভুত সব যুক্তি। সরকার বাসাবাড়িতে নতুন করে গ্যাস-সংযোগ তো বন্ধ করেছেই, এখন পাইপলাইন গ্যাসের ব্যবহারও নিরুৎসাহিত করতে চায়। এ ছাড়া দেশের অধিকাংশ মানুষ পাইপলাইনের গ্যাস পায় না। তাদের অনেকেই বিকল্প হিসেবে এলপি গ্যাস ব্যবহার করে, যার দাম অনেক বেশি। এই দুই ধরনের ব্যবহারকারীর মধ্যে বৈষম্য কমানোও সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। সে কারণে বাসাবাড়ির গ্যাসের দাম বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়ে থাকতে পারে। সিএনজির দাম বাড়ানো হবে যানবাহনে ব্যবহৃত তরল জ্বালানির (পেট্রল, অকটেন) দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার জন্য। এর আরেকটি উদ্দেশ্য, দ্রুত কমে আসা দেশের গ্যাসের ওপর থেকে বাড়তি চাহিদার চাপ কমানো।আমরা বরাবরাই দেখেছি ভর্তুকির কথা বলে মূল্যবৃদ্ধির শর্টকাট পথে সরকার এগোয়। দুর্মূল্যের বাজারে এমননিতেই জনসাধারণের নাভিশ্বাস উঠেছে। এর ওপর গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হলে তা হবে তাদের জন্য ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’। অধিকাংশ যানবাহন এবং ট্রাক, লরি এখন গ্যাসচালিত।গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে যাত্রীভাড়া বাড়বে। বাড়বে পণ্য-দ্রব্য বহনের খরচও। এর ফলে নিত্যপণ্যের বাজার আরও অস্থির হবে। শুধু তাই নয় বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাসের দামও বাড়ারও প্রস্তাব করা হয়েছে। এই বৃদ্ধির কুফল মানুষজনকে নানা ভাবে ভোগাবে।এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ভর্তুকি কমানোর জন্য মূল্যবৃদ্ধির শর্টকাট রাস্তায় চলে। অথচ দুর্নীতি কমানো, সিস্টেমলস বন্ধ করাসহ নানাবিধ উপায়ে আয় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সেটি করা গেলে জনসাধারণকে আর বাড়তি পয়সা গুণতে হতো না। খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে দাম বাড়ালে শেষ পর্যন্ত এর সুফল পাওয়া যায় না। ভোক্তা অধিকারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলে মূল্যবৃদ্ধির এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের দিকে যেতে হয় না। এখনও সময় আছে। আমরা আশা করবো জনসাধারণের সার্বিক দুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জনহিতকর সরকারের এটিই দায়িত্ব।এইচআর/এবিএস
Advertisement