বিজিএমইএ ভবন ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে হাইকোর্টের রায়ই বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তবে এখনো আশা ছাড়েনি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। নিয়ম অনুযায়ী আপিল বিভাগ থেকে রায় প্রকাশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করার বিধান প্রচলিত। সে হিসেবে অপেক্ষা করতে হবে রায় প্রকাশের জন্য। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত নিয়ে করা হবে। পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এখন রায় প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে রায় যেদিনই প্রকাশ করা হোক না কেন আমরা রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনার) আবেদন করবো।আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের সিদ্ধান্ত আগামী সপ্তাহে নেয়া হবে বলে বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে। বিজিএমইএ’র হিসেবে আইনি লড়াইয়ের আর একটি ধাপ বাকি রয়েছে। সেটাই ব্যবহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া সরকারের সদিচ্ছার বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সংগঠনটির অনেক নেতাই। জানা গেছে, স্বপ্রণোদিত হয়ে জারি করা এক রুলের রায়ে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল আইন লঙ্ঘন করে গড়ে ওঠা ১৮তলা বিজিএমইএ ভবনটি অবৈধ ঘোষণা করে ভেঙে ফেলার নির্দেশনা দেন অবসরে যাওয়া বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের জমি যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফিরিয়ে এনে জনকল্যাণে ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে আদালত বলেন, হাতিরঝিল প্রকল্প একটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প। বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাট বা অংশ বিক্রি করেছে, তাদের টাকা ফেরত দিতেও বলেন হাইকোর্ট। ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল বিজিএমইএ’র আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। পরে স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরো বাড়ান সর্বোচ্চ আদালত। এর দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে বিজিএমইএ।গত ২ জুন বিজিএমইএ’র করা আপিল খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ। হাইকোর্টে এ মামলার অ্যামিকাস কিউরি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ জানিয়েছেন, হাইকোর্টের রায় বহাল থাকায় ৯০ দিনের মধ্যে বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে হবে।বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাছির বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইন মেনেই পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহে আমাদের বোর্ড মিটিংয়ে রিভিউ আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আগামী সপ্তাহে রিভিউ আবেদন করা হতে পারে। তবে রিভিউ এর পরে আদালত যে রায় দেবেন, আমরা তা পালন করবো। বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদীও একই মত পোষণ করেছেন। আদালত রায়ে বলেন, বিজিএমইএ’র সদস্যরা দেশের অর্থনীতিতে যেমন অবদান রাখছেন, দেশের অর্থনীতি চাঙা রাখার জন্য গার্মেন্ট শ্রমিকরাও তেমনি অবদান রাখছেন। তাদের শ্রমের জন্যই গার্মেন্ট কারখানা চলছে। হাজার হাজার প্রবাসী বাঙালিও দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করে রাখছেন। দরিদ্র কৃষকদের অবদানও কোনো অবস্থাতেই খাটো করার সুযোগ নেই। তাদের শ্রমের বিনিময়ে ফসল উৎপাদিত হচ্ছে বলে বিরাট অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা বেঁচে যাচ্ছে।হাইকোর্ট বলেন, দেশের অন্য ১০ জনের মতো এই আর্থিক পেশিশক্তির অধিকারী লোকেরাও দেশের সাধারণ আইনের আওতাধীন। সংবিধান অনুযায়ী ধনী-দরিদ্রের মধ্যে আইনের প্রয়োগের ব্যাপারে কোনো বৈষম্য চলতে পারে না। আদালত বলেন, বস্তুত একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হিসেবে বিজিএমইএকে আইনের প্রতি আরও অধিক শ্রদ্ধাশীল হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। অথচ তারা তা না করে আইনকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে ব্যবহার করেছেন। আদালত রায়ে বলেন, ভবনটি সৌন্দর্য ও মহিমান্বিত হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো। এই ধ্বংসাত্মক ভবন অচিরেই বিনষ্ট করা না হলে এটি শুধু হাতিরঝিল প্রকল্পই নয়, সমস্ত ঢাকা শহরকে সংক্রমিত করবে। সুতরাং সরকার এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষের ওপর নির্দেশ হলো, ভবনটি ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে হবে। ওই জমি জনকল্যাণে ব্যবহার করতে হবে। হাতিরঝিল প্রকল্প একটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প।সোনারগাঁও হোটেলের পাশে রেলওয়ের জন্য ১৯৬০ সালে সরকারের অধিগ্রহণ করা প্রায় ৬.২১ একর জমিটি ১৯৯৮ সালে কেবলমাত্র একটি স্মারকের মাধ্যমে বিজিএমইএকে দেয় রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো। ১৯৯৮ সালের ২৮শে নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ই অক্টোবর ১৮তলার বিজিএমইএ ভবন উদ্বোধন করেন সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর থেকে বিজিএমইএ তাদের প্রধান কার্যালয় হিসেবে ভবনটি ব্যবহার করছে। শুরু থেকেই রাজউক বলে আসছিল, ভবনের নকশা সঠিকভাবে করা হয়নি। এ ভবনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোও।এফএইচ/একে/এমএস
Advertisement