বিশেষ প্রতিবেদন

ভাগাড়ে সাংবাদিক প্রবেশে মানা

বর্জ্য। রাজধানী ঢাকার নিত্যদিনের এক সমস্যা। এ সমস্যায় নাগরিক জীবন যেন ওষ্ঠাগত। নগরের দায়িত্বে যিনিই এসেছেন, তিনিই নগরকে পরিচ্ছন্ন রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু উদ্যোগ-উদ্দীপনা ঘোষণাতেই আটকে থেকেছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। চিত্র বদলেছে রাজধানীরও। তবে বর্জ্য সমস্যা থেকেছে আগের মতোই। বিভক্ত নগরীর দুই মেয়র দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দিতে নানা চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। দৃশ্যমান কিছু পরিবর্তন এসেছেও বটে। কিন্তু মানুষ তাতে ভরসা রাখতে পারছে না। নানা অব্যবস্থাপনার কারণে বর্জ্য অপসারণ এখনও এই শহরের মৌলিক সমস্যাগুলোর একটি। বর্জ্য, বর্জ্য অপসারণ, অপসারণে অব্যবস্থাপনা, বর্জ্য থেকে জীবিকা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন করেছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সায়েম সাবু, নিজস্ব প্রতিবেদক আবু সালেহ সায়াদাত ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সুব্রত মণ্ডল। আজ থাকছে ষষ্ঠ পর্ব: ভাগাড়ে সাংবাদিক প্রবেশে মানা।ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ভবনে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা নেই। অপেক্ষাকৃত তরুণ দুই মেয়র দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই সাংবাদিকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করে যাচ্ছেন। কোনো অভিযান বা অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার আগে সাংবাদিকদের জানানও দিয়ে থাকেন তারা। শুরু থেকেই তাদের মনোভাব সাংবাদিকবান্ধব। নগর পরিচালনায় দুই মেয়র সাংবাদিকদের পাশে রাখলেও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরশেনের বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশনে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। গাবতলী আমিনবাজারের কাছে ময়লার এই স্তূপে যেতে চাইলেই কোনো সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারবেন না। কোনো তথ্য বা ছবি সংগ্রহ করতে চাইলে গুলশানে উত্তর সিটি কর্পোরেশন ভবনে এসে আগে অনুমতি নিতে হবে তাদের। অন্যথায় কোনোভাবেই ময়লার স্তূপে গিয়ে খবর সংগ্রহ করতে দেবেন না সেখানকার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা।সম্প্রতি খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হয় জাগো নিউজের এই প্রতিবেদককে। গেটেই আটকে দেয়া হয় তাকে। গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে গেলেও বাধা দেয়া হয়।  ময়লার স্তূপ থেকে ময়লা টোকানোর অনুমতি থাকলেও সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমতি নেই কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে এক আনসার সদস্য বলেন, উপর থেকে নিষেধ আছে। অফিস থেকে অনুমতি না নিয়ে এলে এখানে কোনো সাংবাদিককে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।ময়লা স্তূপে কী এমন থাকতে পারে, যে কারণে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা- এমনটি জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা এখানে এসে ছবি তোলে, খবর নিয়ে আজেবাজে রিপোর্ট করেন। এ কারণেই অনুমতি না থাকলে সাংবাদিকদের এখানে যেতে দেয়া হয় না।’ সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কথা শোনালেন ওজন স্কেলের দায়িত্বে থাকা কম্পিউটার অপারেটর ফিরোজ কবিরও। তিনি বললেন, ‘ভেতরে সমস্যা আছে। তাই সাংবাদিকরা চাইলেই প্রবেশ করতে পারে না। টোকাইদের অনেকেই খারাপ। আপনার ক্ষতিও করতে পারে।’কিন্তু পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা নুরুল নামের এক টোকাই বলেন, ‘এখানে প্রায় ৫শ’র বেশি টোকাই আছে। তাদের সঙ্গে এখানকার গার্ডরা সব সময় খারাপ ব্যবহার করে। ট্যাপ থেকে খাবার পানিও নিতে দেয় না। ময়লা গিয়া নদী-নালায় পড়ছে। আরো অনেক সমস্যা। এ কারণেই সাংবাদিকদের যেতে দেয় না।’ বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন (বিএন) বিপন কুমার সাহার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এটি একটি সংরক্ষিত এলাকা। তাই যে কেউ চাইলেই প্রবেশ করতে পারে না।’টোকাইরা প্রবেশ করতে পারছে অথচ সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা কেন- এমন জিজ্ঞাসার জবাবে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক প্রবেশে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। নগর ভবন থেকে অনুমতি নিয়ে সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ করতে পারবেন।’এএসএস/এএস/এনএফ/আরআইপি

Advertisement