বিশেষ প্রতিবেদন

গতি এসেছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়

বর্জ্য। রাজধানী ঢাকার নিত্যদিনের এক সমস্যা। এ সমস্যায় নাগরিক জীবন যেন ওষ্ঠাগত। নগরের দায়িত্বে যিনিই এসেছেন, তিনিই নগরকে পরিচ্ছন্ন রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু উদ্যোগ-উদ্দীপনা ঘোষণাতেই আটকে থেকেছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। চিত্র বদলেছে রাজধানীরও। তবে বর্জ্য সমস্যা থেকেছে আগের মতোই। বিভক্ত নগরীর দুই মেয়র দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দিতে নানা চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। দৃশ্যমান কিছু পরিবর্তন এসেছেও বটে। কিন্তু মানুষ তাতে ভরসা রাখতে পারছে না। নানা অব্যবস্থাপনার কারণে বর্জ্য অপসারণ এখনও এই শহরের মৌলিক সমস্যাগুলোর একটি। বর্জ্য, বর্জ্য অপসারণ, অপসারণে অব্যবস্থাপনা, বর্জ্য থেকে জীবিকা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন করেছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সায়েম সাবু, নিজস্ব প্রতিবেদক আবু সালেহ সায়াদাত ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সুব্রত মণ্ডল। আজ থাকছে সপ্তম পর্ব: গতি এসেছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়বাসযোগ্য আর নাগরিকবান্ধব রাজধানী গড়ার শত প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঢাকার দুই সিটির মেয়র দায়িত্ব নেয়ার সবে বছর গড়িয়েছে। প্রায় দুই কোটি মানুষের এই রাজধানীকে সামাল দিতে শুরু থেকেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। অব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত উন্নয়ন আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় নিত্যদিন নানা চাপ সইতে হচ্ছে নগর পিতাদের। এমন জটিলতার পরও গত এক বছরে দৃশ্যমান কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়েছে নগর উন্নয়ন ব্যবস্থাপনায়। বিশেষ করে কয়েকটি অভিযান পরিচালনা, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, বিলবোর্ড অপসারণ করার মতো পদক্ষেপগুলোয় প্রশংসা কুড়িয়েছেন ঢাকার দুই মেয়র। ধারণা করা হয় দখল দারিত্বে অপশক্তির দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট অনেকেটাই নড়ে গেছে। দুই মেয়রের ক্ষমতা নেয়ার এক বছরের মাথায় যেখানে বেশি গতি এসেছে, তা হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। ফলে বদলে যাচ্ছে নগরের অন্যতম প্রধান সমস্যা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। বিশেষ গতিও এসেছে নগর পরিচ্ছন্নের নানা পদক্ষেপে।   তাগিদ এসেছে নির্দিষ্ট সময়ে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা এনে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলার। হচ্ছেও তাই। আবার রাতের আঁধারেই তা সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।  এদিকে ময়লার ভাগাড় বেড়া দিয়ে সংরক্ষণ করা হচ্ছে, যাতে নির্দিষ্ট সময়ে ময়লা ফেলা হয়। ফলে রাস্তায় ছড়ানো-ছিটানো বর্জ্য আর থাকবে না। ছড়াবে না দুর্গন্ধ। দূষণ হবে না নদী-খাল। এভাবেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বদলে দিচ্ছে ঢাকা সিটি করপোরেশন। গড়ে তুলছে পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। ভবিষ্যতে এই ময়লা থেকে বিদ্যুৎ বা বায়োগ্যাস উৎপাদনের কথা ভেবে রেখেছে সিটি কর্পোরেশন। ফলে নোংরা শহরের দুর্নাম থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে মেগাসিটি ঢাকা। সূত্র জানায়, সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য উত্তর সিটি ৭২টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণ করছে। এ সিটির প্রতিটি ওয়ার্ডে দুটি করে, অর্থাৎ ৩৬টি ওয়ার্ডে মোট ৭২টি এসটিএস নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। কাজেও গতি এসেছে বেশ।একইভাবে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ৫০টির মতো সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন বসানো হয়েছে। আরো বেশ কয়েকটি স্টেশন বসানোর প্রক্রিয়া চলমান। পরিপাটি এবং অপেক্ষাকৃত ছোটা আকৃতির বিন এখন গোটা রাজধানী জুড়েই লক্ষণীয়। ফুটপাত ঘেঁষে এসব বিনে ময়লা ফেলতে নগরবাসী ইতোমধেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে।বিষয়টি নিয়ে কথা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় রাজধানীর রূপ বদলে যাচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। মানুষের মধ্যেও বর্জ্য ব্যবস্থপনা নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে। মানুষ আমাদের উদ্যোগে সহযোগিতা করছে। সচেতন হচ্ছে।তিনি বলেন, এমন একটি নগরীকে একা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে পরিছন্ন রাখা সম্ভব নয়। নাগরিকরা প্রত্যেকে এই নগরকে নিজেদের মনে করলেই কেবল পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হবে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকা অগ্রগণ্য বলে মনে করি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন (বিএন) বিপন কুমার সাহা বলেন, বর্জ্য নিয়ে আগের চিত্র অনেকটাই পাল্টে গেছে। নগর পরিচ্ছন্নতায় বিশেষ গতি এসেছে, যা নাগরিক জীবনে বিশেষ সাড়া ফেলেছে। নগরবাসী সচেতন হলেই সকল উদ্যোগ সফল হবে।উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে রাজধানীতে দক্ষ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে নতুন আঙ্গিকে কাজ শুরু হয়। জাপান সরকারের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ১০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেয় ডিসিসি। পরবর্তীতে ঢাকা সিটি দুই ভাগ হওয়ার পর এ কার্যক্রমে আরো গতি আসে। সে পরিকল্পনার অনেকটা বাস্তবায়ন হয়েছে। খুব শিগগিরই নগরবাসী এর সুফল পেতে শুরু করবেন বলে আশা মেয়র আনিসুল হকের। সেই ধারায় ইতোমধ্যে খোলা ট্রাকের পরিবর্তে আবর্জনা বহন করছে পরিবেশবান্ধব কমপ্যাক্টর ট্রাক। এএসএস/এনএফ/পিআর

Advertisement