দেশজুড়ে

ট্রান্সশিপমেন্টে বদলাবে আশুগঞ্জ বন্দর : বাড়বে আয়ও

ভারত-বাংলাদেশ নৌ-প্রটোকল (পিআইডব্লিউটিটি) চুক্তির আওতায় ট্রান্সশিপমেন্টে কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। অবকাঠামোগত পুরোপুরি উন্নয়ন না করেই বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দরে ট্রান্সশিপমেন্টে কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। এর ফলে প্রথমবারের মতো মাশুল দিয়ে সড়ক পথে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহন করবে ভারত।জানা যায়, গত বুধবার বিকেলে ট্রান্সশিপমেন্টের এক হাজার চার টন রড নিয়ে ভারতের কোলকাতা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দরে এসে পৌঁছায় এমভি নিউটেক-৬ নামে একটি কার্গো জাহাজ। গত ৩ জুন জাহাজটি ভারতের কলকাতার খিজিরপুর বন্দর থেকে রওনা হয়। ২০১৫ সালের ৬ জুন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত পিআইডব্লিউটিটি চুক্তির অংশ হিসেবে ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্যের প্রথম চালান বাংলাদেশে প্রবেশ করল। আগে ট্রান্সশিপমেন্টের আওতায় ভারতকে কোনো শুল্ক দিতে হতো না। এখন আগের বিভিন্ন চার্জের বাইরে নির্ধারিত হারে টন প্রতি শুল্ক দিতে হবে। এর মধ্যে কাস্টমস টন প্রতি ১৩০ টাকা, বিআইডব্লিউটিএ টন প্রতি ১০ টাকা এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ ৫২.২২ টাকা হারে শুল্ক পাবে। এছাড়া সড়ক পথে পরিবহনের সময় পুলিশি প্রহরা নিলে টন প্রতি ৫০ টাকা হারে ফি দিতে হবে। এর বাইরে ভয়েজ পারমিশন ফি, পাইলটিং ফি, বার্দিং (অবস্থান) ফি, ল্যান্ডিং চার্জ, চ্যানেল ফি, লেবার ফি গুণতে হবে পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠানকে।বৃহস্পতিবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান আশা প্রকাশ করে বলেন, ট্রান্সশিপমেন্ট কার্যক্রম উদ্বোধনের মাধ্যমে আশুগঞ্জ নৌবন্দরের সার্বিক চিত্র বদলে যাবে। ভারতীয় অর্থায়নে এ বন্দরটিতে আইসিটি নির্মাণ করা হবে, যেটি নির্মাণে ভূমির ব্যবস্থা করবে বাংলাদেশ সরকার। এছাড়া নির্মিত হবে জেটি। আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়কটি সরকার চার লেনে রুপান্তরিত করারও পরিকল্পনা করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।সংশ্লিষ্টরা জানান, ট্রান্সশিপমেন্টকে কেন্দ্র করে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ার পাশাপাশি আশুগঞ্জ নৌবন্দরে বিপুল পরিমাণ লোকের কর্মসংস্থান হবে। পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের জাহাজ ও ট্রাক ব্যবহৃত হবে বলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।ইতোমধ্যে ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে অফিস ভবন, পার্কিং ইয়ার্ড, ওয়ার হাউজ, আরসিসি জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত সড়কও মোটামুটি প্রস্তুত রয়েছে পণ্য পরিবহনের জন্য। এসব সুধিবাদি ব্যবহার করে নির্বিঘ্নে প্রথম আনুষ্ঠানিক ট্রান্সশিপমেন্ট কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডোর এম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭২ সালের নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের পণ্য যাচ্ছে। প্রতি পাঁচ বছর পর পর এ চুক্তি নবায়ন হবে। ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য আশুগঞ্জে জেটি ও টার্মিনাল নির্মাণ হবে। নিয়মিত নৌ ট্রান্সশিপমেন্টের ফলে বাংলাদেশও লাভবান হবে বলেও জানান তিনি। আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ত্রিপুরায় পণ্য পৌঁছানোর দায়িত্ব পাওয়া সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জলি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. মোবারক হোসেন ভূইয়া জানান, ৬০টি খোলা ট্রাকে করে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ত্রিপুরায় পণ্যগুলো পৌঁছে দেয়া হবে। শনিবার সকালে পণ্যের প্রথম চালান সেখানে যাওয়ার কথা রয়েছে।এর আগে দুই দফায় বিশেষ মানবিক দিক বিবেচনা করে কোনো প্রকাশ মাশুল ছাড়াই নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের নৌ ও সড়ক পথ ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন করেছে ভারত।এআরএ/এমএস

Advertisement